<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি সোজাসাপ্টা কথা দিয়েই শুরু করি। জনগণের একটি রাষ্ট্র হচ্ছে প্রকৃত অর্থেই একটি ফলদ বৃক্ষের মতো। সেই বৃক্ষ যত শক্তিশালী হবে, জনগণও তা থেকে তত বেশি উপকৃত হতে থাকবে। কিন্তু সেই রাষ্ট্র নামক বৃক্ষটি যদি কোনো শাসকগোষ্ঠী কিংবা এক শ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, তাহলে এক পর্যায়ে গিয়ে তা একটি অচল কিংবা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বা ন্যায়পরায়ণতা বলতে কিছুই থাকবে না। চারদিকে লুটপাট ও অপশাসনের কারণে তার অর্থনীতি কিংবা বিচার বিভাগ ভেঙে পড়বে। তেমন একটি পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের সংগ্রামী ছাত্রসমাজের মতো একটি জাগ্রত অংশ স্বেচ্ছাচারী শাসক শ্রেণি এবং তার তল্পিবাহকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সেটিই ১৯৪৭ সাল থেকে একাত্তর কিংবা একাত্তর থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে একটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গেমচেঞ্জার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাইলফলক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সেই দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা আজ নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বৃহত্তর অর্থে আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন। কিন্তু এখানেও দেখা যাচ্ছে কিছু কায়েমি স্বার্থবাজ কিংবা স্বার্থান্বেষী মহলের বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি কিংবা চক্রান্ত। কোনো রাজনীতিক কিংবা দার্শনিক নন, এ ক্ষেত্রে আমাদের মহান স্রষ্টা নিজেই বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে দেশ বা রাজ্যেই তোমাদের বাসস্থান হোক না কেন, সেখানেই মানুষের সংশোধন প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। সেখানকার ভ্রান্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা বদলে সঠিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নতুবা সমাজ কিংবা বৃহত্তর অর্থে রাষ্ট্রে যথেচ্ছাচার কিংবা নৈরাজ্য দেখা দেবেই। বিভ্রান্ত মানুষ একটি সার্বিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হতে থাকবে। তাতে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের ভিত্তি কিংবা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গঠনশীল আলাপ-আলোচনা কিংবা মতবিনিময়ের মাধ্যমেই সব সমস্যার অবসান ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রকে বিপর্যন্ত রেখে ক্ষমতা লাভের কোনো কূটকৌশল কিংবা রাজনৈতিকভাবে আধিপত্য বিস্তারের কোনো প্রক্রিয়াই সফল হতে পারে না। তাতে বাংলাদেশ নামক সম্ভাবনাময় এই রাষ্ট্রটি সহজেই অন্যের একটি করদরাজ্যে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে, যা থেকে বের হয়ে আসার বিশেষ পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/15-09-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="304" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/15-09-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, জনগণের বিভিন্ন অংশ এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে গত বুধবার জাতির উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষমতা গ্রহণের এক মাস পর প্রদত্ত সেই ভাষণে তিনি আমাদের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রশ্নে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। সংস্কারের প্রথম পর্যায়ে তিনি ছয়টি কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিশন, পুলিশ প্রশাসন বিষয়ক কমিশন, দুর্নীতি দমন বিষয়ক কমিশন এবং সর্বোপরি সংবিধান সংস্কার বিষয়ক কমিশন। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে এতগুলো বিশাল বিশাল বিষয়ে সংস্কারকাজের ধারেকাছেও কেউ যায়নি আগে। কোনো নির্দিষ্ট দলীয় সরকার তা করার দুঃসাহস দেখালেও অন্যদের কাছে সেগুলো সূচনাতেই বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দিতে পারত। