<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কয়েক দিন আগে কুয়েট ও রুয়েটের দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে। ময়মনসিংহ শহরের বিদ্যাময়ী স্কুলের এক শিক্ষার্থী বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হনন করে। লেখক, সাংবাদিক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের ৪২ বছরের মেয়ে নিজেকে হননের পথ বেছে নেন। সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো। এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা খুললেই আমাদের চোখে পড়ে। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেকে নিজেই হরণের পথ বেছে নিচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া টিনএজ থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে। তবে শিক্ষার্থী ও গৃহবধূদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা অনেক বেশি। একেক শ্রেণির আত্মহত্যার কারণও একেক রকম। সমাজে বসবাসরত অনেক মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা রয়েছে। তা না হলে নিজেকে হননের মতো কাজ কেনই বা বেছে নেবে। কারোর মানসিক সমস্যা প্রকাশ পায় এবং আমরা বুঝতে পারি। আবার কারোরটা প্রকাশ পায় না, তবে একান্ত কাছের মানুষ বুঝতে পারে। যারা নিজেকে গুটিয়ে রাখে এবং যাদের মেলামেশার পরিধি ছোট, তাদের বেলায় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে তা জানা ও বোঝা সহজ নয়। দীর্ঘদিনের মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা, কোনো মানসিক রোগ, বঞ্চনা, অবসাদ ও হতাশা থেকে মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয়, যা একটি পর্যায়ে চরম আকার ধারণ করে এবং নিজেকে হননের পথ বেছে নেয়। আবার অনেকের বেলায় তাৎক্ষণিক রাগ ও অভিমান থেকেও আত্মহত্যা করার প্রবণতা কাজ করে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে আগে থেকে কোনো মানসিক বিচ্যুতি ও সামাজিকীকরণের সমস্যা থেকে থাকে, যা হয়তো পরিবারের কারো দৃষ্টিগোচর হয়নি কিংবা চোখে পড়েনি। সুপ্ত থাকুক আর প্রকাশ ঘটুক না কেন, কোনো না কোনো মানসিক অস্থিরতা কিংবা পারিবারিক ও সামাজিক অসংগতি ছাড়া এবং একেবারে কারণ ছাড়া আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান সময়ে আমাদের মধ্যে চাহিদা, প্রয়োজন, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশাসহ বহুবিধ বিষয় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। ভেঙে বললে এগুলো নতুন হচ্ছে এবং পূরণে শক্ত অবস্থান কাজ করছে। কারো কারো ক্ষেত্রে পূরণের সামর্থ্যকে কোনোভাবেই মূল্যায়ন করা হয় না। পরিবর্তিত চাহিদা পূরণ করা এবং পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা সবার সমান থাকে না। এমন প্রয়োজন রয়েছে, যা কোনো কোনো পরিবারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয় না। পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি এখানে জড়িত। আবার সন্তানের এমন অনেক প্রয়োজন ও চাহিদা থাকে, যা পূরণ করা সম্ভব, কিন্তু সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের দিক থেকে সম্ভব না-ও হতে পারে। তখন একটু সমস্যাই হয়। প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে দ্রুততার বিষয়টিও কাজ করে। জিনিসটি আমার এখনই চাই। পারিবারিক সম্পর্ক, লেখাপড়া ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আমাদের সবার, বিশেষ করে সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ও চাহিদার পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রত্যাশার পরিমাণও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আমরা অনেক সময় প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবহারসহ অন্যান্য বিষয় অন্যের কাছ থেকে সঠিকভাবে পাই না। কিন্তু অন্যের ওপর আমার যে নিয়ন্ত্রণ নেই, তা আমরা ভুলে যাই। ইচ্ছা করেই আমরা জোর করে অন্যের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আদায় করতে পারি না। অন্যরা আমার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করলে কিংবা খারাপ বললে আমার কী-ই বা করার আছে। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী না পাওয়ার বেদনা ও হতাশা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়, যা মানসিক চাপে রূপান্তরিত হয়। এমন মনোসামাজিক প্রেক্ষাপট অনেকের পক্ষে সহ্য করতে না পারার ব্যর্থতা আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? মানসিক স্বাস্থ্যকে আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ওপর নজর দিতে হবে, বিশেষ করে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। জীবনে চলার পথে যে কারো সংকট ও সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর্থিক, মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক যে ধরনেরই সংকট তৈরি  হোক না কেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা সমীচীন। পরিবার একটি সন্তানের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে অনেক কিছু শেখার আছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিজের মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিজেকে বেশি যত্ন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি, যাকে ইংরেজিতে সেলফ কেয়ার বলা হয়। এর অর্থ এই নয় যে আপনি অন্যকে নিয়ে ভাববেন না। দিনের একটি সময়ে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করুন, ভাবুন ও আত্মমূল্যায়ন করুন। নিজের মতো করে ভালো থাকার চেষ্টা করুন। দেখবেন, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং আপনি মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">neazahmed_2002@yahoo.com</span></span></span></span></p>