সিলেটের জিন্দাবাজারে হিমায়িত খাদ্য নিচ্ছেন এক ক্রেতা। ছবি : আশকার আমিন রাব্বি
উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের মাঝেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফ্রোজেন ফুড বা হিমায়িত খাবার। গত কয়েক বছরে সিলেটে এই বাজার বাড়ছে। নামিদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি হোম মেইড ফ্রোজেন ফুডেরও ভালো চাহিদা তৈরি হয়েছে।
সিলেটে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ফ্রোজেন পরোটার। বাকিগুলোর মধ্যে শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন আইটেম, সসেজের ভালো বাজার আছে। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় আবার ফ্রোজেন ফুডের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে লকডাউনের সময়ের সুবিধা নিয়েছেন হোম মেইড ফ্রোজেন ফুডের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
সিলেটের নামি ডিপার্টমেন্ট শপ থেকে শুরু করে পাড়ার দোকানের ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন শ্রেণির ভোক্তার সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার লকডাউনের সময় রেস্টুরেন্ট ও স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় ঘরবন্দি মানুষের অনেকে খাবারের বৈচিত্র্য আনতে বিকল্প হিসেবে ফ্রোজেন ফুড বা প্রস্তুত খাবার বেছে নিয়েছে। বাইরের খাবারে যারা এখনো স্বস্তিবোধ করে না তারা ফ্রোজেন ফুডই হাতে তুলে নেয়। এ ক্ষেত্রে নামিদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে ওঠা ছোট পরিসরের হোম মেইড ফ্রোজেন ফুডের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কেনাকাটা করছে অনেকে।
নগরের লিচুবাগান এলাকার সোহাস স্টোরের পরিচালক কবির আহমদ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ফ্রোজেন ফুডের ব্যবহার বেড়েছে। মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। কম সময়ে সহজে এটি বানিয়ে ফেলা যায় বলে এখন অনেকে নিয়মিত খাচ্ছে।’ গত বছরখানেক ধরে তাঁর বিক্রি অনেক বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে করোনার কারণে লকডাউন হওয়ার পর থেকেই এটির চাহিদা বেড়েছে। আমরা আশপাশে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও করেছি।’
নগরের জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ রহিমা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পরিবারে অনেক আগে থেকেই ফ্রোজেন ফুডের প্রচলন রয়েছে। নিজেদের জন্য পরোটা নিয়মিত কেনা হয়। বিশেষ করে হঠাৎ মেহমান এলে যাতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয় সে জন্য ফ্রিজে এসব খাবার রাখি সব সময়।’
নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাকিল মজুমদার বলেন, ‘নগরায়ণের প্রভাবে সবার ব্যস্ততা বেড়েছে। সিলেটে আগে বাসাবাড়িতে পরোটা, বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানানোর প্রচলন ছিল, এখন তাতে পরিবর্তন এসেছে। সময় কম তাই ফ্রোজেন ফুডে নির্ভরতা বেড়েছে। তা ছাড়া আমরা যারা বাইরে খেয়ে অভ্যস্ত লকডাউন তাঁদের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল। তখন আমি নিজেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রোজেন ফুড আর স্থানীয় বিভিন্ন হোম মেইড ফ্রোজেন ফুড খেয়েছি।’
স্কুলশিক্ষিকা সালমা সিদ্দিকা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাকে খুব সকালে উঠে স্কুলে যেতে হয়। এত সকালে উঠে নাশতা তৈরি করা বেশ ঝামেলাপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ। সহজ সমাধান বলতে পারেন ফ্রোজেন ফুড। তা ছাড়া বাসায় হঠাৎ মেহমান এলে সহজে তাঁদের আপ্যায়ন করে ফেলা যায়।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি চলে গোল্ডেন হারভেস্ট, কাজী ফার্মস ঝটপট, একলেয়ারের ফ্রোজেন ফুড।
বনফুল অ্যান্ড কোং মজুমদারি শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামাল বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর থেকে সিলেটে ফ্রোজেন ফুডের ব্যবহার প্রতিদিনই বাড়ছে বলা যায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর অন্তত ৫০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে ভোক্তার সংখ্যাও তুলনামূলক বেড়েছে।’ তাঁর এখানে ফ্রোজেন পরোটাই বেশি চলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরোটার পাশাপাশি শিঙাড়া ও সমুচারও চাহিদা রয়েছে।’
মন্তব্য