প্রযুক্তির শিখরে পৌঁছানোর পর মানবসভ্যতায় নেমে আসে বিশাল ধস। ক্ষমতা দখল করে বসে এক প্রচণ্ড লোভী শাসক। একটি বিশাল টাওয়ারের মধ্যেই বেশির ভাগ মানুষ বসবাস শুরু করে। এই গুটিকয়েক বেঁচে যাওয়া মানুষকেও জীবিত রাখার চেষ্টা বাদ দিয়ে শাসকগোষ্ঠী চালিয়ে যাচ্ছে নিপীড়ন। এই কঠিন সময় একজন যোদ্ধা মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে, তাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে গেম ‘ঘোস্টরানার’।
গেমটিকে যদি বলা হয়, ‘মিররস এজ আর সাইবারপাংক’-এর সন্তান, তাহলে বোধ হয় ভুল বলা হবে না। ডিজাইন অ্যাসথেটিক পুরোটাই সাইবারপাংক ঘরানার। আর অ্যাকশন এবং গেমপ্লে মিররস এজের মত—ফার্স্ট পারসন, পারকোরভিত্তিক অ্যাকশন রানার। গেমটি খুব একটা বড় দৈর্ঘ্যের নয়, কাহিনিও খুব গভীর নয়, তাই এটির জনপ্রিয়তা পুরোটাই গেমপ্লের কারণে। গ্রাফিকস অত্যন্ত বাস্তবসম্মত না করে বরং কিছুটা শৈল্পিক করার চেষ্টা করেছে নির্মাতা ‘৫০৫ গেমস’। ফলাফলও চমৎকার, অনেকটা পুরনো আশির দশকের সায়েন্সফিকশন সিনেমা বা অ্যানিমের মতো আবহ এতে পাওয়া যাবে। লাইটিংয়েও আছে সাইবারপাংকের ছোঁয়া, নিয়ন আলো এবং টাংস্টেন বাল্বের হলদেটে আভা গেমটির রেট্রো আবহ বাড়াতে সাহায্য করেছে অনেক বেশি।
মজার বিষয় হচ্ছে, অত্যন্ত হাই বাজেট গেম না হলেও এতে আছে সর্বশেষ এনভিডিয়া গ্রাফিকসে প্রযুক্তিগুলোর চমৎকার ব্যবহার। ডিএলএসএসের মাধ্যমে গেমটি উচ্চ রেজল্যুশনে খেলা যাবে পিসির পারফরম্যান্সের ওপর তেমন চাপ না ফেলেই। আর রে-ট্রেসিং গেমটির লাইটিং, প্রতিফলন এবং আবহকে করেছে আরো বাস্তব। তবে এ ফিচারগুলো এনভিডিয়া আরটিএক্স সিরিজের কার্ড ছাড়া পাওয়া যাবে না। এগুলো ছাড়া গেমটির গ্রাফিকস খারাপ লাগবে তা নয়। তবে থাকলে আরো বেশি মজা পাওয়া যাবে।
গেমপ্লেও কিছুটা পুরনো দিনের মতো। হালের সব গেমই সারাক্ষণ গেমারকে হাতে ধরে সব শিখিয়ে-পড়িয়ে নেয়, শুধু তা-ই নয় গেম ডিজাইন করা হয় এমনভাবে যাতে খেলার সময় কিছু ভুল করলেও এগিয়ে যাওয়া যায় ঠিকই। ঘোস্টরানারে এগুলোর বালা একেবারেই নেই। গেমের প্রতিটি মিশনের মূল কাজ একটিই—এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সময়মতো পৌঁছানো। বিল্ডিংয়ের ছাদে, কার্নিশে, দেয়ালের ওপর দিয়ে এমনকি জানালা দিয়ে ঢুকে আরেক পাশের বারান্দা দিয়ে বেরোতেও হতে পারে সে জন্য। পথিমধ্যে থাকবে অনেক শক্র, যারা অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না মোটেও। গেমারের চরিত্রটি গুলির পর গুলির আঘাত সহ্য করতে পারবে না। ফলে শত্রুদের এরিয়ে যাওয়াই হবে মূল লক্ষ্য। লড়াই করার জন্য গেমার পাবেন একটি ফিউচারিস্টিক সামুরাই তরোয়াল, যার মাধ্যমে নিমিষেই শত্রুদের পরাস্ত করা যাবে। কিন্তু সেটি ব্যবহারের জন্য শত্রুদের কাছে যাওয়াই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
বলা যায় গেমটি এখনকার সব গেমের চেয়ে বেশ আলাদা। অনেক গেমারের কাছে সেটা খুব ভালো লাগবে, আবার অনেকের কাছে মনে হবে একঘেয়ে। বিশেষ করে গেমটিতে কোনো মাল্টিপ্লেয়ার বা কো-অপ না থাকায় একবার খেলার পর আবার খেলার ইচ্ছা না করাই স্বাভাবিক। তবে যারা এই রেট্রো-সাইফাই ঘরানার আবহের গেম পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য ঘোস্টরানার চমকপ্রদ।
খেলতে যা যা লাগবে
অন্তত ৬৪ বিট উইন্ডোজ ৭
ইন্টেল কোর আই৫ ২৫০০কে বা সমমানের এএমডি ফিনোম ২ প্রসেসের
৮ গিগাবাইট র্যাম
জিটিএক্স ১০৫০ বা রেডিওন ৫৫০ জিপিউ
২২ গিগাবাইট জায়গা
বয়স
১৮+
মন্তব্য