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে সর্বদলীয়ভাবে কোনো কিছু করার ইতিহাস বা নজিরও আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নেই। সুতরাং সে হিসেবে দল-মত-নির্বিশেষে সবার মতামত নিয়ে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারগুলো সম্পাদন বা সুসম্পন্ন করতে পারলে সেগুলো হবে এক ঐতিহাসিক সাফল্য, যা আমাদের দেশে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হবে এক অভাবনীয় মাইলফলক। তবে এ ক্ষেত্রে, অর্থাৎ রাষ্ট্র মেরামত কিংবা সংস্কারের ক্ষেত্রে বিএনপির ৩১ দফা প্রস্তাব নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ বিএনপি প্রদত্ত সংস্কার প্রস্তাব বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ, যা কোনো রাজনৈতিক দলই এর আগে করেনি। বিএনপি নেতা তারেক রহমান তাঁর সংস্কার প্রস্তাবে (আওয়ামী লীগের শাসনামলে) আমাদের সংবিধান, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, দুর্নীতি দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠনের একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারেক রহমান দেশ থেকে অর্থপাচার ও দুর্নীতির ওপরও একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে মানবাধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যেও তাঁর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে আমাদের ব্যাংকিংব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতি সংস্কারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের বৃহত্তর লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বহু আগেই তারেক রহমান বিভিন্ন কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনেক কটূক্তি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছিলেন। কিন্তু আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফার হয়তো বিশেষ পার্থক্য থাকবে না। তবে প্রশ্ন একটিই, কবে এবং কিভাবে বাংলাদেশে সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবের মুখ দেখবে? কবে আমাদের জনজীবন সেসব সংস্কার কিংবা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের আলোকে উদ্ভাসিত হবে? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে বিএনপি বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গণসংগঠন বা রাজনৈতিক দল। বিগত কয়েক বছরে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ভেতরে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে প্রধান উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো একটি রাজনৈতিক দল বা গণসংগঠন হিসেবে বিএনপির দায়িত্বশীলতা অর্জনের মনস্তাত্ত্বিক দিকটি। একটি দেশপ্রেমিক দল হিসেবে বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে বিএনপির নিজ স্বার্থ ত্যাগ করার বিষয়টি। দেশব্যাপী জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে একটি জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে আগ্রহী। এ কথা জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ কথা অনস্বীকার্য যে ভবিষ্যতে যখনই দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। এ পূর্বাভাস দিয়েছে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম। তার পরও বিএনপি নেতার একটি জাতীয় সরকার গঠনের সদিচ্ছা অবশ্যই একটি মহৎ উদ্যোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় পেশাজীবী মানুষকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও দেশ গঠনে তাঁদের যথাযথ অবদানের জন্য ভবিষ্যতে একটি দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করতেও আগ্রহী। এ বিষয়টি নিয়ে দেশের জনগণের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরকে বিএনপি দেশব্যাপী গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের কর্মসূচি দিয়েছে এবং তার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর দেশে গুম-খুনের বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত বহু সামঞ্জস্য রয়েছে, দৃশ্যত কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কিংবা বিরোধ নেই। কিন্তু তার মধ্যেও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল জলঘোলা করার প্রয়াস পাচ্ছে। দেশের কিছু কিছু অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট রাজনৈতিক অঙ্গন বা মহল থেকে বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ ধরনের অপপ্রয়াস নতুন নয়। যারা এককভাবে হয়তো কোনো দিনই ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তারাও রাজনৈতিক অঙ্গনে অনৈক্য সৃষ্টি করে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াতে চায়। এ ক্ষেত্রে একটি কথাই মনে রাখতে হবে, তারা কোনো অর্থেই সাধারণ জনগণের বন্ধু হতে পারে না। সুতরাং সাধারণ মানুষকেই ঐক্যবদ্ধভাবে সেসব অপশক্তির মোকাবেলা করতে হবে। একটি বৃহত্তর ঐক্য ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে দেশপ্রেমিক শক্তির সম্মিলিত কার্যক্রমকে শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার কোনো ফ্রন্ট বা জোট গঠন করা রাজনীতিগতভাবে অপ্রাসঙ্গিক নয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে, সেগুলো যেন কোনোমতেই সাংঘর্ষিক না হয়। জাতীয় ঐকমত্যকে যেন বিঘ্নিত না করে। আমাদের মূল লক্ষ্য অর্জনকে যেন বাধাগ্রস্ত না করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ কোনো সময়েই একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা উপভোগ করেনি। দেশ শাসনের নামে কিংবা নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী জনগণের অধিকার হরণ করেছে। