ছবি: মোহাম্মদ আসাদ
আইফার্মার কী?
আইফার্মার একটি কৃষি ফিনটেক কম্পানি (যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক খাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে)। বাংলাদেশের কৃষি খাতে অর্থায়ন ও সরবরাহ প্রক্রিয়াকে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি ক্ষুদ্র পর্যায়ের কৃষক রয়েছে, যাদের অর্থঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নেই। আমাদের কৃষকরা যে অর্থ সুবিধা পায় তার ৭০ শতাংশ আসে ক্ষুদ্রঋণ বা অদাপ্তরিক উৎস থেকে।
বিজ্ঞাপন
কার্যক্রম
আইফার্মার তিনটি বিভাগে কৃষকদের পরিষেবা দিয়ে থাকে। প্রথমে তারা স্বতন্ত্র বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কৃষকদের সংযুক্ত করে তাদের অর্থ সুবিধা পেতে সাহায্য করে। এই বিনিয়োগকারী আইফার্মার পোর্টফোলিওতে (বিভিন্ন কৃষি খাত) বিনিয়োগ করে এবং এরপর সেই অর্থ কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, আইফার্মার এই কৃষকদের পরামর্শমূলক পরিষেবা দিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিক্ষেত্র সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ, গরুর জন্য আইওটি রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সব খামারের মানসম্পন্ন ইনপুট (খামারসংশ্লিষ্ট উপাদান যেমন—সার, ফিড, কীটনাশক ইত্যাদি) নিশ্চিতকরণ, যা সরাসরি প্রতিটি গরুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পেতে সহায়তা করে। এ ছাড়া আইফার্মার কৃষকদের পণ্য স্থানীয় বাজারে বা প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতাদের চার-পাঁচ স্তরের মধ্যস্থতা ছাড়াই বিক্রি করতে সহায়তা করে থাকে।
আইফার্মার অ্যাপের কাজ ও ফিচার
‘আইফার্মার’ অ্যাপ্লিকেশনটি খামার বিনিয়োগকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। সেটি ব্যবহার করে তারা আইফার্মার বিভিন্ন পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করতে পারে। বিভিন্ন কৃষি খাতকে (যেমন—গরুর খামার, তেলাপিয়া মাছের খামার, টমেটোর ক্ষেত) পোর্টফোলিও হিসেবে ধরা হয়। ফার্ম বিনিয়োগকারীরা পোর্টফোলিওর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বিনিয়োগকৃত পোর্টফোলিওগুলো ট্র্যাক করতে পারেন এবং সরাসরি আপডেট পান। এই অ্যাপ্লিকেশনটিতে তাঁদের সর্বশেষ আপডেট এবং বিভিন্ন সময় আইফার্মারের কাজকর্মের ব্যাপারে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিনিয়োগকারীর লাভ কী?
খামার বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওগুলোতে বিনিয়োগ করার পর তা সরাসরি আইফার্মার নিবন্ধিত কৃষকদের কাছে পাঠানো হয়। বিনিয়োগকারীদের আইফার্মার অ্যাপটিতে বিভিন্ন অফারও থাকে। এতে করে কৃষকরা তাদের পণ্যগুলো, যেমন—গবাদি পশু, শাক-সবজি, মাছ ইত্যাদি কিনে নিতে পারে। প্রতিটি পোর্টফোলিও নিদিষ্ট সময় পর কৃষকরা পণ্যগুলো বিক্রি করার পর বিক্রীত পণ্যের মুনাফা ভাগ করে নেয়। ফলে বিনিয়োগকারীরাও সেই মুনাফার ভাগ পান। বিনিয়োগকারী চাইলে নিজের বিনিয়োগ করা খামার ঘুরে দেখে আসতে পারবেন।
বিনিয়োগ এসেছে সিঙ্গাপুর থেকেও
আইফার্মার সিঙ্গাপুরভিত্তিক এক্সিলিটারিং এশিয়া থেকেও বিনিয়োগ আনতে পেরেছে। তারা এক্সিলিটারিং এশিয়া দ্বারা পরিচালিত একটি এক্সিলারেটর প্রগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল।
১০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত কৃষক
আইফার্মার প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে যুক্ত আছে ১০ হাজারের বেশি নিবন্ধিত কৃষক। তারা আর্থিক, পরামর্শমূলক সহযোগিতা পেয়ে থাকে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পাবনা, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, ফরিদপুর, নীলফামারী, নাটোর, যশোর ও খুলনায় আইফার্মারের খামার রয়েছে।
কৃষকদের জন্য ‘সফল’ অ্যাপ
আইফার্মার কৃষক ও খামার সুবিধার্থীদের (মৎস্য, গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন খামারীদের একত্রে খামার সুবিধার্থী বলা হয়) জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ‘সফল’ নামে আরো একটি অ্যাপ। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একজন মনোনীত লোক নিযুক্ত করা হয়েছে কৃষকদের গাইড করতে। কৃষকরা সহজেই তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে এই অ্যাপে। অ্যাপটির মাধ্যমে তাদের অর্থের পরিমাণ ট্র্যাক করতে পারবে। বড় বড় দুর্যোগ এড়াতে কৃষকরা এই অ্যাপের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং প্রাথমিক সতর্কতা পেয়ে থাকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০২৫ সালের মধ্যে তিন লাখেরও বেশি কৃষকের সঙ্গে থাকার পরিকল্পনা করেছে আইফার্মার। কৃষকদের অর্থ, ইনপুট এবং পরামর্শ দিয়ে সেবা দেওয়ার জন্য খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র খোলা হবে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে অংশীদারি তৈরি করার মাধ্যমে মালিকানাধীন ক্রেডিট স্কোরিং মডেল ব্যবহার করে কৃষকদের জন্য ক্রেডিট, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের জন্য অ্যাগ্রি-ওয়ালেট (কৃষকরা এটি ব্যবহার করে আইফার্মারের কাছ থেকে বীজসহ অন্যান্য সুবিধা নিতে পারবেন) তৈরি করা হবে। আইফার্মার বিজনেস ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার রাইসুল আলম বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে বিজনেস টু কনজ্যুমার (বি টু সি) অনলাইন মুদি সরবরাহ সেবা চালু করা হবে। এসইএ, ইইউ এবং মার্কিন বাজারে রপ্তানি করা হবে নির্বাচিত কৃষিপণ্য। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওসে সম্প্র্রসারিত করা হবে অ্যাগ্রিকালচারাল ক্রেডিট মডেল এবং সাপ্লাই চেইনের মডেল। ’