চতুর্থ প্রজন্মের গতিশীল প্রতিষ্ঠান এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ব্যাংকটি প্রান্তিক মানুষের মাঝে সেবা ছড়াচ্ছে। একেবারে হস্ত, কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় মূলধন জোগান দিচ্ছে। সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় তুলে ধরেন এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. মুখতার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এসএমই খাতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসএমই খাতের নতুন নতুন ক্ষেত্রে অর্থায়ন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (সিএমএসএমই) চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৯৬৬ জন উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়েছি। তাঁরা সর্বমোট ঋণ সুবিধা পেয়েছেন দুই হাজার ৯০০ কেটি টাকা। এটি আমাদের প্রদত্ত মোট ঋণের ৩৯ শতাংশ। ভবিষ্যতে আমরা এটি আরো বাড়াতে চাই।’
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো গ্রামে শাখা খুলতে চায় না। এমন প্রেক্ষাপটে গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কিভাবে ঋণ পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে নতুন শাখা খুলে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী গ্রামীণ ও শহুরে শাখার অনুপাত ১ঃ১। অর্থাৎ একটি শাখা শহরে খুললে আরেকটি গ্রামে খুলতেই হবে। আমাদের ব্যাংকের ৮৩টি শাখার মধ্যে ৪১টি গ্রামীণ শাখা। একটি আছে নারীদের জন্য বিশেষ শাখা। এর পাশাপাশি আমাদের ৩৯৬টি উপশাখা রয়েছে, যার অধিকাংশ একেবারে গ্রামীণ এলাকায়। গ্রামীণ শাখাগুলোর মাধ্যমে একেবারে কুটির থেকে শুরু করে অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রশিল্পে অর্থায়ন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক ও খাতভিত্তিক যেসব শিল্প ক্লাস্টার রয়েছে, সেখানে আমরা অর্থায়ন করছি। শাড়ি, লুঙ্গিসহ তাঁতনির্ভর হস্তশিল্পকে সহায়তা করতে আমরা টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে শাখা খুলেছি। অন্য এলাকায়ও শিল্পের কাছাকাছি জায়গায় উপশাখা খুলে সেবা দিচ্ছি। ক্ষুদ্র্র উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন খুব কাছ থেকে মেটাতে আমরা এনজিওর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করছি। এতে আমাদের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় ছোট ছোট শিল্প খাত স্বাবলম্বী হতে পারছে। আবার নতুন নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে।’
প্রণোদনার ঋণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না—এমন অভিযোগের বিষয়ে মো. মুখতার হোসেন বলেন, ‘প্রণোদনা বাস্তবায়নের কাজটি ব্যাংকগুলো ভালোভাবেই করছে। তবে ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণ দিতে সময় লাগছে। এর মূল কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় আগে বলা ছিল, উৎপাদনশীল উপখাতে ঋণ বেশি দিতে হবে। কিন্তু এই খাতের ৮০ শতাংশ উদ্যোক্তা ট্রেড উপখাতের। এ জন্য ব্যাংক চাইলেও এই খাতে ঋণ বিতরণ আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পায়নি। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রণোদনার ঋণের টাকা বিতরণ করা সম্ভব হবে। ক্ষুদ্র খাতে আমাদের বরাদ্দ ছিল ১৩০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে আমরা ৬৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছি।’
ক্ষুদ্রঋণের নিশ্চয়তা প্রদানে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটির প্রয়োজন হলো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এনআরবিসির এমডি বলেন, ‘ব্যাংকের অর্থায়নে একটি পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নিয়ম-নীতি আবশ্যকভাবে পরিপালন করতে হয়। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র খাতের উদ্যোক্তারা সিস্টেমেটিক উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন না। ব্যাংকঋণের জন্য যেসব তথ্য ও কাগজপত্র প্রয়োজন, তা-ও সঠিকভাবে দিতে পারেন না। সবচেয়ে বড় বিষয়, ঋণের জন্য জামানত দেওয়ার মতো অবস্থা অনেক উদ্যোক্তাদের থাকে না। ঋণঝুঁকি নিয়ম-নীতি পরিপালন করার স্বার্থে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া অনেক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তাই ক্ষুুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কিমটি চালু করেছে। এতে ব্যাংক ও উদ্যোক্তা উভয়ের জন্য ভালো হয়েছে।’
ক্ষুুদ্রশিল্পে ঋণ বাড়াতে সামনের দিনের পরিকল্পনা নিয়ে এই অভিজ্ঞ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রান্তিক পর্যায় থেকে উন্নয়ন চাই। এ জন্য আমরা উপশাখার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেছি এবং আমরাই সবচেয়ে বেশি উপশাখা চালু করেছি। আমরা কাজ করছি আরো নিবিড়ভাবে কোন পদ্ধতিতে ক্ষুুদ্রশিল্পে অর্থায়ন বাড়ানো যায়। প্রথাগত ব্যাংকিংয়ে আমরা ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণ দিয়ে যাচ্ছি। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঋণ দেওয়ার হার আরো বাড়াতে চাই। প্রত্যেক এলাকার যেসব শিল্প রয়েছে, আমরা তাদের প্রয়োজন মোতাবেক এবং তারা যেভাবে অভ্যস্ত সেভাবে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে আমরা ব্যবসা করতে চাই না, তাদেরকে গড়ে তুলতে চাই যেন গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। অর্থনীতি চাঙ্গা হলে সেটি সবার জন্য কল্যাণকর হবে।’
মন্তব্য