<p>রাজশাহীর ঘরে ঘরে যেন জ্বর-সর্দি ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যাও। গত এক সপ্তাহের হিসেবে জেলায় গড়ে প্রতিদিন ৩৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৪ জন। এদিকে অতিরিক্ত হারে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে রোগী আসছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ফলে সেখানে রোগীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। ৩০৯টি শয্যার বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৪১০ জন রোগী। ফলে অনেককেই মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহীতে এখনো করোনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী নয় সাধারণ মানুষ। সঠিক সময়ে করোনা পরীক্ষা করানো গেলে আক্রান্তের হার আরো বাড়বে। তবে একেবারে শেষ দিকে এসে পরীক্ষা করানোর কারণে আক্রান্তের হার এখনো কম দেখাচ্ছে।</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2021/June/24-06-2021/kalerkantho-15-2021-06-24-09a.jpg" style="float:left; height:220px; width:300px" />রাজশাহী নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও সাংবাদিক গুলবার আলী জুয়েল জানান, তিন-চার দিন ধরে তাঁর বাড়ির সবাই জ্বর-সর্দি ও মাথা ব্যথায় ভুগছে। কিন্তু আতঙ্কে করোনার পরীক্ষা করাচ্ছে না।</p> <p>রাজশাহীর দুর্গাপুরের মজনু হোসেন বলেন, ‘বাড়ির চার সদস্যের মধ্যে তিনজনই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত। শরীরের ব্যথায় একেকজন উঠতে পারছে না। রান্না করতে হচ্ছে আমাকেই। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করাইনি। পরীক্ষা করালে পাড়ার লোকজনের মধ্যে আরো বেশি আতঙ্ক দেখা দেবে। তাই বাজার থেকে ওষুধ কিনে এনে সবাইকে খাওয়াচ্ছি।’ পুঠিয়ার নন্দনগাছী এলাকার রনজিৎ কুমার বলেন, ‘পাড়ার অনেকেই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত। গ্রামের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন সবাই। কিন্তু অজানা আতঙ্কে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না বেশির ভাগ মানুষ।’</p> <p>এদিকে রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৩৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ১৭ জুন থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ২৫৩ জন। সর্বশেষ গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৫২।</p> <p>রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জ্বর-সর্দি নিয়ে আসা রোগীদের বেশির ভাগই করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যে গ্রামের রোগীই বেশি। ফলে ধরে নিতে হবে, এখন গ্রামের লোকজনই বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এখনো করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ কম। ফলে প্রথম দিকে না করিয়ে একেবারে শেষের দিকে এসে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। এ কারণে আক্রান্তের হার কম মনে হচ্ছে। কিন্তু জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হওয়ার পর পরই রোগীরা করোনা পরীক্ষা করলে এই হার আরো বাড়বে।’</p> <p>রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াজদানী আহমেদ জানান, গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিল ৪১০ জন। তাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগী ছিল ১৮১ জন। আর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিল ১৭৪ জন। হাসপাতালে করোনা রোগীদের চাপ সামলাতে আরো একটি ওয়ার্ডে অক্সিজেন লাইন বসানো হচ্ছে। এটি হলে মোট ১২টি ওয়ার্ড করোনা ইউনিটে পরিণত হবে। এই হাসপাতালের মোট শয্যার সংখ্যা এক হাজার ২০০। এর এক-তৃতীয়াংশই করোনা রোগীদের দখলে। এ অবস্থায় সবাইকে মাস্ক পরার পাশাপাশি সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।</p>