জল-জাল-জেলে এটাই সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’ উপন্যাসের পটভূমি। জেলেজীবনের সংগ্রামের চিত্রণ করতে যা যা প্রয়োজন, তা করেছেন লেখক। এখানে মোটাদাগে যারা রয়েছে : সাইদার নিবারণ, নিবারণের ছোট ভাই পাঁচু ও ছেলে বিলাস, বশীর, সয়ারাম, পাচী, রসিক, দুলাল; অন্যদিকে অমর্তের বউ, দামিনী, হিমি, হিমির সখী আতর, মহাজন ব্রজেন ঠাকুর প্রমুখ। আপাতদৃষ্টিতে এই উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা হলো বিলাস ও হিমি।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সব চরিত্র যাঁর ছায়া অবলম্বনে, তিনি হলেন নিবারণ। গঙ্গার জেলে মানেই ঋণের বোঝায় নিমজ্জিত হতে হতেই তা শোধের চেষ্টা করতে হয় মরণপণ। জেলেজীবনের বীভৎস সৌন্দর্য হলো অভাব। ধারদেনায় তারা নিজের অজান্তে বন্ধকি হয়ে যায় মহাজনের কাছে। এই জীবন বাঁধা থাকে এক অদৃশ্য সুতায় মহাজনের লাটাইয়ে। জেলেপাড়ায় অভাব আছে মহামারি হয়ে। সমরেশ বসুর ভাষায়, ‘বাপ-ছেলেয় মারামারি করছে, বউ-সোয়ামি ছাড়াছাড়ি করছে। এই না মাছ মারার জীবন! এক কোটালে বাঁচে, আর এক কোটালে মরে। মাছের প্রাণের চেয়েও তার আয়ু টলমল। এই বাস্তবতায় প্রতিরোধ নেই। কঠোর বর্তমানের মোকাবেলা করতে করতেই ঝাপসা হয় অতীত। ’ ধীবরজীবনের বিবেক বলে ওঠে, ‘বড়ো লাঞ্ছনা গো মা। কাকে অভিশাপ দেব আমরা, ঠাহর পাচ্ছি নে। চিনি শুধু তোকে। সাংলোর সলি দিয়ে মারব নাকি তোকে। ’
অনুলিখন : পিন্টু রঞ্জন অর্ক