জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম তৈরির কাজ চলছে। দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে এই কর্মযজ্ঞ বড় এক মাইলফলক তৈরি করবে। পুরোপুরি নবায়ন করার জন্য এটা এক মহৎ প্রয়াস। সদা পরিবর্তনশীল এ জগতে মানুষের সামগ্রিক জীবনের মানোন্নয়নের ধারাবাহিকতার স্বার্থে এবং আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের চেতনা ও দেশের সব শ্রেণির মানুষের জন্য সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের বাস্তবায়নের পথে এ বিষয়টি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষা যত সাবলীল ও অবাধ হয় ততই ভালো। এ কথা মাথায় রেখে আমি আমার এই ছোট লেখার শিরোনামের দিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এ পর্যন্ত দেশে খ্রিস্ট ধর্মের সব বইয়ের মধ্যেই অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়ে আসছে, যেসব শব্দ এ দেশের প্রটেস্ট্যান্ট চার্চগুলোর কাছে অপরিচিত। এ কারণে এসব চার্চভুক্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের কাছে ওই শব্দগুলো পরিচিত নয় এবং তাদের অর্থ তারা জানে না বা বোঝে না। এর ফলে পরীক্ষায় তারা কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে ব্যর্থ হয়। এ বিষয়টি চলে আসছে সুদীর্ঘকাল ধরে। এ দেশের প্রটেস্ট্যান্ট চার্চগুলোর জনসংখ্যা সমগ্র ক্রিশ্চিয়ান জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ, বাকি ৪৫ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক চার্চের অন্তর্ভুক্ত; যদিও এককভাবে এই চার্চ প্রতিষ্ঠান সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে পুরনো।
আমরা চাই সব শব্দ ও স্থান, বিষয় ও কথা বোঝানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পাঠ্য বই, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, কারিকুলাম ইত্যাদিতে যেন চলমান শব্দের পাশাপাশি প্রটেস্ট্যান্ট চার্চগুলোর মধ্যে ব্যবহৃত শব্দগুলোও বন্ধনীর মধ্যে বা স্ল্যাশ দিয়ে পাশাপাশি লেখা থাকে। যেমন—মারিয়া (মরিয়ম), প্রবক্তা (নবী বা ভাববাদী), বিশ্বাসমন্ত্র (বিশ্বাস সূত্র) ইত্যাদি। এ রকম অনেক শব্দ ও কথা আছে, যেগুলো রোমান ক্যাথলিক চার্চে ব্যবহৃত হয়। তাদের বিভিন্ন বইপুস্তক, গান, প্রার্থনা, ধর্মোপদেশ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বৃহত্তর প্রটেস্ট্যান্ট সমাজে সেগুলো কোথাও ব্যবহৃত হয় না (কিন্তু তা বোঝাতে অন্য শব্দ আছে) বলে এসব চার্চের ছেলে-মেয়েরা তার অর্থ জানে না। শেষ বিচারে এ অবস্থার ফল ভালো হয় না। সঠিক শিক্ষা থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয় এবং পরীক্ষায় তারা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়।
যেসব শব্দ ও কথা এ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে—যেমন : ভগবৎ বিশ্বাস, বিশ্বাসমন্ত্র, মারিয়া, ক্রুশের চিহ্ন, ধর্মপল্লী, এদেন, প্রবক্তা, সন্ধি ইত্যাদি। আরো আছে পাপমুক্ত মারিয়া, সামসংগীত, সন্ন্যাসজীবন, প্রসাদ, ধর্মপত্র, কাইন, সুখপন্থা, সাদুকি, যেবেদ, বেদিসেবক, ক্ষুদ্র পুষ্প, সংস্কার, প্রেরিত দূত, ঐশরাজ্য, শাস্ত্রী, সাক্রামেন্ত, পৈরিতিক, অপদূত/অপদূতগ্রস্ত, অপদূতরাজ, বেয়েলজেবুল ইত্যাদি। এসব শব্দ ক্যাথলিক চার্চে ব্যবহৃত হয়। প্রটেস্ট্যান্ট চার্চে ব্যবহৃত হয় না।
আশা করি, এ বিষয়টি এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট সব মহলে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য যথাবিহিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
লেখক : খ্রিস্টীয় ঈশতত্ত্বের শিক্ষক