প্রতিটি কালোত্তীর্ণ সাহিত্যই স্তরবহুল ও বহুমাত্রিক। ‘লালসালু’ উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলার সামাজিক কাঠামো এবং সমকালীন রাজনৈতিক আবহকে গেঁথেছেন একই সুতায়। জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র। মানুষকে ধর্ম দ্বারা বিভ্রান্ত করে বিস্মৃত হয়েছিল পাকিস্তান আন্দোলন।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু নতুন রাষ্ট্র নাগরিকদের আশা

পূরণের পথ থেকে দূরে যেতে থাকে, পরিণত হতে থাকে শোষণযন্ত্রে। পাকিস্তান রাষ্ট্রে সাধারণ মানুষের জীবনের গুণগত উন্নয়ন না ঘটায় ধর্মনির্ভর রাজনীতি থেকে বিশ্বাস হারান ঔপন্যাসিক। তিনি জানতেন ধর্মের এমন প্রয়োগের ফলাফল অশুভ, মোহ কেটে গেলে এর নগ্নতা প্রকাশিত হবেই। মহব্বতনগর গ্রামে শিকড় গেড়ে বসা মজিদ আসলে উন্মূলিত। তার স্বার্থ সংরক্ষণে সে পরিকল্পিতভাবে গ্রামের মানুষ, এমনকি স্ত্রীর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে। ঠিক যেমন পাকিস্তান রাষ্ট্র। এ যাত্রায় পরিণাম ভয়শূন্য প্রতিবাদ করেছিল জমিলা। মজিদের মুখোশ খুলে পড়লে রহিমা এক অচেনা মজিদকে দেখতে পায়। জমিলার প্রতিবাদ মজিদের শিকড় নাড়িয়ে দিয়েছিল। লেখক প্রচ্ছন্নভাবে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের এমন পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ১৯৪৭ সালে তাঁর এ ইঙ্গিত ১৯৭১ সালে সত্য হয়। পাকিস্তান থেকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ধর্মান্ধতা, ধর্মের রাজনীতি চিরস্থায়ী নয়; মানুষ তার অধিকার নিয়ে ঠিকই সচেতন হবে একদিন।