<p>বালুর পাহাড়, তবে কৃত্রিম। এই অবৈধ বালুতে সাধারণ মানুষের জীবন যেমন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, তেমনি ফুলেফেঁপে কোটিপতি হয়ে উঠছে একটি শ্রেণি। সুবিধা নিচ্ছে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। ঘটনাস্থল পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন।</p> <p>সম্প্রতি পদ্মা নদীর তীরবর্তী সাঁড়া ঝাউদিয়া, মাঝদিয়া, ইসলামপাড়া ও চানমারী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, খাবার থালা, ভাতের পাতিল, পানির গ্লাস, বিছানা, বাড়ির উঠান, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, এমনকি মানুষের শরীরে বালু লেগে আছে।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুচ্ছগ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের ঘরে এসে দেখেন, আমরা কিভাবে বসবাস করি, খাবার খাই। পরীক্ষা করে দেখেন, আমাদের পেটে কত বালু। খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন কত শিশুসহ মানুষের চোখে বালুকণা গিয়ে ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির চারদিকে বালুর বিশাল বিশাল স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একটু বাতাস হলেই এলাকায় মরুভূমির মতো বালু ঝড় হয়ে যায়। বালুতে সব ঢেকে যায়। বালুর কারণে এলাকায় সবজি ও ফলের ফলন কমে গেছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বালুর গাড়ির চলাফেরা।’</p> <p>স্থানীয় লোকজন জানায়, সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে পদ্মা নদী থেকে বালু তুলে বিশাল বিশাল স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এই ব্যবসা করছেন এলাকার ২৫-৩০ জন প্রভাবশালী। তাঁরা আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার বা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা গুচ্ছগ্রামের মানুষের নেই।</p> <p>রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) কার্যালয় সূত্র মতে, সাঁড়া ঝাউদিয়া, ইসলামপাড়া, মাঝদিয়া, চানমারী ঘাট এলাকায় রেলওয়ের ১৫০ একর জমি রয়েছে। যার পুরোটা অবৈধভাবে বালু কারবারিরা দখল করেছে। কয়েক দশক আগে কেউ কেউ রেলওয়ে থেকে কিছু জমি কৃষি হিসেবে এককালীন লিজ নিয়েছে। এরপর আর তারা খাজনা দেয়নি।</p> <p>সাঁড়া ঝাউদিয়া ও চানমারী ঘাটের বালু কারবারি জাকির হোসেন বলেন, ‘কিছু ব্যক্তিগত ও কিছু রেলওয়ে জমিতে বালু রেখে ব্যবসা করা হচ্ছে। বাতাস হলে বালু উড়বে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে কিছুটা সমস্যা হতেই পারে। এটা সবাই মেনে নিয়েছে।’</p> <p>বালু কারবারি মারুফ বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের চারপাশে রাখা বালুতে একটু সমস্যা হতেই পারে। নদীর পারে (নিচে) রাখা বালুতে তেমন একটা অসুবিধা হয় না।’ পরিবেশের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে স্বীকার করে তিনি জানান, এই বালুমহালের কোনো ছাড়পত্র নেই। বালু কারবারি সিরাজ আলী বলেন, ‘এখানে ২০-২৫ জন পজিশন দখল করে ব্যবসা করছেন। প্রশাসন, রেলওয়ে ও নেতাদের সঙ্গে সিস্টেম করেই এই ব্যবসা করা হচ্ছে।’</p> <p>পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) মোহাম্মাদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বালু রেখে ব্যবসা করা হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।’</p> <p>ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, ‘ব্যক্তিগত কিংবা রেলওয়ের জমিতে কেউ বালু রেখে ব্যবসা করলে প্রশাসনের কিছুই করার নেই। তবে সেখানে সরকারি খাসজমি রয়েছে, যা বালু কারবারিরা দখল করে রেখেছে। খাসজমি উদ্ধারে জরিপ করার জন্য সাঁড়া ভূমি অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’</p>