দুই যুগ আগে যে সেতুর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, সেই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ জেলা রাজধানী ঢাকা এবং বাকি অংশের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হলো। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে প্রতিবছর .৮-৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে। ছবি : কালের কণ্ঠ
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে চাপ বাড়বে বেনাপোল বন্দরে। কিন্তু সেই চাপ সামাল দিতে কি দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর বেনাপোল প্রস্তুত? যদি তা না হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। সে কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, সমস্যা সমাধানে হাতে নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা।
বিজ্ঞাপন
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি খায়রুজ্জামান মধু পদ্মা সেতুকে তাঁদের জন্য সৌভাগ্য হিসেবে দাবি করলেও অভিযোগ করেছেন অনেক। তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে হয়তো আমাদের সামনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ জায়গা সংকটের কারণে আমদানি করা মাল লোড-আনলোড করতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। রয়েছে উপকরণেরও অভাব। বিশেষ করে ক্রেন-ফর্কলিফটের যথেষ্ট অভাব আছে। ’
আমদানিকারক কপোতাক্ষ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মশিয়ার রহমানের অভিযোগ আরো গুরুতর। তাঁর দাবি, যাঁরা এই পোর্ট দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন তাঁরা বর্তমানে খুবই নির্যাতিত, অবহেলিত। বর্তমানে ভারত থেকে এক গাড়ি পণ্য বেনাপোল বন্দরে আসতে এক মাসেরও বেশি সময় লাগছে। এক কনসাইনমেন্ট পণ্য ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করায় আমদানিকারকদের এক মাসের অতিরিক্ত গুনতে হয় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার রুপি। বাড়তি এই খরচ পরবর্তী সময়ে পণ্যের ওপর পড়ে ভোক্তার কাঁধে গড়ায়।
তিনি আরো বলেন, বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে এক গাড়ি পণ্য আনলোড হতে সময় লাগে সাত থেকে ১০ দিন। ট্রাকগুলো এক শেড থেকে আরেক শেডে ঘুরে বেড়ায়। এতে দীর্ঘদিন ট্রাকে পণ্য থাকার কারণে মালের গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, সোনামসজিদ বা বাংলাবান্ধায় যেসব পণ্য চালান আসে সেগুলো অনেক ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছায়। অন্যদিকে বেনাপোল হলো ভারতের কোলকাতায় প্রবেশদ্বার এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। সে কারণে ব্যবসায়ীরা চাইবেন বেনাপোল দিয়ে অধিক পণ্য পাঠাতে। কিন্তু বেনাপোলে তো অবকাঠামো বলতে কিছু নেই। এর আমূল উন্নতি ছাড়া পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়া যাবে না।
বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেনাপোল বন্দরে ঘটেনি। প্রতিদিন এক হাজার ট্রাক পণ্য ভারত থেকে আমদানি করার সুযোগ থাকলেও স্থান সংকটের কারণে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য আসে বন্দরে। পদ্মা সেতুর সুফল যদি আনতে হয়, বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ করতে হবে, সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর করতে হবে।
বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ কিছুটা সঠিক বলে মনে করেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমানও। তিনি বলেন, বন্দরের কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। বন্দরে এখন বছরে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা আছে। কিন্তু বছরে এক লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পণ্য লোড-আনলোড হচ্ছে।