অভিনয়ের ব্যস্ততা তাঁর সব সময়ই ছিল। ছিল না শুধু তারকাখ্যাতি। সেটাও পেলেন ওটিটির কল্যাণে। এমন সুসময় আগে কখনোই আসেনি শ্যামল মাওলার ক্যারিয়ারে। লিখেছেন মীর রাকিব হাসান
মঞ্চ থেকে টেলিভিশন—অভিনয়ে আছেন শৈশব থেকেই। গত ১০ বছরে টেলিভিশন নাটকের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা। প্রশংসিত টিভি নাটকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ‘আস্থা’, ‘সিনেমাওয়ালা’, ‘বাবুই পাখির বাসা’, ‘বারান্দায় রৌদ্দুর’, ‘জীবন সঙ্গী’, ‘স্বপ্ন দেখি আবারো’, ‘কাকতাড়ুয়া’, ‘লিফলেট’, ‘মাধবীলতা’র মতো তাঁর অনেক জনপ্রিয় নাটকের নামই নেওয়া যায়। তবে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব, আফরান নিশোদের মতো আলোচনায় ছিলেন না কখনোই। ওয়েব প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে অবশেষে সামনের কাতারে এলেন শ্যামল মাওলা। আলোচিত প্রায় সব ওয়েব কনটেন্টের সঙ্গী শ্যামল। পরিচালকরা তাঁকে ছাড়া যেন ওয়েব কনটেন্ট ভাবতেই পারছেন না। শ্যামলও জানেন বিষয়টা। বলেন, ‘কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়। আপন মনে অভিনয়টাই করে যেতে চাই। কতভাবেই তো আলোচনায় আসা যায়, একটা বেফাঁস মন্তব্য করেও অনেকে আলোচনায় আসতে পারেন। কিন্তু আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন অভিনয়ের প্রতি কতটা মনোযোগী আমি। তার সুফলই হয়তো এখন পাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে যাঁরা অভিনয়কে ধ্যান-জ্ঞান করে নিয়েছেন, তাঁরা এখন ওয়েবেই প্রশংসিত হচ্ছেন।’
২০১৮ তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। বাংলাদেশে ওটিটির বাজার তখনো রমরমা হয়নি। তবে ইউটিউবের দাপট ছিল। এত এত কনটেন্টের ভিড়ে শ্যামল খুঁজছিলেন মনের মতো চরিত্র। মিলে যায় ‘ক্যাশ’। ‘তাকদীর’খ্যাত পরিচালক সৈয়দ আহমদ শাওকীর থ্রিলার ড্রামাটি মুক্তি পায় আইফ্লিক্সে। শ্যামলকে নতুনভাবে আবিষ্কার করল দর্শক। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টার নাটক তো দুই দিনে শুট করি আমরা। এটির শুটিং করেছিলাম পাঁচ দিন। আমার অভিনয়জীবনের অন্যতম সেরা কাজ এটি। তখন খুব বেশি দর্শক এটা দেখেননি। তবে যাঁরা দেখেছেন সবাই মুগ্ধ হয়েছেন। তখনই বুঝেছি যত্ন নিয়ে বানালে ওয়েব কনটেন্ট দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলাদা একটা জায়গা পাব।’
পরের বছরই হইচই-এর জন্য করলেন ‘মানি হানি’। ঢাকায় ঘটে যাওয়া একটি দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি নিয়ে সিরিজটি! তানিম নূর এবং কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের যৌথ পরিচালনায় সিরিজটি দুই বাংলাতেই আলোচিত। জনপ্রিয় সিরিজটির দ্বিতীয় সিজনের শুটিং করছেন এখন। মুক্তি পাবে রোজার ঈদে।
এরপর বিঞ্জ অ্যাপের ‘সদরঘাটের টাইগার’ ও ‘বুমেরাং’ নিয়ে পড়লেন বিতর্কে। অশ্লীলতার অভিযোগে কান দিলেন না শ্যামল। অভিনয়টা ঠিকঠাক করেছেন, এটাই তাঁর তৃপ্তির জায়গা। ওয়েব কনটেন্ট মানেই শ্যামল, এই যখন পরিস্থিতি তখন আবরার আতহার জি-ফাইভের জন্য বানালেন ‘মাইনকার চিপায়’, আশফাক নিপুণ হইচই-এর জন্য বানালেন ‘কষ্টনীড়’। যথারীতি প্রশংসিত হলেন শ্যামল। শুটিং শেষ করলেন জি-ফাইভের সিরিজ ‘কন্ট্রাক্ট’-এর। তারকাবহুল সিরিজে শ্যামল আছেন গোয়েন্দা চরিত্রে। ওয়েবের দাপটে শ্যামলের দিন যে বদলেছে তার প্রমাণ তৌকীর আহমেদের ছবি ‘স্ফুলিঙ্গ’। আগেও সিনেমা করেছেন শ্যামল—‘গেরিলা’ ও ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’। তবে প্রধান চরিত্র পেলেন তৌকীরের এই ছবিতে। পরীমণি, জাকিয়া বারী মম ও রওনক হাসান আছেন তাঁর সঙ্গে। মার্চেই মুক্তি পাবে ছবিটি। মার্চের দিকে তাকিয়ে আছেন অভিনেতা, কারণ মার্চে আসবে ‘কন্ট্রাক্ট’ ও তানিম নূরের নাম ঠিক না হওয়া একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ধারণ করেছিলেন অভিনেতা আবুল খায়ের, সেই ঘটনা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে স্বল্পদৈর্ঘ্য থ্রিলারটি। এটি নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইলেন না। তবে স্বীকার করে নিলেন, ক্যারিয়ারে এমন সুসময় আগে কখনো আসেনি।
মন্তব্য