<p>জনপ্রিয় ফার্স্ট পারসন শুটিং গেইম ‘কল অব ডিউটি’র নতুন পর্ব ‘ব্ল্যাক অপস৪’-এর অনেক চরিত্র তৈরি করেছেন বাংলাদেশের তানভীর ইসলাম। পাশাপাশি গড অব ওয়ার, মনস্টার হান্টার ওয়ার্ল্ড, শ্যাডো অব ওয়ার, স্নাইপার ফোরসহ আরো কিছু গেইমের চরিত্র তৈরিও তার হাঁতে। এখন কাজ করেন চীনভিত্তিক ‘রেডহট সিজি’ স্টুডিওতে।</p> <p>বিস্তারিত জানাচ্ছেন তুসিন আহমেদ</p> <p>হলিউডের বক্স অফিসে ঝড় তোলা অনেক সিনেমার পেছনেই কাজ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ওয়াহিদ ইবনে রেজা। বিশ্বখ্যাত সনি পিকচার্সে কর্মরত ওয়াহিদের এখনকার ’ঘর’ কানাডার ভ্যাংকুবারে হলেও তাঁর মন যে বাংলাদেশে পরে থাকে তা বোঝা যায় ফেইসবুকে করা তাঁর পোস্টগুলো দেখলেই। দেশের যেকোনো ভালো খবরে উচ্ছ্বাসভরা পোস্ট দিয়ে তিনি যেন ভেসে যান আনন্দে। ১৬ অক্টোবর এমনি এক পোস্ট এলো ওয়াহিদের ওয়ালে। তিনি লিখেছেন, ‘২০১০ সালের দিকের কথা। হ্যারি পটার সিনেমাটার শেষ দুই পর্বের একটি রিলিজ হবে। বক্স অফিসজুড়ে উত্তেজনা। ওয়ান অব দ্য হাইয়েস্ট গ্রোসিং ফিল্ম হওয়ার কথা। ওপেনিং উইকেন্ডে বক্স অফিসের রিপোর্ট এলো ১২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করেছে মুভিটি।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/11 November/03-11-2018/1A_kalerkantho-2018-11-03.jpg" style="float:left; height:284px; margin:12px; width:472px" />দিয়েগো নিকোলি, স্কারলেট রোডস, সামন্ত ম্যাক্সিস, স্ট্যান্টন শো, হাই প্রিস্ট, নিকোলাই বেলিনস্কি—এসব চরিত্রের গ্রাফিকস ও ত্রিমাত্রিক ডিজাইনের কাজ করেছেন তানভীর</p> <p>অথচ এই মুভির মাত্র ১০ দিন আগে মুক্তি পেয়েছে একটি ফার্স্ট পারসন শুটিং গেইম : কল অব ডিউটি-ব্ল্যাক অপস। কল অব ডিউটির এই লেটেস্ট ইনস্টলমেন্টটি মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ব্যবসা করেছে হ্যারি পটারের প্রথম সপ্তাহের আয়ের প্রায় দ্বিগুণ! সব হিসাব-নিকাশ শেষে দেখা গেল, পৃথিবীব্যাপী হ্যারি পটারের আয় ৯৬০ মিলিয়ন ডলার। আর এদিকে ব্ল্যাক অপস মাত্র এক মাসের মধ্যেই আয় করল এক বিলিয়ন ডলার! ভিডিও গেইমের ইন্ডাস্ট্রিটা যে কত বড়, তা বোঝানোর জন্য আমার মনে হয় এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট।</p> <p>হঠাৎ কেন ভিডিও গেইম বা কল অব ডিউটি-ব্ল্যাক অপস নিয়ে কথা বলছি? কারণ এই ব্ল্যাক অপসের চতুর্থ পর্ব বের হয়েছে গত ১২ অক্টোবর। এবং সেখানে কাজ করেছে আমাদের বাংলাদেশি আর্টিস্ট তানভীর এম এন ইসলাম। অসম্ভব জনপ্রিয় এই গেইমিং ফ্র্যাঞ্চাইজের জন্য সিজি ক্যারেক্টার এবং ক্রিয়েচার বানিয়েছেন তিনি। এটাই কিন্তু ব্লকবাস্টার গেইমিং-এ তানভীরের প্রথম কাজ নয়।</p> <p>এ ছাড়া তিনি কাজ করেছেন শ্যাডো অব ওয়ার, গড অব ওয়ার, মনস্টার হান্টার, স্নাইপার ফোরসহ আরো অনেক টাইটেলে, যা এখনো মুক্তি পায়নি। এই প্রতিটি গেইমসে সিজি আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন এই ট্যালেন্টেড বাংলাদেশি।’</p> <p>পোস্টটা আরো দীর্ঘ। তবে এটুকু পড়েই বোঝা গেল—গেইম ইন্ডাস্ট্রির অন্তরালে আছে বাংলার আরেক ‘মেধাবী’। এরপর তানভীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানা।</p> <p> </p> <p>তিনি এখন রেডহট সিজিতে</p> <p>প্রধান চরিত্র শিল্পী হিসেবে তানভীর এখন কাজ করছেন চীনভিত্তিক গ্রাফিকস ও এনিমেশন স্টুডিও ‘রেডহট সিজি’তে। এই স্টুডিও অনেক গেইমেরই ‘আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে কাজ করে। সর্বশেষ ‘কল অব ডিউটি’রও কাজ করেছে তারা। দিয়েগো নিকোলি, স্কালেট রোডস, সামন্ত ম্যাক্সিস, স্ট্যান্টন শো, হাই প্রিস্ট, নিকোলাই বেলিনস্কি ইত্যাদি জনপ্রিয় চরিত্র রয়েছে গেইমটিতে। এসব চরিত্রের গ্রাফিকস ও ত্রিমাত্রিক ডিজাইনের কাজ করেছেন তানভীর।