ক্রীড়া প্রতিবেদক : বিকেএসপিতে থাকতে প্রথমবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করছেন। এই লম্বা সময়জুড়েই শিরিন আক্তার বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—এভাবে একের পর এক ধাপ পেরোনো মেয়েটিই প্রতিবছর অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকেও সেরা। এমনটা খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু শিরিন যে অন্য ধাতুতে গড়া।
২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত টানা দ্রুততম মানবী হয়েও তিনি যেন থামতে চান না। জানতে চাইলে বলেন, ‘কী করব! দ্রুততম মানবী হওয়ার ওই মুহূর্তটির সঙ্গে আর কোনো কিছুকে যে মেলাতে পারি না। এত আনন্দ আর কিছুতেই নেই। দৌড় শেষ করে যখন ঘোষণা দিই—আমিই সেরা, সত্যি এটা অন্য রকম এক অনুভূতি।’
ট্র্যাকে নাজমুন নাহার বিউটির দীর্ঘদিনের আধিপত্য শেষেই শিরিনের উত্থান। বিউটি সর্বশেষ বাংলাদেশ গেমসে জিতলেন। পরেরবার ২০০ মিটার দৌড়ে হারলেন, ১০০তে অংশই নিলেন না। বিকেএসপির শিরিন সেদিন সবার আগে দৌড় শেষ করে যখন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছিলেন, ‘বিউটি আপু থাকলেও আজ তাঁকে হারিয়ে দিতাম।’ তখন তা একটু বাড়াবাড়ি শোনালেও সেই আত্মবিশ্বাসে যে এতটুকু খাদ ছিল না, পরের প্রতিটি দৌড়ে শিরিন তার প্রমাণ দিয়েছেন। বিউটিও হয়তো শিরিনেই তাঁর শেষ দেখেছিলেন, বাংলাদেশ গেমসে তাঁর পেছনেই তো ছিলেন শিরিন। এই মেয়েকে আর পেছনে রাখা সম্ভব হবে না বলেই হয়তো সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
এরপর দ্রুততম মানবের খেতাব বদল হয়েছে কয়েকবার, কিন্তু শিরিন পেছনে ফিরছেন না একবারের জন্যও। এবারও যে ব্যবধান রেখে তিনি ১০০ মিটার, ২০০ মিটার শেষ করেছেন, তাতে সেই অনির্বচনীয় আনন্দের স্বাদ আরো পেতে চাইতেই পারেন তিনি। কিন্তু সব কিছু সামলে কিভাবে সম্ভব হচ্ছে তা? শিরিনের কোচ আব্দুল্লাহিল কাফি বলছেন, সেটা একান্তই ওর নিজের অধ্যবসায়ে, ‘একজন প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতেই পারে, কিন্তু জেতার মানসিকতা, পরিশ্রম করার তাড়নাটা অ্যাথলেটের নিজের। সেই তাড়না না থাকলে বিকেএসপি থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ও এটা ধরে রাখতে পারত না। এখন ও বিশেষ অনুমতি নিয়ে বিকেএসপিতেই থাকে, আমার কাছে অনুশীলন করে। ওর মন পড়ে থাকে ট্র্যাকে।’
যদিও দুটি দক্ষিণ এশীয় গেমসে অংশ নিয়েও এখনো পদক জেতা হয়নি তাঁর। জাতীয় পর্যায়ে এত লম্বা সময় আধিপত্যের পরও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে না পারায় শিরিন অন্তত নিজের দায় দেখেন না, ‘আমি অ্যাথলেটিকসে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। আমাকে দিয়ে যা সম্ভব ফেডারেশন তা করিয়ে নিতে পারে। আমি চেষ্টার দিক দিয়ে তো কোনো ঘাটতি রাখিনি!’
মন্তব্য