এ পদ্ধতিতে ফাইবার অপটিক কেবল ব্যবহার করে সেট টপ বক্স (এসআইবি) স্থাপন করতে হয়।
সবার আগে বেঙ্গল ডিজিটাল
দেশের মানুষকে ঝকঝকে ছবি দেখানোর লক্ষ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান সেট টপ বক্স পরিষেবায় নামার ঘোষণা দিলেও সবার আগে চালু করে দিয়েছে বেঙ্গল কমিউনিকেশন। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, বেঙ্গল ডিজিটালের সেবায় বাড়িতে ডিটিএইচের মতো ছোট ডিশ অ্যান্টেনা বসাতে হবে না। আবার অ্যানালগ কেবল টিভি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়ও বিঘ্ন ঘটবে না। অ্যানালগ সেবাদানকারীরা তাদের কেবল সংযোগ নেবে। এরপর তারাই কেবল দিয়ে দর্শকদের বাড়িতে সংযোগ দেবে। এই কেবল যুক্ত হবে সেট টপ বক্সে। আর সেট টপ বক্সের মাধ্যমে টিভি অনুষ্ঠান দেখা যাবে। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা রাস্তার খননকাজে কেবল কাটা পড়লে বিকল্প ব্যবস্থায় সংযোগ চালু থাকবে। ছবি দেখাসহ যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে বেঙ্গল ডিজিটালের কল সেন্টারে অভিযোগ করা হলে দ্রুততম সময়ে সমাধান পাওয়া যাবে।
বেঙ্গল ডিজিটালের আরো সুবিধা
► ধরন অনুযায়ী চ্যানেল গ্রুপ তৈরি (সিনেমা, খেলা, সংবাদ, শিশুতোষ, ধর্মীয় ইত্যাদি)।
► গ্রাহক বিল দেখার সুবিধা ও ইন্টারনেটে চ্যানেল প্যাকেজ পরিবর্তন করার সুবিধা থাকছে।
► প্রিয় চ্যানেল, প্যাটার্ন লক, সময় ও তারিখ দেখার স্থান, অনুষ্ঠান মনে করিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাবে।
► একাধিক ভাষার ব্যবহার।
► ইলেকট্রনিক অনুষ্ঠানসূচি।
► গেইম খেলা ইত্যাদি।
যা আছে সেট টপ বক্সে
কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে দর্শকরা তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান সেট টপ বক্সে পেন ড্রাইভ বা পোর্টেবল হার্ডডিস্কে রেকর্ড করতে পারবে। পরে অবসর সময়ে দেখা যাবে। তা ছাড়া একই সময়ে একটি টিভি সেটে মাল্টি চ্যানেল দেখতে পারবে দর্শকরা। হাই ডেফিনিশন (এইচডি) চ্যানেল, ভিডিও অন ডিমান্ডসহ নানা সুবিধাও পাওয়া যাবে এই সেট টপ বক্সের মাধ্যমে। চীনের তৈরি একটি সেট টপ বক্সের ওজন প্রায় দেড় কেজি। স্মার্ট কার্ড ও রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে এটি পরিচালিত হবে।
কারিগরি অবকাঠামো
বেঙ্গল ডিজিটালের কারিগরি অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহূত হয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্সভিত্তিক থমাস ভিডিও নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ডিজিটাল টিভি হেডেন্ড। কন্ডিশনাল একসেস সিস্টেমের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক নাগ্রাভিশনের CAS।
অটোমেটেড বিলিং, গ্রাহকসেবা, সার্ভিস প্যাকেজিং ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আছে সাবস্ক্রাইবার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (SMS)।
এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছে জেনারেটর ও অনলাইন ইউপিএস, কল সেন্টার, সার্ভিস মনিটরিং প্যানেল, Redundant System সুবিধাসংবলিত একটি পূর্ণাঙ্গ সেবা অবকাঠামো। একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ওটিটি, আইপি ফোন, আইপিটিভি ইত্যাদি সেবা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে বেঙ্গল ডিজিটালের।
খরচ কেমন?
মুহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, সেট টপ বক্স ও সংযোগ খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন ফিচার ও স্পেসিফিকেশনের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে এর দাম কমবেশি হতে পারে। দর্শক চাহিদা, বয়স, রুচি ও ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করে একাধিক চ্যানেলের বিভিন্ন প্যাকেজ রাখা হয়েছে। ৩০০ টাকার প্যাকেজে ৯০টি চ্যানেল দেখা যাবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সব চ্যানেলসহ ৭০টি ফ্রি চ্যানেল রয়েছে। এ ছাড়া ২০টি পে চ্যানেল থাকবে। অন্যদিকে ৬০০ টাকার প্যাকেজে বর্তমানে ১৫১টি চ্যানেল দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি চ্যানেলসহ ৭৬টি ফ্রি চ্যানেল ও ৭৫টি পে চ্যানেল রয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এই প্যাকেজে ২৫০টি বিদেশি চ্যানেল দেখা যাবে বলে জানান তিনি।
ওমর ফারুক আরো জানান, একটি সেট টপ বক্স দিয়ে একটি টিভিতে অনুষ্ঠান দেখা যাবে। তবে বাসায় দুটি টিভি সেট থাকলে পুরনো অ্যানালগ লাইন থেকে ওই টিভিতে সংযোগ দেওয়া যাবে। এতে ৯০টির মতো চ্যানেল দেখা যাবে। সে ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বাড়বে। ৩০০ টাকার প্যাকেজসহ মোট খরচ হবে সাড়ে ৪৫০ টাকা। আর ৬০০ টাকার প্যাকেজে সব মিলিয়ে পড়বে ৭০০ টাকার মতো।
অবদান রাখছে রাজস্ব বৃদ্ধিতে
‘বেঙ্গল ডিজিটাল’ গ্রাহক বিনোদনের পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতেও প্রত্যক্ষ অবদান রাখছে। বর্তমান অ্যানালগ কেবল টিভি ব্যবস্থায় প্রকৃত গ্রাহকসংখ্যা ও এ ব্যবসা থেকে আয়ের সঠিক পরিমাণ জানা যায় না। তাই ভ্যাট ও আয়কর খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। ডিজিটাল কেবল টিভিতে এ সমস্যা নেই। তাই রাজস্ব আদায় সহজ হবে। পাশাপাশি এর সাবস্ক্রাইবার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (এসএমএস) গ্রাহকের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে বলে গ্রাহকের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
চলছে মহাসমারোহে
বর্তমানে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এই ডিজিটাল কেবল টিভির সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পুরো উত্তরা এলাকা, নিকুঞ্জ, বারিধারা ডিওএইচএস, নৌ সদর দপ্তর এলাকা, গুলশান, বনানী, মিরপুরের কিছু অংশ, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমণ্ডি, আজিমপুর, বুয়েট ও কলাবাগান। এ বছরের মাঝামাঝি পুরো ঢাকাতেই এই ডিজিটাল কেবল সেবা পাওয়া যাবে। বছরের শেষের দিকে বন্দরনগর চট্টগ্রামে এ সেবা চলে আসতে পারে।
যেভাবে পাওয়া যাবে
স্থানীয় সার্ভিস অপারেটরদের কাছ থেকে বেঙ্গল ডিজিটাল সার্ভিস পাওয়া যাবে। সংযোগ নেওয়া যাবে বেঙ্গল ডিজিটালের কল সেন্টারে কথা বলেও। তবে এ জন্য বেঙ্গল ডিজিটাল থেকে সরবরাহ করা একটি ফরমে আগ্রহী গ্রাহকদের আবেদন করতে হবে।
যোগাযোগ ও অভিযোগ
বেঙ্গল ডিজিটালের কল সেন্টার সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। ১৬৪৫৯, ০৯৬৬৬৭ ও ১৬৪৫৯ নম্বরে ফোন করে অভিযোগসহ বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে। স্থানীয় কেবল অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সমাধান পাওয়া যাবে।