‘কর্ণফুলী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি : কালের কণ্ঠ
নতুনের চেয়ে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বইয়ের প্রতি ঝোঁক বেশি পাঠক-ক্রেতাদের। নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে একুশে বইমেলায় এমনটাই দেখা গেল সোমবার। হোক না সেটা গল্প, কবিতা বা উপন্যাস। কিশোর-কিশোরিদের পছন্দ বরাবরের মতো সায়েন্স ফিকশন। মেলায় বিশ্ব সাহিত্যের সেরা লেখকদের অনুবাদগ্রন্থের প্রতিও একশ্রেণির পাঠকের আকর্ষণ রয়েছে। এদিকে বইমেলার প্রচারে নানা দুর্বলতার অভিযোগ করেছেন অনেকে। শিশুদের জন্য বিশেষ কর্নার রাখারও কথা বলেছেন কেউ কেউ।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার প্রায় সবকটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলে তাদের প্রকাশিত অনুবাদ বই রয়েছে। এসবের মধ্যে উপন্যাস, মিথলজি, ইতিহাসনির্ভর বই, গোয়েন্দা গল্প, ক্রাইম ফিকশন, শিশুতোষ বিজ্ঞানের কল্পকাহিনি, বিশ্ববাণিজ্যে সফল মানুষের কাহিনি, মানুষের মানস গঠনের ওপর মনোবিজ্ঞান এবং ধর্মীয় বই রয়েছে। তবে অনুবাদসাহিত্যে পিছিয়ে রয়েছেন চট্টগ্রামের প্রকাশকরা।
কথাপ্রকাশের প্রতিনিধি ইসমাইল হোসেন দুলাল জানান, অনুবাদ গ্রন্থের চাহিদা ভালো। এর মধ্যে গল্প উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন শীর্ষে।
সৃজনী প্রকাশনার ইমন জানান, তাঁদের অনুবাদের অনেক বই বিক্রি হয়েছে। চাহিদাও ভালো। সৃজনী থেকে প্রকাশিত মার্টিন লিংগল লেখা ড. মো. এমতাজ ও ড. মো. মনজুর রহমানের অনুবাদ করা ‘মুহাম্মদ (সা.)’ বইটি এরই মধ্যে প্রায় কপি বিক্রি হয়ে গেছে।
সময় প্রকাশনের ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত লেখকের পাশাপাশি অনুবাদ বইয়েরও চাহিদা রয়েছে।’ এবারের মেলায় পাঠক-ক্রেতার উপস্থিতি ও বই বিক্রি মোটামুটি সন্তোষজনক বলে তিনি জানান।
চর্চাকেন্দ্রের স্টলে নিজের অনুবাদ করা একগাদা বই নিয়ে বসেছিলেন বিশিষ্ট অনুবাদক ফরজানা রহমান শিমু। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনচর্চা নিয়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা লেখকদের বই অনুবাদ করেন তিনি। এর মধ্যে বেঞ্জামিন গ্রাহাম-এর ‘দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইভেস্টর’, ক্যারল এস ডিউইক-এর সাড়া জাগানো ‘মাইন্ডসেট’সহ ডজনখানেক বই রয়েছে তাঁর। এসব বইয়ের বিশেষ শ্রেণির পাঠক রয়েছে। বই বিক্রি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট তিনি।
চট্টগ্রাম শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের শিক্ষক লেখক শামসুদ্দিন শিশির বলেন, ‘মেলার আয়োজক কমিটির উচিত ছিল প্রতিদিন মাইকে বইমেলা নিয়ে নগরজুড়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা। তবে দুই-তিন বছর পর হয়তো আর এভাবে প্রচারের দরকার হবে না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি হোসাইন কবির বলেন, ‘মেলায় ধীরে ধীরে জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে। তবে শিশুদের জন্য পৃথক কর্নার থাকা দরকার। আর মেলায় সাহিত্য ও সংস্কৃতির লোকজনের সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়টি আগামীতে খেয়াল রাখা দরকার।’
পরিবেশ ও প্রকৃতি বাঁচানোর আকুতি : চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেছেন, ‘কর্ণফুলী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ গ্রন্থে প্রকৃতি-পরিবেশ, নদী, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নগর-ভাবনা, আশা-নিরাশ, সমালোচনা-আত্মসমালোচনা, সমাজ সচেতনতা এবং চট্টগ্রামের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আজকের প্রবন্ধ সংকলনের বইটি আগামী দিনের ইতিহাসের আকর হবে। কারণ বইটিতে ঘটনার বর্ণনা যেমন আছে, তেমনি ঘটনার অন্তর্নিহিত অনেক মূল্যায়ন এবং বিশ্লেষণও আছে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন চট্টগ্রাম ব্যুরোর নিজস্ব প্রতিবেদক রেজা মুজাম্মেলের ‘কর্ণফুলী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রতিদিন চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া ও আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নুর হোসাইন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল মাওলা, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি
মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ, শিক্ষাবিদ শামসুদ্দিন শিশির ও পটিয়া খলিলুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। সাংবাদিক ফারুক তাহেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন রেজা মুজাম্মেলের বাবা আবদুল কাদের সওদাগর, বড় ভাই আবদুল আজিজ, ব্যবসায়ী নুরুল আবসার প্রমুখ।
গল্পের বই ‘গুনিন’ : আফসার ব্রাদার্স প্রকাশ করেছে মো. সাইফুর রহমানের প্রথম গল্পের বই ‘গুনিন’। এতে মোট ২৩টি গল্প রয়েছে। রহস্য, থ্রিলার, রোমান্স, ট্র্যাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক ধাঁচের গল্পও আছে। লেখক বললেন, ‘বইটির প্রতিটি গল্প জীবনঘনিষ্ঠ। প্রতিটি চরিত্র যেন আমাদের চারপাশের চরিত্রের প্রতিচ্ছবি কিংবা আমরা নিজেরাই।’
সাইফুর রহমান বর্তমানে উপকমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামে।
মন্তব্য