চট্টগ্রামে এটিআর ফুডসের কারখানায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হচ্ছে হিমায়িত খাবার
কর্মব্যস্ততা যতই বাড়ছে দেশে প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাবারের চাহিদা ততই বাড়ছে। রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে এরই মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই খাবারের চাহিদা চট্টগ্রামে বাড়লেও সেই পরিমাণ জনপ্রিয়তা এখনো পায়নি। এর পরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের পটিয়ায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারখানা স্থাপন করে ‘এটিআর ফুডস’। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে এটি প্রথম এবং একমাত্র কারখানা। প্রতিষ্ঠানটি এখন বড় শিল্প গ্রুপগুলোর উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান পোক্ত করেছে; পণ্য বিক্রিতে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠানটি এখন দ্বিতীয়। পাশাপাশি মানসম্মত পণ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তাদের সেবা বিস্তৃত করেছে।
এটিআর ফুডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, ‘আমাদের পণ্যের প্রচারণা নেই; কিন্তু মানসম্মত এবং হালাল খাবার দিয়ে আমরা গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করেছি। চট্টগ্রামে আমরাই প্রথম প্রক্রিয়াজাত কারখানা করেছি এবং চট্টগ্রামে পণ্য বিক্রিতে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। আমাদের কাছে ২৭ ধরনের খাবার আছে; সময়ের সঙ্গে খাবারে স্বাদে বৈচিত্র্য এনে আমরা ধীরে ধীরে বাজার সম্প্রসারণ করছি। গ্রাহকদের চাহিদার কারণেই এটি করা সম্ভব হচ্ছে।’
দুই প্রজন্মের সফল উদ্যোগ এটি। বাবা নুরুল আলমের ব্যবসার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং ছেলে তৌহিদুল আলমের নতুন প্রজন্মের ব্যবসার আইডিয়া মিলে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। এটিআর ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াজাত খাবারের বাজার ধরতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। রাজধানীর মানুষ বিভিন্ন কারণে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও চট্টগ্রামের গ্রাহক এটাতে আগ্রহী হচ্ছিল না। বরাবরই চট্টগ্রামবাসী বাজার থেকে মুরগি কিনে সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জবাই করে বাসায় নিয়ে রান্না করে খেতে অভ্যস্ত। এখন ধীরে ধীরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্রাহক বাড়লেও রাজধানীর প্রবৃদ্ধির তুলনায় একেবারে কম।’
চট্টগ্রামে অবস্থান করলেও আলম পরিবার ২০ বছর আগেই এই খাতে ব্যবসার চিন্তা করেছিল; যা ২০১৩ সালে বাস্তব রূপ পায়। ‘এটিআর ফুডস’ মূলত চিকেন বেইজড বা মুরগি মাংসনির্ভর। সেই সঙ্গে আছে সমুচা, পরোটা, শিঙ্গাড়া, রোল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি। বর্তমানে ২৭ ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরি করছে; এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে চিকেন নাগেটস, পরোটা ও চিকেন গ্রিন সমুচা। চট্টগ্রামের পটিয়ার হুলাইনে যুক্তরাজ্যের ডেইটন কম্পানির কারিগরি প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে সর্বাধুনিক কারখানা। কারখানা থেকে পণ্য পরিবহনের সময় ‘কুল চেইন’ বা তাপমাত্রা নির্ধারণের জন্য রয়েছে বিশেষায়িত ফ্রিজার গাড়ি।
২০১৩ সালে এক লাখ ২০ হাজার ডলারের বিনিয়োগ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ধাপে ধাপে এই বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। কোনো ব্যাংকঋণ ছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে তোলা হয়েছে এই কারখানা। সেই প্রক্রিয়াজাত কারখানায় একেবারে অটোমেটেড পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু সব খাবার। সময়ের সঙ্গে খাবারেও আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। যোগ হয়েছে স্পাইসি বা ঝাল ফ্লেভার। সর্বশেষ যোগ হয়েছে ডায়াবেটিস বা লাল রুটি।
নুরুল আলম বলছেন, ভোগ্য পণ্য আমদানির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এই ব্যবসায় বেশ সুফল দিয়েছে। যেমন গমের কোয়ালিটি দেখেই বুঝতে পারি সেটা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত। এ কারণে আমি নিজ উদ্যোগে ভালো মানের গম সংগ্রহ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তৈরি করছি লাল রুটি। এই রুটি অন্য যেকোনো রুটির চেয়ে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। খুব কম সময়েই সেটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের সব শপিং মলে এখন কাজী, প্রাণ, সিপি, এজি, ব্র্যাকসহ নানা ব্র্যান্ডের হিমায়িত খাবারের দেখা মিলছে। এর মধ্যে এটিআর একটি অবস্থান গড়ে নিয়েছে। তৌহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের মানুষের রুচি বুঝতে পারি; এই কারণে সেভাবেই রেসিপি তৈরি করি। অন্য এলাকায় যখন যাচ্ছি সেই অঞ্চলের মানুষের খাওয়ার স্বাদও আগে জেনে নিচ্ছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে পণ্য তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহে আমরা শতভাগ যত্নবান থাকি। এখানে কোনো ছাড় দিই না; একই সঙ্গে পণ্য তৈরির সময়ও শতভাগ মান অক্ষুণ্ন রাখি। আমরা দ্রুত বাজার দখল করতে চাই না। মানুষের আস্থা ধরে রেখেই এগোতে চাই।’
মন্তব্য