<p>৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা। তহবিলে পর্যাপ্ত টাকা থাকার পরও তিন বছরেও এই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দ্বিতীয় দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের মার্চে কিশোরগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জ হয়ে চামড়াঘাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩২ ফুটে প্রশস্তকরণ ও ছয়না থেকে চৌদ্দশত বাজার পর্যন্ত সাত কিলোমিটারের নতুন একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাস্তা নির্মাণের জন্য ১৬০ কোটি আর ৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ খাতে রাখা হয় ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্ব পায় কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদপ্তর।</p> <p>কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট সড়কে আগে অধিগ্রহণ করা প্রায় ১০ কিলোমিটার জায়গায় রাস্তা প্রশস্তের কাজ প্রায় শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখানে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ মোটামুটি একটা পর্যায়ে গেছে। তবে করিমগঞ্জ থেকে চামড়াঘাট পর্যন্ত বাকি ১০ কিলোমিটারের কাজ ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আটকে আছে। অন্যদিকে  ছয়না থেকে চৌদ্দশত বাজার পর্যন্ত নতুন সাত কিলোমিটারের সংযোগ সড়কটিতে মাত্র এক কিলোমিটারের মতো জায়গায় কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। বাকি ছয় কিলোমিটারে এক কোদাল মাটিও ফেলতে পারেনি ঠিকাদার।</p> <p>কিশোরগঞ্জ অংশের একরামপুর ও সতাল এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। তা ছাড়া করিমগঞ্জ থেকে চামড়াঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের জমিও বাকি আছে অধিগ্রহণের। তাই ভূমি মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা ছাড়া তাঁদের জায়গায় কাজ করতে দিচ্ছেন না। একই কারণে ছয়না-চৌদ্দশত বাজার পর্যন্ত নতুন সড়কটির কাজও বন্ধ রয়েছে।</p> <p>চামড়াঘাট ও ছয়নার কয়েকজন ভূমি মালিকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে না পেলে তাঁরা ভূমি ছাড়বেন না। কারণ এসব নিয়ে তাঁদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।</p> <p>ঠিকাদার তাহের ব্রাদার্স লিমিটেডের প্রকৌশলী জয় নাগ জানান, এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছেন। ভূমি হাতে না পাওয়ায় কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘কাজ বন্ধ থাকায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাকি কাজ শেষ করতে আমাদের বেগ পেতে হবে। বিষয়গুলো জানিয়ে গত সপ্তাহে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ভূমি অধিগ্রহণ কাজের সঙ্গে যুক্ত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভূমি হাতে পেয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। কাজ শুরু হয়ে গেছে আগে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ একটি জটিল কাজ। এখানে পাই পাই হিসাবের ব্যাপার আছে। কারা জমির প্রকৃত মালিক তাদের চিহ্নিত করতে হয়। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ভূমি অফিস ছাড়াও গণপূর্ত, কৃষি, মৎস্যসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরের সহযোগিতার দরকার পড়ে। একটু এদিক-ওদিক হলেই বিপদ। তাই এ কাজে একটু সময় লাগা স্বাভাবিক। তবে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা বসে নেই, তারা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।</p> <p>কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, ‘প্রকল্পের তহবিলে টাকার কোনো সমস্যা নেই। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুকূলে টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। ভূমি অধিগ্রহণ হয়ে গেলে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব।’ তিনি আরো বলেন, ‘কাজের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আগের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। তার পরও কাজ একেবারে বন্ধ নেই। লোকজনকে বুঝিয়ে কিছু জায়গায় কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’</p>