মডেল : অদৃতী ঐশ্বর্য আলোকচিত্র : মোহাম্মাদ আসাদ
স্মার্টফোন ব্যবহারে হতে পারে নেশা বা অ্যাডিকশন। এমনটাই বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা, তা-ও বেশ অনেক বছর ধরেই। কিন্তু শক্ত প্রমাণের অভাবে বিষয়টি অনেকেই আমলে নেননি। অনেকে বলেছেন, অন্যান্য মাদকের মতো স্মার্টফোন যেহেতু শরীরে প্রবেশ করে না, তাই এটি সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে বিক্রিয়াও করতে পারে না। ফলে আসক্তি সৃষ্টির কোনো আশঙ্কাও নেই, পুরোটাই মানসিক দুর্বলতার চিহ্ন মাত্র।
দৈহিক বা শারীরিক আসক্তি আসলে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ঘটে কি না, তা নিয়ে একটি বড়সড় গবেষণা চালিয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা। পেডিয়াট্রিকস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে ৪৮ জন স্মার্টফোন ব্যবহারীর ওপর গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন। এমআরআই মেশিন ব্যবহার করে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্ক বারবার স্ক্যান করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মাদকাসক্তদের মতো স্মার্টফোন আসক্তদেরও মস্তিষ্কে দেখা দিয়েছে ঠিক একই প্রকার বিকৃতি। মাদক যেভাবে মস্তিষ্কে আনন্দের অনুভূতি নিঃসরণ করে থাকে, ঠিক সেভাবেই কাজ করে স্মার্টফোনের বেশির ভাগ অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। ধীরে ধীরে ব্যবহারকারীরা জালে আটকা পড়ে যেতে থাকে। দ্রুত একের পর এক নতুন তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইক আর মোবাইল গেমে লেভেলের পর লেভেল শেষ করার আশায়, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ ধরনের অভ্যাস গড়ে ওঠে দ্রুত। স্মার্টফোনে সব কিছু কয়েকটি ছোঁয়ায় সম্পাদন করে ফেলার ফলে দেখা যায় ব্যবহারকারীরা কষ্ট করে দৈনন্দিন কাজও করতে চায় না। শুধু তাই নয়, বাস্তবতা ভুলে থাকতে চায় হাতে থাকা ডিভাইসের ক্ষুদ্র স্ক্রিনে। একই প্রকার সমস্যা পিসি বা কনসোল গেমের ক্ষেত্রেও ঘটে; কিন্তু সেসব ডিভাইস ব্যবহার সব সময় সব ক্ষেত্রে সম্ভব না। ফলে গেমিংয়ের নেশা ফোন নেশার চেয়ে কম দেখা যায়।
ফোন ও মাদক দুটি ব্যবহারের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সরাসরি মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশের কিছুটা ধ্বংস হয়ে যায়; তাই স্মার্টফোনে আসক্তদের থেকে প্রায় একই প্রকার আচরণও পাওয়া যায়। ফোন ছাড়া থাকতে না পারা, সব সময় ফোনের দিকেই সব মনোযোগ দেওয়া, দৈনন্দিন কাজকর্মে সময় না দেওয়া এবং কেউ ফোন সরিয়ে নিলে তার ওপর চড়াও হওয়া—সব কিছুই ঘটতে পারে। ফোন কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যা, ফোনের জন্য বাসায় অত্যাচার, এমনকি ফোনের জন্য বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের খুন করার মতো ঘটনাও ঘটেছে এ দেশে।
ফোন বা অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে মস্তিষ্কে আরো কোনো ক্ষতি হয় কি না তা নিয়েও দীর্ঘ গবেষণা প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। এটাও মনে রাখতে হবে, আসক্তি সবার ক্ষেত্রেই ঘটবে তা নয়; দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারই যে আসক্তির লক্ষণ নয়, তা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যদি ওপরে বর্ণিত আচরণ কারো মধ্যে দেখা যায়, তবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে সে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
ইদানীং শিশুদের হাতেও স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন মা-বাবারা। কথা বলতে শেখার আগেই ফোনে গেম খেলা শিখছে তারা, ফোন ছাড়া খেতে চায় না—এটা বলেন অনেকেই। মাদক অন্তত এত সহজে ভিক্টিমদের কাছে পৌঁছতে পারে না।
স্মার্টফোন একটি যন্ত্র মাত্র, বিশেষ কাজের জন্য তৈরি একটি যন্ত্র। জীবনের অংশ নয়, বিশেষ করে কোনো প্রকার সমস্যার সমাধান তো নয়ই। স্ক্রিনে যত কম সময় কাটবে, ততই মঙ্গল—এটাই সব গবেষণাপত্রের শেষ কথা।
মন্তব্য