<p>আজকাল অনেকেই ঘরসজ্জায় গ্রানাইট ব্যবহার করলেও মধ্যবিত্তের ভরসার জায়গাজুড়ে আছে টাইলস। কারণ গ্রানাইটের বর্গফুটের দাম ৩০০ টাকার ওপরে আর টালসের দাম শুরু হয় ৬৬ টাকা থেকে। অনেককে বলতে শোনা যায়, ব্যক্তিত্বের প্রকাশে যেমন সঠিক পোশাক নির্বাচন প্রয়োজন, তেমনি মেঝের সঠিক আচ্ছাদন নির্বাচনও সমান গুরুত্বপূর্ণ? তবে সার্বিক বিবেচনায় দেশি টাইলসের বাজার বাড়ছে।</p> <p>বাজার ঘুরে জানা যায়, স্থানীয় টাইলসের বাজারের ৬০ শতাংশ দখলে আছে দেশীয় ব্র্যান্ডের আর ৪০ শতাংশ বিদেশিদের। দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে ডিবিএল, আকিজ, গ্রেট ওয়াল, মীর, সিভিসি, আরএকে, খাদিমসহ প্রায় ৩০টি কম্পানি টাইলস তৈরি করে। কম্পানিভেদে টাইলসের দামের ভিন্নতা রয়েছে। দেশে উৎপাদিত টাইলসের দাম ৬৬ থেকে শুরু করে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। ডিবিএল, আরএকে, মীর ব্র্যান্ডের টাইলসের চাহিদা বেশি।</p> <p>ঢাকায় টাইলস ও গ্রানাইটের সবচেয়ে বড় বাজার বাংলামোটরে। সেখানে প্রায় এক হাজার সিরামিক ও টাইলসের দোকান আছে। বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে ৩০টি কম্পানি টাইলস উৎপাদন করে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। বর্তমান হোমোজিনিয়াস টাইলসের চাহিদা বেশি। হাসপাতাল, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে হোমোজিনিয়াস টাইলস ব্যবহার করা হয়। সব ধরনের মেঝেতে হোমোজিনিয়াস টাইলস ব্যবহার করা যায়। এটি এক রঙের মধ্যে হয়, তবে টেকসই।</p> <p>কথা হয় টাইলস কিনতে আসা রুবিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি রাজধানীর বাংলামোটরে এসেছেন নতুন ফ্ল্যাটের মেঝের জন্য টাইলস পছন্দ করতে। তবে টাইলসের বদলে গ্রানাইট পছন্দ হয় রুবিনার। সেখানে মার্বেল প্লাস দোকানে সাদার মধ্যে কালো রঙের গ্রানাইট অর্ডার করেন তিনি। এক হাজার ২৯০ বর্গফুটের বাসার জন্য চার লাখ ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। দাম বেশি হলেও রুবিনা তাঁর বাসা সাজানোর জন্য গ্রানাইটই পছন্দ করেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই গ্রানাইটের সুবিধা হলো রং নষ্ট হয় না। শৌখিনতা ও বিলাসিতার জন্য গ্রানাইট আমার কাছে ভালোই লাগে। দাম বেশি হলেও জিনিস সুন্দর।’</p> <p>মেঝের গ্রানাইটে রং অটল থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে মার্বেল প্লাস দোকানের বিক্রয় কর্মকর্তা রুবেল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকৃতি থেকে সরাসরি পাথর সংগ্রহ করে গ্রানাইট তৈরি করা হয়। গ্রানাইটে স্ক্র্যাচ কিংবা দাগ বসে না, বছর পার হলেও নতুন ও ঝকঝকে থাকে। তবে দাম অনেক বেশি হওয়ায় এর মূল ক্রেতা উচ্চবিত্তরা।’</p> <p>দেশের সিরামিকস ব্র্যান্ডগুলো গ্রানাইট তৈরি করে না। এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে বাংলামোটরের বিক্রেতারা চীন, ভারত ও তুরস্ক থেকে এসব গ্রানাইট আমদানি করেন। বিক্রেতারা জানান, ৫৫০ থেকে শুরু করে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বর্গফুটে গ্রানাইট বিক্রি করেন। টেকসই ও অভিজাত হিসেবে অনেকেই টাইলসের বদলে গ্রানাইট কেনেন। বর্তমানে মসজিদ ও মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে এসব গ্রানাইট ব্যবহার করা হয়। </p> <p>হাউস অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) প্রিন্সিপাল রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার মো. শাখাওয়াৎ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রানাইট শক্ত এবং এটি ব্যবহার করলে ইন্টেরিয়রের ফিটিংসও ভালো হয়। সব দিক থেকে গ্রানাইট উপযুক্ত। আগে সিরামিকস টাইলস বেশি ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে হোমোজিনিয়াস টাইলস বেশি ব্যবহার করা হয়। এর মানও ভালো।’</p> <p>ডিবিএলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সেলস আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২৪ সালের পর সিরামিকস খাত দ্বিতীয় রপ্তানি খাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ডিবিএল বর্তমানে এক কোটি বর্গফুট টাইলস বিক্রি করে। জুলাই নাগাদ এক কোটি ৩০ লাখ বর্গফুট উৎপাদন করা হবে।’</p> <p>বাংলামোটরের একাধিক টাইলস বিক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কভিডের পর টাইলসের ব্যবসা কমেছে। আবাসন খাতের কাজ শুরু হওয়ার পর টাইলসের বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে আগের অবস্থানে ফিরতে সময় লাগবে।’</p>