<p>এক আকাশে ভয়ে ভয়ে উঁকি মেঘের আশঙ্কায়। অথচ সেখানে জোছনার হাসি।</p> <p>আরেক আকাশে রংধনুর সাত রঙের প্রত্যাশা। অথচ সেটি কী ভীষণ রংহীন!</p> <p>বঙ্গবন্ধু বিপিএলে বাংলাদেশের পেস বোলার ও স্পিনারদের পারফরম্যান্সে অমনই বিপরীতমুখী ছবি। আশা ছাপিয়ে উঠেছে গতির ঝড়, কিন্তু প্রত্যাশার কুঠারাঘাতে ঘূর্ণি বোলাররা পড়েছেন মুখ থুবড়ে।</p> <p>সেটি কেমন? টুর্নামেন্টে দেশের সফল বোলারদের তালিকার প্রথম ১১ জনই পেসার!</p> <p>সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির রেসে তাই পেসারদের জম্পেশ লড়াই। আগের সন্ধ্যায় রংপুর রেঞ্জার্সের মুস্তাফিজুর রহমান দুই উইকেট <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/05-01-2020/1/KK-Sports-05-01-2020-1.jpg" style="float:left; height:116px; margin:3px 6px; width:418px" />নিয়ে উঠে যান চূড়ায়। ১০ ম্যাচে ১৫.৪৩ গড়ে ১৬ শিকারে। কাল দুপুরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মেহেদী হাসান রানা তিন উইকেট নিয়ে পেরিয়ে যান বন্ধুকে। আট ম্যাচে ১২.২৯ গড়ে ১৭ শিকারে। বয়সভিত্তিক দলে মুস্তাফিজ-মেহেদী একই প্রজন্মের প্রতিনিধি। কিন্তু প্রথমজন যেখানে নিজেকে পরের ধাপে নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াচ্ছেন, পরেরজন পড়ে ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্ধকার গলিতে। এবারের বিপিএলেই প্রথমবারের মতো এলেন পাদপ্রদীপে। কাল খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে জয়ে ২৯ রানে তিন উইকেট নিয়ে হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এটি আবার প্রথম নয়, টুর্নামেন্টে তৃতীয়বারের মতো তাঁর হাতে ওঠে এ পুরস্কার।</p> <p>বল হাতে সাবলীল মেহেদী মাইক্রোফোনের পেছনে অবশ্য একেবারে জড়সড়; ঠিক মুস্তাফিজের মতোই। কাল সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বের খানিক নমুনা দিলেই তা বোঝা যাবে। ‘মুস্তাফিজকে পেরিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন?’-এর উত্তর ‘সেটা আমি মাথায় আনিনি।’ ‘এটি উপভোগ করছেন?’-এর জবাব, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ আরেক সম্পূরক প্রশ্ন ‘মুস্তাফিজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালো লাগছে?’-এ নিজের মনোভাব জানিয়ে দেন আরো সংক্ষিপ্ত পরিসরে, ‘হ্যাঁ।’ বাঁহাতি বিস্ফোরক পেসারকে সে সময় ডাঙায় তোলা মাছের মতোই ঠেকে!</p> <p>কিন্তু বিপিএলে বল হাতে নিজের কাজটি ঠিকই ঠিকঠাক করছেন মেহেদী। এবং বাংলাদেশের অন্যান্য পেসাররাও। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় এক-দুইয়ে মেহেদী-মুস্তাফিজের পর তিন নম্বরে রুবেল হোসেন ও ইবাদত হোসেন। প্রথমজন চট্টগ্রামের হয়ে ৯ ম্যাচে ১৮.৮৪ গড়ে নেন ১৩ উইকেট। আর সিলেট থান্ডারের পেসারের সমান শিকার ১১ ম্যাচে ২২.১৫ গড়ে। বাংলাদেশি সফল বোলারদের তালিকার পরের নামগুলোতেও পেসারদের জয়জয়কার। খুলনা টাইগার্সের শহিদুল ইসলামের আট ম্যাচে ১২ উইকেট ২১.৬৬ গড়ে। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের সৌম্য সরকারের ১১, আল-আমিন হোসেনের ১০, ঢাকা প্লাটুনের হাসান মাহমুদের ৯, চট্টগ্রামের মুক্তার আলীর আট, খুলনা টাইগার্সের শফিউল ইসলামের সাত, রাজশাহী রয়ালসের ফরহাদ রেজার সাত শিকার। এই ১১ পেসারের ভিড় পেরিয়ে তবেই দেখা মিলবে স্পিনারের। কুমিল্লার বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল এবং ঢাকার অফস্পিনার মেহেদী হাসানের ছয়টি করে উইকেট। সমানসংখ্যক উইকেট আরো দুই পেসার রাজশাহীর কামরুল ইসলাম এবং রংপুর রেঞ্জার্সের তাসকিন আহমেদের।</p> <p>স্পিনারদের খনিতে পেসারের এমন ঝিকমিকিয়ে ওঠা অবাক করেছে নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে। মুখে হাসি নিয়ে তাই বলতে পারেন, ‘ভালো পেস বোলার তো আমরা অনেক দিন ধরেই খুঁজছি। এবার এক টুর্নামেন্টেই এত পেসার ভালো করছে। অস্বীকার করব না যে, আমি একটু অবাকই। আর ভালো লাগছে তার চেয়েও অনেক বেশি।’ বোলারদের মধ্যে ঢাকার হাসান মাহমুদ সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে তাঁকে, ‘ও খুব জোরে বোলিং করতে পারে। বিপিএলে টানা খেলছে বলে পেস কিছুটা কম। এমনিতে নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি গতিতে বোলিং করে। ইমার্জিং টিমে দেখেছি। বিপিএলে তো দুর্দান্ত। নতুন পেসারদের মধ্যে ওর মাঝেই সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা দেখি আমি।’ অন্যদের মধ্যে মেহেদী-ইবাদতের কথাও বলেছেন আলাদা করে, ‘মেহেদী টানা ভালো বোলিং করছে। গতি তত বেশি নয় বলে ধারাবাহিকভাবে কার্যকর হওয়ার জন্য অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আর ইবাদতের লাইন-লেন্থ নিয়ে সব সময়</p> <p>সমস্যা ছিল। এবার দেখলাম, বেশির ভাগ বলই ঠিক জায়গায় করছে।’</p> <p>পেসারদের মুগ্ধতা জাগানিয়া গল্পে হাবিবুলের খচখচানি অন্য জায়গায়; স্পিনারদের ব্যর্থতায়। সে কারণেই হাহাকার ছড়িয়ে যায় নির্বাচকের কথায়, ‘ভুলে গেলে চলবে না, স্পিন আমাদের বোলিংয়ের প্রধান শক্তি। বিদেশিরা আমাদের ভয় পায় সে কারণেই। বিপিএলে স্পিনারদের ভালো না করাটা তাই চিন্তার বিষয়। পেসারদের সঙ্গে ওরাও জ্বলে উঠতে পারলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো।’</p> <p>তা হয়নি বলেই রংধনুর আকাশ রংহীন। মেঘের আকাশে জোছনার হাসিতে সেটি আড়াল করার উপায় কই!</p>