</p> <p> </p> <p>তানভীর যেভাবে গেইমের পেছনে</p> <p>বিনয়ী তানভীর বললেন, ‘গেইম আর এনিমেশনে আগ্রহ ছিল ছেলেবেলা থেকে । বাবার চাকরির সুবাদে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছিলাম সৌদি আরব । তখন বাবার সঙ্গে বসে এনিমেটেড মুভি আর কার্টুন দেখতাম। দেখে দেখে ভাবতাম—এত সুন্দর এনিমেশন দৃশ্যগুলো কিভাবে তৈরি হয়!</p> <p>বাংলাদেশে ফিরে এসেও এনিমেশন দেখা কমেনি। এইচএসসি পরীক্ষার পর টার্মিনেটর সিনেমার ওপর তৈরি একটি ভিডিও দেখেছিলাম। ছোটবেলার সেসব প্রশ্নের কিছু উত্তর খুঁজে পাই এই ডকুমেন্টারিতে। বলা যায়, সেদিন থেকেই গ্রাফিকস ও এনিমেশন নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত আমার।’</p> <p>জানান, এসএসসি পাসের পর প্রথম কম্পিউটারটি কিনেছিলেন কিস্তিতে। সেই কম্পিউটারে থ্রিডি ম্যাক্স ইনস্টল করে এনিমেশন শেখার হাতেখড়ি। ইন্টারনেট তখন সহজলভ্য ছিল না। এখনকার মতো পাওয়া যেত না ভিডিও টিউটরিয়াল। থ্রিডি ম্যাক্সের ম্যানুয়্যাল বা নিদের্শিকাই ছিল ভরসা। সেগুলো পড়েই শেখা শুরু। তানভীর বলেন, ‘আমার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। তাই দীর্ঘ নির্দেশিকা পড়তেও বিরক্ত লাগেনি কখনো। নতুন কিছু শেখার পর খুব ভালো লাগা কাজ করত।’</p> <p> </p> <p>শিখতে গিয়েই প্রথম আয়</p> <p>একদিন পত্রিকায় এনিমেশন কোর্সে প্রশিক্ষণের বিজ্ঞাপন দেখে খোঁজ নিতে যান তানভীর। তাঁর কাজ দেখে শেখানোর বদলে প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি তাঁকে একটি থ্রিডি টাইটেল এনিমেশন তৈরির কাজ দেয়। সফলভাবে করতে পারায় পারিশ্রমিকও পান তিনি। পরবর্তী সময় মাইক্রোসেল মাল্টিমিডিয়া নামে এক প্রতিষ্ঠানে থ্রিডিম্যাক্সের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে ২০১২ সালে সিনিয়র এনিমেটর হিসেবে যোগ দেন টিভি চ্যানেল ২৪-এ।</p> <p> </p> <p>এরপর নিজ উদ্যোগ</p> <p>২০১৩ ‘ইনকিউবেটর ইফেক্টস’ নামে প্রতিষ্ঠান চালু করেন তানভীর। ভিএফএক্স, এনিমেশন, টেক্সচারিং, মোশনগ্রাফিকসসহ নানা ধরনের কাজ করতেন সেখানে। ইংরেজ গায়িকা রেবেকা ফার্গুসনের মিউজিক ভিডিওর ভিএফএক্সের কাজ এই প্রতিষ্ঠান থেকে করা।</p> <p>https://www.youtube.com/ watch?v=pUUU5LSbYHA লিংকে গিয়ে ভিডিওটি দেখা যাবে।</p> <p> </p> <p> </p> <p>এখন তিনি চীনে</p> <p>নিজের তৈরি গ্রাফিকস ও এনিমেশনগুলো অনলাইনে শোকেস করতেন তানভীর। তাঁর কাজ দেখে নিয়মিত বিরতিতে চাকরির জন্য ডাক আসে অনেক দেশ থেকে।  সাংহাইয়ের রেডহট সিজি স্টুডিও  থেকেও ডাক পান। সাংহাই শহরটার প্রতি তানভীরের আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। এ কারণেই ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটিতে।</p> <p>তানভীর জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনে কাজ করায় পরিবেশগত পার্থক্য রয়েছে বেশ। যেমন—রেডহট স্টুডিওয়ের নিরাপত্তা অনেক বেশি। কোনো কর্মীর অফিসে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই। ডেস্কের ছবি পর্যন্ত তোলা নিষেধ। অফিসের কাজে ব্যক্তিগত কম্পিউটারও ব্যবহার করা যায় না।  অফিসের কাজ অফিসেই করতে হয়। অনেক সময় নতুন প্রজেক্টের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি কম্পিউটার দেওয়া হয়। কাজ শেষে সেই কম্পিউটার সরিয়ে নতুন আরেকটি দেওয়া হয়। কোনো প্রজেক্টে প্রয়োজন না হলে ইন্টারনেট সংযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয় না।</p> <p> </p> <p>কল অব ডিউটি</p> <p>বিশ্বজুড়ে গেইম বাজারের জনপ্রিয় গেইমগুলোর একটি ‘কল অব ডিউটি’। প্লেস্টেশন, এক্সবক্সে বিক্রির তালিকায় প্রথম দিকেই থেকেছে এর সব কয়টি পর্ব। ২০১০ সালে বাজারে আসা কল অব ডিউটি গেইমের প্রথম সংস্করণটি এক মাসে আয় করেছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।</p> <p>স্ট্র্যাটেজিক গেইমটির কাহিনিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধের পাশাপাশি স্নায়ুযুদ্ধও প্রাধান্য পেয়েছে।</p>