সত্তরের নির্বাচনের খবর প্রচারের সময় টিভি স্টুডিওতে নির্বাহী প্রযোজক মোস্তফা কামাল সৈয়দ
আমার সঙ্গে অনেক পুরনো সম্পর্ক আমার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর মেয়ে রেহনুমার বিয়ের সূত্রে। পরে আত্মীয়তাও হয়েছে। তখন কামাল ভাইকে বলেছিলাম, আপনি এখন আমার ভাইয়ের শ্বশুর, সম্পর্কটা তো বদলে গেল। কামাল ভাই বললেন—না না, আমাদের সম্পর্ক আগে যেমন ছিল তেমনই থাকবে। যথারীতি আমরা একে অপরকে ভাই বলেই সম্বোধন করতাম।
কামাল ভাই অন্য রকম মানুষ ছিলেন। ভীষণ রকম সময় ও স্বাস্থ্য সচেতন, গোছানো, কর্মঠ একজন মানুষ। চুপচাপ স্বভাব। পর্দার আড়ালে থাকতেই পছন্দ করতেন। দেশ টিভিতে আমার অনুষ্ঠানে তাঁকে আনার চেষ্টা করেছি বহুবার, রাজি হননি। স্বাধীনতার পর পর, আমার অভিনয় ক্যারিয়ারের একেবারে গোড়াতেই তাঁর প্রযোজিত নাটকে অভিনয় করেছি। নাটকটির নাম কী ছিল, মনে করতে পারছি না। পরে তাঁর প্রযোজনায় বিটিভির অনেক নাটকই করেছি। এই মুহূর্তে বিশেষভাবে মনে পড়ছে ‘কূল নাই কিনার নাই’-এর কথা। কাজী আবদুল ওদুদের উপন্যাস অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের চিত্রনাট্যে এই নাটকে আমার সঙ্গে ছিলেন আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। এ নাটকটি জাপানের জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনএইচকেতে জাপানি ভাষায় বেশ কয়েকবার প্রচারিত হয়েছিল।
অভিনয়ের ব্যাপারে আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন কামাল ভাই। নিজস্বতা তৈরির যে পরামর্শটা তিনি দিয়েছেন সেটা সারা জীবন কাজে দিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, সবাই তো প্রেমের নাটকে জুটি হয়ে কাজ করে, আপনি এই ট্র্যাকে ঢুকবেন না, বিভিন্ন ধরনের চরিত্র করবেন। আমার ক্যারিয়ারে যত আলোচিত নাটক বেশির ভাগই বিটিভির, প্যাকেজ নাটক শুরু হওয়ার পর তেমন অভিনয় করিনি। বিটিভিতেই আমি চোর, জমিদার, মাস্তান, বাড়ির চাকরের চরিত্র করেছি। তাঁর সেই পরামর্শ মাথায় রেখেই ব্যতিক্রমী এই চরিত্রগুলো করেছি। চোর, মাস্তান বা চাকরের চরিত্র করতে অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহ করেছেন। একমাত্র কামাল ভাইই উৎসাহ দিয়ে গেছেন। শুধু আমাকেই নয়, মিডিয়ার অনেক তরুণ নির্মাতা ও শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি।
একজন ভালো মানুষ এবং একজন সৃজনশীল মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। যেভাবে গেলেন, সেটা মেনে নেওয়ার মতো না। স্বাভাবিকভাবেই কষ্ট পাচ্ছি খুব। শুধু আত্মীয় বলেই নয়, তিনি মিডিয়ার একজন আইকনিক মানুষ ছিলেন, সে কারণেই কষ্ট পাচ্ছি বেশি।
অনুলিখন : শুদ্ধ তিয়াস
মন্তব্য