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করেছে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে। এভাবেই দেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক কিংবা মানবাধিকারটুকুও হারিয়েছে। আইনের শাসন তাদের দোরগোড়ায় সেভাবে পৌঁছেনি কোনো দিন। রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, দখলদারি ও লুটপাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিগত ১৫ বছরের একদলীয় স্বেচ্ছাচার, নৈরাজ্য ও শোষণ-বঞ্চনার কথা সহজে ভুলে যাওয়ার মতো নয়। তার পরও যারা সেই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও নৈরাজ্যের কথা ভুলে গিয়ে আবার অবলীলাক্রমে সেই অন্ধকার জগতে ফিরে যেতে চায়, তারা গণতন্ত্রমনা সভ্য মানুষ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। তাদের কাছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা আইনের শাসন অর্থহীন। তাদের বিবেচনায় সর্বাত্মকভাবে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিশন গঠন কিংবা জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রক্রিয়া নিরর্থক। তারা অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে সমাজবিরোধী, দেশবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো গণবিরোধী সরকার কিংবা তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনকে প্রতিরোধ করা যেমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একটি বিশেষ লক্ষ্য ছিল, তেমনি সমাজের বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্ত, বিবেকহীন ও পদলেহনকারী অপশক্তিকে রোধ করাও সবার একটি নৈতিক দায়িত্ব। এদের কোনো নীতি কিংবা আদর্শ নেই। এরা অর্থের জন্য এবং বিত্ত-বৈভবের জন্য বিনা দ্বিধায় দেশকে বিক্রি করে দিতে পারে। এদের কেন্দ্র করেই ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠে দুর্বৃত্তায়ন, অন্যায়, অবিচার ও মানুষের অধিকার হরণ এবং শোষণ-বঞ্চনা। সে কারণেই বিগত ১৫ বছরে সৃষ্ট জঞ্জালকে সরিয়ে একটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন বাংলাদেশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গড়ার লক্ষ্যে একটি গণতান্ত্রিক রূপরেখা তৈরি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি, জামায়াত কিংবা অন্য দলগুলোর কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। বিভিন্ন দলীয় স্বার্থের প্রশ্নে বিরোধ যা কিছুই আছে তা হচ্ছে আন্তর্দলীয় স্বার্থের কোন্দল, যার যার কৌশলগত অবস্থানের প্রশ্নে মতবিরোধ। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সেই বিরোধ কাটিয়ে উঠে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্য করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবেই মদদ দিতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিগত বছরগুলোতে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। আর তা হচ্ছে, সাবেক শাসকদল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য প্রায় সব দল এক এবং অভিন্ন মত পোষণ করেছে। কিন্তু তার পরও তারা একটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন বাংলাদেশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গড়ার প্রশ্নে তাদের সামান্য স্বার্থ কিংবা মতবিরোধগুলো কাটিয়ে উঠতে পারছে না। সে কারণেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার-পরবর্তী একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। নির্বাচিত সব দলকে সেখানে তাদের শক্তি অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এবং দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রদত্ত রূপরেখা অনুযায়ী ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে। তাই প্রথমেই এখানে একটি সঠিক রূপরেখা প্রণয়নে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঐক্যবদ্ধভাবে সাহায্য কিংবা সহযোগিতা করতে হবে, তাতে সময় যেটুকুই লাগে। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">gaziulhkhan@gmail.com</span></span></span></span></p>