<p>বিশ্বের অনেক দেশেই খেলার মাঠসহ গণপরিসর পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৃথক সংস্থা থাকে। আমাদের দেশের খেলার মাঠ-পার্ক-গণপরিসর রক্ষণাবেক্ষণে সুনির্দিষ্ট সংস্থা গঠনের মাধ্যমে সব নাগরিকের জন্য এসব সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। সরকারি-বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পে প্রয়োজনীয়সংখ্যক খেলার মাঠ গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজন হলে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, ব্যবস্থাপনার নীতিমালা প্রণয়ন ও এলাকাবাসীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে পারলে নগরবাসীর জন্য খেলার মাঠের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব।</p> <p>সরকারিভাবে সারা দেশের নগর ও গ্রামীণ এলাকায় খেলার মাঠের পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘খেলার মাঠের পরিকল্পনার সূচক বা মানদণ্ড (প্ল্যানিং স্ট্যান্ডার্ড)’ ও ‘খেলার মাঠের নীতিমালা’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন।</p> <p>আমাদের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠের অপরিহার্যতা অপরিসীম।  নগর পরিকল্পনায় তাই পরিকল্পনামাফিক বিভিন্ন বয়সের জন্য এবং নগরের সব এলাকার জন্য খেলার মাঠের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে হয়। আধুনিক নগর পরিকল্পনায় খেলার মাঠকে বিনোদন সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।</p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম এক ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীরিক সক্রিয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন।</p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা (খেলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি) থাকা উচিত। এই হিসাবে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য সোয়া দুই একর খোলা জায়গা এবং এক একর খেলার মাঠের প্রয়োজন। টেকসই নগরায়ণসংক্রান্ত জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন-হ্যাবিটেটের মতে, হাঁটা দূরত্বে খেলার মাঠ, সবুজ এলাকা থাকা উচিত।</p> <p>বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, যেকোনো আবাসন এলাকার ন্যূনতম ১০ শতাংশ খেলার মাঠ-পার্ক প্রভৃতি বিনোদন সুবিধার জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। অতি ঘন নগর এলাকায় প্রতি আধা বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা বিবেচনায় ন্যূনতম একটি খেলার মাঠ থাকা প্রয়োজন।</p> <p>পরিকল্পনার সূচক সম্পর্কিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টাইম সেভার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য ০.৫ থেকে এক একর আয়তনের ‘প্লে লট’ (তিন থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের খেলার মাঠ), ১.৫ থেকে তিন একরের ‘প্লে-গ্রাউন্ড’ (৭-১৫ বছর বয়সী কিশোরদের খেলার মাঠ), ১.৫ থেকে ১৫ একর আয়তনের ‘প্লে-ফিল্ড’ (১৫-ঊর্ধ্ব বয়সীদের খেলার মাঠ) থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনায় এই উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।</p> <p>ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) সম্প্রতি এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নগর এলাকার জনসংখ্যার আকার ও ধরন অনুযায়ী খেলার মাঠের তীব্র সংকট আছে উল্লেখ করে বলা হয়, ঢাকা মহানগরে ৭৯৫টি, চট্টগ্রামে ৫৪১টি, রাজশাহীতে ৩৭টি, খুলনায় ৬৫টি, সিলেটে ৪০টি ও বরিশালে ৪৫টি খেলার মাঠের ঘাটতি রয়েছে।</p> <p>বিআইপির ২০১৯ সালের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে খেলার মাঠ আছে ২৩৫টি, যার বেশির ভাগই (১৪১) প্রাতিষ্ঠানিক মাঠ, যেখানে এলাকাবাসী তথা সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। বিদ্যমান বেশ কিছু খেলার মাঠ বিভিন্ন ক্লাবের নামে দখল হয়ে আছে, যেখানে পাড়া-মহল্লার শিশু-কিশোরদের অবাধ প্রবেশাধিকার নেই, অনেক ক্ষেত্রেই খেলার কোনো সুযোগ নেই। অনেক খেলার মাঠ আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়ার ফলে শিশু-কিশোরদের খেলার কোনো সুযোগ আর থাকে না।</p> <p>ঢাকার দুই মেয়র খাল দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও মাঠ দখলের বিরুদ্ধে, বিভিন্ন গোষ্ঠী বা ক্লাবের ক্ষুদ্র স্বার্থের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন, তেমন একটা দেখা যায়নি। অথচ নগরে নগরে, জেলায় জেলায় খেলার সুযোগের অভাবে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা, তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং।</p> <p>ফলে আমাদের শিশু-কিশোরদের আগামী দিনের জন্য সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করতে খেলার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। </p> <p> </p> <p>লেখক : পরিচালক, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)</p> <p> </p>