সম্প্রতি করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন পাওয়া গেছে ইংল্যান্ডে। সারা বিশ্বে অনেক আলোচনা হচ্ছে নতুন এই ধরনটি নিয়ে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি করোনার নতুন ধরনটি ছড়িয়েছে বিশ্বের নানা দেশেও। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি অন্য ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রমণ করার ক্ষমতা রাখতে পারে, যদিও তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
একটি ভ্যাকসিন কার্যকর হতে হলে ভ্যাকসিনটিকে দেহের টি-সেল ও অ্যান্টিবডি রেসপন্সকে সক্রিয় করে তুলতে হবে। ভ্যাকসিন যখন মানুষের দেহের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়, তখন প্রথমে টি-সেলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। দেখা যাচ্ছে, ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটির মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্পাইক প্রোটিনে সাতটি কোডে (অ্যামাইনো এসিড) পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বাকি ১২৬৬ কোডে (অ্যামাইনো এসিডে) কোনো পরিবর্তন আসেনি। এ কারণেই বিজ্ঞানীদের ধারণা, টি-সেলের কার্যকারিতা অটুট থাকবে।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার জন্য অ্যান্টিবডি রেসপন্সও প্রয়োজন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটির স্পাইক প্রোটিনের ৫০১ নম্বর পজিশনে পরিবর্তিত হওয়ার কারণে অ্যান্টিবডি রেসপন্স হয়তো বা কিছুটা কমে গেলেও যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা হবে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের (অলিগোক্লোনাল অ্যান্টিবডি রেসপন্স); তাই অ্যান্টিবডি রেসপন্স অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কম।
সুতরাং বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনগুলো কার্যকারিতা প্রদর্শন করবে। এ ব্যাপারে বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিনটির কথা বলা যায়। বায়োনটেক কিন্তু দেখিয়েছে, সারা বিশ্বের করোনাভাইরাসের যে বিভিন্ন ধরন পাওয়া গেছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিন কার্যকারিতা প্রদর্শন করে। বায়োনটেক এখন ইংল্যান্ডের করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটির ওপর পরীক্ষা চালাচ্ছে, যার তথ্য আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সুতরাং আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই মুহূর্তে করোনার স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলাই হবে মূল কাজ। এমনিতেই শীতকালে বাংলাদেশে ভাইরাসজনিত কারণে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়ে যায়। এর ওপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে বেড়ে না যায় সে জন্য স্বাস্থ্যবিধি আরো ভালোভাবে মেনে চলা খুব জরুরি।
লেখক : ইমিউনোলজিস্ট ও সাবেক প্রগ্রাম ম্যানেজার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ইউতেরেখত সেন্টার অব অ্যাকসিলেন্স ফর বায়োথেরাপিউটিকস নেদারল্যান্ডস