<p>দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই অবাঞ্ছিত, অনভিপ্রেত ও ভয়াবহ এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ‘ভিসিদের অনিয়মে ডুবছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে ৪ মার্চ ২০২১ কালের কণ্ঠ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রথম পাতায় পত্রিকাটির প্রধান শিরোনাম হলেও উল্লিখিত দীর্ঘ প্রতিবেদনটির আবার উপশিরোনাম দেওয়া হয় : ‘১০ ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে * ৩ ভিসির ব্যাপারে জমা পড়েছে তদন্ত প্রতিবেদন * ইউজিসির একাধিক সুপারিশ ফাইলবন্দি।’</p> <p>প্রদর্শিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে অনুসরণীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা (ভিসি) সম্মানীয় ও আদর্শ ব্যক্তি হলেও সম্প্রতি তাঁদের অনেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নকাজ এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বেশি হয়, সেখানে অনিয়মও বেশি হয়। ‘তবে’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে একাধিক ভিসির ব্যাপারে অনিয়ম প্রমাণের পর সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি হয়েই পড়ে থাকে।”</p> <p>শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ এমন ভয়ানক সব সংবাদ-প্রতিবেদন প্রায়ই পত্রপত্রিকায় দেখতে পাওয়া যায়। দিন দিন দেখতে দেখতে এসব যেন সবার গা-সহা হয়ে গেছে। চুরিচামারি কমবেশি সবখানেই আছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কর্ণধারদের এ কী সব কাণ্ড আমরা দেখি! আর তাঁদের অপকর্মকে ‘তবে’র আড়ালে ঢেকে রাখার এ কী সংস্কৃতির (?) প্রচলন হলো! বলার অপেক্ষা রাখে না যে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢেকে রাখার এমন প্রবণতা দুঃসহ পরিণতির আলামত। </p> <p>সম্প্রতি আমার কলেজজীবনের এক শিক্ষক ফোন করে জানতে চাইলেন : এই, তুমি বলো তো লোকে চুরি কেন করে? হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে আমি প্রথমে থতোমতো খেয়ে যাই। স্যার আবারও একই কথা জানতে চাওয়ায় আমি আমার মতো করে বলি : প্রথমত অভাবে আর দ্বিতীয়ত স্বভাবে।</p> <p>এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রসঙ্গ। ততক্ষণে আমার কাছে পরিষ্কার হলো স্যার কেন আগেই আমাকে এভাবে ‘আক্রমণ’ করলেন। আমার এই প্রিয় স্যার পাকিস্তান আমলে সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করে পরবর্তী সময়ে অধ্যক্ষ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে অন্তত ১৫ বছর আগে অবসর নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য থেকে শুরু করে শিক্ষা বিভাগীয় বিভিন্ন কমিটির সদস্য হিসেবে বিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার শিক্ষকের। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমানে কী নেই আমাদের। স্বীকার না করে উপায় নেই যে উচ্চশিক্ষায় আমাদের দেশে এ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। সরকারি-বেসরকারি দেড় শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়। একইভাবে এক শর বেশি মেডিক্যাল কলেজ। রয়েছে পাঁচ বিভাগীয় শহরে পাঁচটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া সাড়ে ছয় শ সরকারি কলেজ। ডিগ্রিস্তরে পাঠদান উপযোগী কলেজ দুই হাজারের বেশি। আর সরকারি-বেসরকারি সাড়ে আট শ কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স পড়ানোর ব্যবস্থা-বন্দোবস্ত। এসব বিবেচনায় শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব বলা যেতে পারে। অভাবনীয় পরিবর্তন ও অগ্রগতি। তবে উপযুক্ত দেখভালের অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক কিছু থাকার পরও কী যেন নেই আমাদের। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। আর চুরিচামারি? সরষেতেই ভূত থাকলে কে, কিভাবে সরাবে।   </p> <p>লেখক : অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক</p> <p>bimalsarker59@gmail.com</p>