রাজশাহীতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত) ৩৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৩৯.৭৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজশাহীকে সবুজ থেকে লাল (রেড) অঞ্চল ঘোষণা করেছে। এত কিছুর পরও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।
বিজ্ঞাপন
নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী যাত্রীরা বাসে ওঠার পরে মাস্ক পরছে। কিন্তু বাসের জন্য মাস্ক ছাড়া অপেক্ষা করছে শত শত যাত্রী। বাসস্ট্যান্ডের আশপাশের দোকানগুলোর সামনেও মানুষের ভিড়। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নেই।
জানতে চাইলে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের যাত্রী মাইনুল হাসান বলেন, ‘মাস্ক পরতে মনে থাকে না। তাই তেমন পরা হয় না। তবে বাসে ওঠার পরে পরব। ’
দেশ ট্রাভেলসের যাত্রী দিলারা পারভীন অপেক্ষা করছিলেন ঢাকা যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমি মাস্ক পরেছি। কিন্তু অন্যদের মধ্যে বেশির ভাগই পরেনি। তাহলে করোনা রোধ করবেন কিভাবে? মানুষের মধ্যে এত কিছুর পরও সচেতনতা আসেনি। আগে সচেতনতা দরকার। ’
একতা পরিবহনের চালক মামুন বলেন, ‘আমাদের পরিবহন সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছে। এ জন্য যাদের করোনার টিকা দেওয়া নেই, তাদের আমরা গাড়িতে উঠাচ্ছি না। তবে গাড়িতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। যদিও অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ’
এমপি সাফারি পরিবহনের টিকিট মাস্টার ডাবলু বলেন, ‘অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখা সম্ভব নয়। তবে মাস্ক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে। বাইরে থেকে মাস্কহীন অবস্থায় এলেও বাসে ওঠার পরে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। ’
রাজশাহী রেলগেট এলাকার অটোরিকশাচালক হাদিসুর রহমান বলেন, ‘আমি মাস্ক পরে থাকছি। তবে অনেক যাত্রীই উঠছে মাস্ক ছাড়া। আমরা ছোট গাড়ি চালাই। মাস্ক পরতে বললে অনেকে গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছে। তাই এখন আর কাউকে বলছি না মাস্ক পরার কথা। ’
রাজশাহীর সাহেববাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, ‘দোকানে মাস্ক পরেই ব্যবসা করছি। তবে বেশির ভাগ ক্রেতা আসছেন মাস্ক ছাড়া। এখন তাঁদের দোকানে ঢুকতে না দিলে তো আর ব্যবসা হবে না। তবে কেউ মাস্ক চাইলে আমরা ফ্রি দিচ্ছি। তাও মানুষ মাস্ক পড়ুক। কিন্তু কতজনকে ফ্রি দেব, কতজনকে বোঝাব আমরা?’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাইদ বলেন, ‘করোনার হার যে হারে বাড়ছে, তাতে আমরা চিন্তিত। কখন না আবার মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। এর জন্য মানুষকে দ্রুত সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। ’
উল্লেখ্য, গত বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহীতে করোনায় মৃত্যুর হার ছিল সর্বোচ্চ। আগস্টে প্রতিদিন রাজশাহী হাসপাতালে গড়ে ১৬ জন রোগী মারা গেছে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে। এমনকি এক দিনে ২৭ রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। পাশাপাশি বেড়ে যায় সংক্রমণের হার। রাজশাহীতে এক দিনে সংক্রমণের হার ৫০ ভাগের ওপরে গিয়েও ঠেকে। তবে সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার।