<p>মিসরের শার্ম আল শেখ নগরীতে জলবায়ুবিষয়ক ২৭তম সম্মেলন কনফারেন্স অব পার্টিজ তথা কপ-২৭-এ বিশ্বের ১০২টি দেশ যোগ দেয়। গত বছর কপ-২৬ অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে। কৌতূহল হতেই পারে, বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রের সম্মিলনে একের পর এক জলবায়ু সম্মেলন কেন?</p> <p>কোনো একটি জায়গায় ৩০ বছরের আবহাওয়ার যে গড়পড়তা ধরন, তাকেই বলা হয় জলবায়ু। আবহাওয়ার এই চেনাজানা ধরন বদলে যাওয়াকেই বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে যাবে আমাদের জীবনযাপন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়বে। কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে পড়বে। জমাটবাঁধা বরফ, বিশেষ করে উত্তর মেরুর বরফ ও হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাবে। সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকূলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। এ ছাড়া সাইবেরিয়ার মতো অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে মিথেনের মতো আরেকটি গ্রিনহাউস গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরো বাড়বে এবং দাবানল বাড়বে। সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। ফলে সেসব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। চিরচেনা বসতির আবহাওয়া বদলের জেরে অনেক প্রাণী নতুন জায়গায় চলে যাবে। প্রাণী ও উদ্ভিদের অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির এসিডের মাত্রা বাড়াবে। ফলে ট্রপিক্যাল অঞ্চলের প্রবালপ্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। ফলে জীবন ও জীবিকা হুমকিতে পড়বে। গরিব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম বলে তাদের ওপর এই চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি।</p> <p>জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে কয়েক বছর আগেই জাতিসংঘ ‘রেড অ্যালার্ট’ ঘোষণা করেছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের চিহ্ন এরই মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বিশ্বে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনসংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্ত সরকার কমিটি বা আইপিসিসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন যে চরম তাপপ্রবাহ, অনেক ভারি বৃষ্টিপাত, খরা বা সাইক্লোন হতে দেখা যাচ্ছে, তাতে জলবায়ুর এই পরিবর্তন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শিল্পযুগের আগে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যা ছিল তা থেকে বেড়ে চলেছে। গবেষণা বলছে, ১৮৫০-১৯০০ এই সময়কালের চেয়ে ২০১১-২০২০ এই এক দশকে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। গত পাঁচ বছর ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম।</p> <p>এক গবেষণায় প্রকাশ, ভীষণ গরম, তার ওপর অতিরিক্ত আর্দ্রতা—এমন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যেসব দেশ শ্রম ও উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে—এমন শীর্ষ পাঁচ দেশের কাতারে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এমন বিরূপ পরিস্থিতির কারণে প্রতিবছর তিন হাজার ২০০ কোটি কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যান শুধু বাইরে খোলা স্থানে ভারী ভারী কাজ করা মানুষের কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ার হিসাব। এমন প্রতিকূল পরিবেশের কারণে মানুষের অসুস্থতা ও মৃত্যুহার যেমন বাড়ছে, সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতাও কমে যাচ্ছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যার কারণে দেশের জিডিপিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইপিসিসির গবেষণা বলছে, ১৯০১-১৯৭১ এই সময়কালের সঙ্গে তুলনায় সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির সাম্প্রতিক হার প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই মিটারের কাছাকাছি চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নোনা পানির অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের একটি মারাত্মক সমস্যা। ১৯৭৩ সালে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়, যা ১৯৯৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ হেক্টরে। বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর। বাংলাদেশের মোট উপকূলীয় এলাকা প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর, যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১০.৫০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট খরায় প্রতিবছর বাংলাদেশের ক্ষতি হয় প্রায় ৩৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।</p> <p>গত কয়েক মাসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়া বিপর্যয়, বন্যা ও ভূমিধসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ায় ব্যাপক বন্যা; আফ্রিকা, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র খরা; ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এবং তিন মহাদেশজুড়ে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এই যে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী আজ জলবায়ুজনিত কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে, এ জন্য তো অন্য গ্রহের কেউ দায়ী নয়। এমন বিপর্যয় তো আমরাই সৃষ্টি করেছি। যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার জন্য মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। কলকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়ানোর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী বায়ুমণ্ডলের অন্যতম একটি গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ঊনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়।</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2022/11.November/20-11-2022/kalerkantho-6-2022-11-20-01a.jpg" /></p> <p>জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ এবং প্রকৃতি, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী সম্প্রদায় ইনুয়িটদের মাধ্যমে। ২০০৫ সালে ইনুয়িটদের পক্ষ থেকে আন্ত আমেরিকান মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ করা হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের জীবন, জীবিকা, সম্পত্তি, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, চলাচল, নিরাপত্তা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সাংস্কৃতিক সুবিধা ভোগের অধিকারসহ অনেক মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকারের মধ্যে যোগসূত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা এই অভিযোগের বিষয়ে কমিশন ২০০৭ সালের ১ মার্চ একটি ‘সাধারণ প্রকৃতির শুনানির’ ব্যবস্থা করে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুনানিতে প্রতিনিধি পাঠায়নি। এরপর ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে মালদ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানবাধিকারকে সংযুক্ত করার জন্য প্রচারাভিযান শুরু করে। