<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার বেলগ্রেডের ভেতর ঢুকে রাশিয়ায় হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বল্প সময়ের এই হামলায় একটি ট্যাংক এবং কয়েকটি সাঁজোয়া যান অংশ নিয়েছে। এতে রাশিয়ায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বেশ কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। রাশিয়া দাবি করেছে, হামলাকারীদের ৬৩ জন রাশিয়ার পাল্টা প্রতিরোধে নিহত হয়েছে, তবে এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ তারা হাজির করতে পারেনি। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই হামলা ঘটানোর কথা অস্বীকার করে বলা হয়েছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনপন্থী এবং পুতিন ও যুদ্ধবিরোধী একাংশ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর এক প্রতিক্রিয়ায় এ ধরনের হামলায় ইউক্রেন জড়িত নয় বলে জানিয়ে এ রকম কিছু ঘটে থাকলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে রাশিয়া অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছে, এই হামলায় পরিত্যক্ত এবং ধ্বংস হওয়া কিছু গোলাবারুদ দেখে তারা নিশ্চিত যে এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এবং এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদ আছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখানে যুক্তির খাতিরে এমন একটি বিষয় আসতে পারে যে রাশিয়া প্রায় দেড় বছর ধরে ইউক্রেনে একতরফাভাবে হামলা করে আসছে, সেই বিবেচনায় রাশিয়ার মাটিতে যদি ইউক্রেন পাল্টা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ ধরনের হামলা পরিচালনা করে, তাহলে সেই অধিকার তাদের থাকতেই পারে। এখানে আন্তর্জাতিক আইন এবং রীতি-নীতির বাইরেও আত্মরক্ষার প্রয়োজনে এই হামলাকে যুক্তিযুক্ত হিসেবে দেখানোর অনেক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তাহলে সংগত কারণেই প্রশ্ন এসে যায়, কেন ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এই হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন পর্যন্ত এই হামলা এবং এটি নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ চলছে। এই হামলা যে ইউক্রেন পরিচালনা করেনি অথবা তারা প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে জড়িত নয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য বা মৌন সমর্থন নেই, এ ধরনের বিষয়ও কিন্তু এখনো খোলাসা বা প্রমাণিত হয়নি। যে জায়গাটায় ভয় তা হচ্ছে, এ ধরনের বিষয় যদি আন্তর্জাতিকভাবে চাউর হয়, তাহলে রাশিয়া আরো আগ্রাসী হয়ে উঠবে, যদিও এই মুহূর্তে তারা যথেষ্ট আগ্রাসী অবস্থানেই রয়েছে। এখানে আগ্রাসী বলতে যা বোঝানো হচ্ছে তা হলো দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি রাশিয়ার তরফ থেকে দেওয়া হচ্ছিল, তার বাস্তব প্রয়োগ ঘটার আশঙ্কা দেখা দেবে। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ দিমিত্রি মেদভেদেভ তো যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই নানাভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা এবং প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন। রাশিয়ার ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক সময়ের হামলার পরও তিনি এটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটিই অবশ্য প্রথম নয়, এর আগেও গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই মাসের মধ্যে এই বেলগ্রেডেরই জ্বালানি ডিপোতে ইউক্রেনের দুটি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয় বলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। সেবার ইউক্রেন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। সে সময় অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত ছিল। এবারের হামলাটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি গত বছরের হামলার চেয়েও অনেক সুসংগঠিত ছিল। বারবার বেলগ্রেডে হামলার মূল কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে, এখানে এই অঞ্চলে রুশ নাগরিকদের পাশাপাশি অনেক ইউক্রেনপন্থী লোকের বসবাস। যারা রুশ, তাদের একটা ব্যাপক অংশের মধ্যে পুতিনবিরোধী মনোভাব রয়েছে। সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সেখানে রাশিয়ার প্রচুর পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে। অবশ্য গত বছরের হামলার পর থেকেই রাশিয়া আবারও হামলার ভয়ে সেখান থেকে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে শুরু করে। অবশ্য এখানে আরেকটি হামলার বিষয় উল্লেখ করতে হয়, গত ৩ মে ক্রেমলিনে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে এমনটি হয়েছে বলে দাবি করে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এই দাবিকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার তরফ থেকে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর এই যুদ্ধ নিয়ে প্রথম দিকের বিশ্লেষণকে ভুল প্রমাণ করে আজ প্রায় ১৬ মাস ধরে এটি চলমান রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এবং আরো কত দিন পর্যন্ত এটি এমন থাকবে, বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের ওপর। এরই মধ্যে এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ জোগানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে চার হাজার ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। সেই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোও প্রতিনিয়ত উন্নত অস্ত্রের জোগান দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এই বিনিয়োগ যেন যুদ্ধজয়ের মধ্য দিয়ে রাশিয়া ঘরে তুলতে না পারে সে বিষয়ে তারা সোচ্চার। সম্প্রতি এই যুদ্ধ এবং এর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের প্রধান মার্ক মিলি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই যুদ্ধ কত দিন চলবে তা ঠিক নেই এবং এতে রাশিয়ার জয়লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে এ মাসে আমরা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে দেখেছি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশ সফর করতে। আরব লীগের সম্মেলন থেকে শুরু করে ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর করে তিনি জাপানের হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর এই সফরে পশ্চিমা দেশ এবং ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ একাধিক মিত্রের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎ ঘটেছে, যার মধ্য দিয়ে অনুমান করা যেতে পারে যে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পেয়েছেন, যা ইউক্রেনের যোদ্ধাদের চাঙ্গা করে থাকতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখানে সম্প্রতি জেলেনস্কির আরেকটি বক্তব্য উল্লেখ করতে হয়, এ মাসের শুরুতে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে ন্যাটো এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ, ইউক্রেন এখনই ন্যাটোতে যোগ দিতে চাচ্ছে না। এর পেছনে কোনো কৌশলগত কারণ থাকতে পারে। ইউক্রেন নিশ্চয়ই চাইবে না ন্যাটোতে যোগ দিয়ে রাশিয়ার জন্য পারমাণবিক হামলার ক্ষেত্র তৈরি করতে, বরং তারা কিভাবে কৌশলে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারে সেটাই মূল ভাবনায় রেখেছে। এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এটাও ভাবা যেতে পারে যে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং পুতিনবিরোধী একটি বড় অংশকে তারা ধীরে ধীরে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে তারা যে অনেকটাই সফল হয়েছে, এর প্রমাণ পাওয়া যায় এর আগে রাশিয়ার ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাপর হামলার চেয়ে সর্বশেষ হামলাটি ছিল অনেকটাই শক্তিশালী। তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি, ইউক্রেনের তরফ থেকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে এ ধরনের আরো হামলা সংঘটিত হতে পারে, কিংবা রাশিয়ার অভ্যন্তর থেকে পুতিনবিরোধী একটি বড় শক্তি বের হয়ে আসবে। সেই ঘরের শত্রুই কি রাশিয়ার জন্য বিভীষণ হয়ে উঠবে? কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। তবে এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার যে যুদ্ধটা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা বেশ কিছু পর্যবেক্ষেক ইউক্রেনের তরফ থেকে রাশিয়ায় পাল্টা হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন এবং এ ক্ষেত্রে জেলেনস্কির একটি উক্তিকে স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। জেলেনস্কি পাল্টা হামলার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে বলেছেন, এর জন্য সময় দরকার, কারণ আরো অস্ত্র ও রসদ সংগ্রহ করতে হবে। সেই সঙ্গে বসন্তকালে এ ধরনের হামলা অধিক উপযোগী বলে জানানো হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, জেলেনস্কির কমব্যাট ব্রিগেডের সদস্যরা এই হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইউক্রেন মনে করে এর জন্য যথাযথ সময় বেছে নেওয়া দরকার। এর আগে তাদের পরিকল্পিত প্রস্তুতির কারণে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ছয় দিনের পাল্টা হামলায় তারা রাশিয়া কর্তৃক দখলকৃত খারকিভের আট হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনর্দখল করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ কথা এখানে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের হামলা, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব কিছুই রাশিয়াকে আরো আগ্রাসী আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা। বাস্তবে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে জেলেনস্কির অনেক বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠককে পর্যালোচনা করলে এর মূলে ইউক্রেনের ভবিষ্যতের প্রস্তুতির বিষয়টিকেই বেশি দেখতে পাচ্ছি। তবে এখানে এ প্রসঙ্গে এটাও বলে রাখা ভালো যে পশ্চিমারা যতই বলুক না কেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, এটাও মনে রাখতে হবে যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয় চিন্তা করাটাও কিন্তু বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি ডেকে আনতে পারে। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span><br />  </p>