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে মালদ্বীপের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার শিরোনামে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। মানবাধিকার কাউন্সিল জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকারের মধ্যে সম্পর্কের ওপর একটি বিশদ বিশ্লেষণমূলক গবেষণা পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করে। মানবাধিকার হাইকমিশনার ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে এ বিষয়ে তাদের সমীক্ষা প্রকাশ করে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন জীবন, স্বাস্থ্য, খাদ্য, জল, আবাসন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারসহ অনেক মানবাধিকার উপভোগের জন্য হুমকিস্বরূপ। সমীক্ষায় আরো উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় মানবাধিকার আইনের অধীনে রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিবেদনটি বিবেচনা করার পর মানবাধিকার কাউন্সিল ২০০৯ সালে একটি রেজল্যুশন গ্রহণ করে যে মানবাধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। জাতিসংঘের ৮৮টি সদস্য রাষ্ট্র মানবাধিকার কাউন্সিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত সমর্থন করে। কিন্তু কিছু উন্নয়নশীল দেশ মানবাধিকারের ওপর জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের জাতিসংঘের স্বীকৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক অগ্রগতি রোধ করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে প্রচার করে। কিছু শিল্পোন্নত দেশও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।</p> <p>যা হোক, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। জলবায়ু পরিবর্তন যেসব মানবাধিকবার লঙ্ঘনকে প্রভাবিত করছে তা হলো—এক. জীবনের অধিকার। ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহ, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস দাবানল এবং খরার তীব্রতার কারণে মৃত্যু, অসুস্থতা এবং আঘাতের ঘটনা বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ডুবে মৃত্যু ও আঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্বের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ নদী অববাহিকায় বাস করে, যেগুলো ২০৮০ সালের মধ্যে মারাত্মক বন্যার ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুই. জলবায়ু পরিবর্তন কোটি কোটি মানুষের খাদ্যের অধিকার ঝুঁকিতে ফেলেছে। কিছু দেশে বৃষ্টিনির্ভর কৃষি থেকে ফলন ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এশিয়ার কিছু অংশে পানির ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ফসলের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তিন. জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন উপায়ে বাসস্থানের অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলছে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন অনেক বসতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। গবেষণা বলছে, সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৮.৩ অংশ নিমজ্জিত হতে পারে। ফলে বাসস্থানের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অকাঠামো; যেমন—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ নানা অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকারকে হুমকিতে ফেলবে। চার. জলবায়ুর প্রভাব অপুষ্টিজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বন্যা ও খরা, ডায়রিয়া, কলেরা ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়াবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৮৫ সালের মধ্যে ৩৫০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পাঁচ. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ পানির অভাবের সম্মুখীন হতে পারে বিশ্ব। পর্বত হিমবাহ থেকে পানির প্রবাহ কমে গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে এশিয়ার এক বিলিয়ন মানুষ প্রভাবিত হতে পারে। এশিয়ার জলস্তম্ভ নামে পরিচিত তিব্বত মালভূমি প্রায় ২০০ কোটি মানুষের পানি সরবরাহ করে? বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০৫০ সালের মধ্যে এই পুরো অঞ্চলের পানির আধারে বিপর্যয় ঘটতে পারে?     </p> <p>বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল, তা থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না হলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন। রিপোর্টের পর রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি পরিষ্কার ও অন্ধকার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, কপ-২৭ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অবশ্যই অনেক দ্রুত ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুদ্ধে হয় আমরা জয়ী হব, নয়তো আমরা হেরে যাব। সুনির্দিষ্টভাবে এই লড়াইয়ের অর্থ হলো, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে হবে। এ জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। কপ-২৬ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ধাপে ধাপে কয়লার ব্যবহার কমানো, বন উজাড় ২০৩০ সালের মধ্যে বন্ধ করা এবং মিথেন গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কমানো। কপ-২৬ সম্মেলনের পর কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনায় দুঃখজনকভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই বিশ্ব এ মুহূর্তে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বজায় রাখার মতো অবস্থায় নেই বলে জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।</p> <p>সমুদ্রের তীরবর্তী ভৌগোলিক অবস্থান, মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা, অপ্রতুল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এর ওপর অধিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বিপন্নতা খুবই ভয়াবহ। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী অধিক কার্বন নিঃসরণকারী রাষ্ট্রগুলোর দায় রয়েছে বাংলাদেশকে বিপন্নতা থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।</p> <p> লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ</p> <p>চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p>zhossain1965@gmail.com</p>