আগামীকাল পঞ্চম ধাপে জামালপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে তিনজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সম্পদ ও রাজনৈতিক মজবুত ভিত্তি নিয়ে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।
অন্যদিকে শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। অন্যদিকে সীমিত সামর্থ্য নিয়েই নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি মোস্তফা কামাল।
হলফনামা থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন স্নাতক পাস। ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন তিনি। বিএনপির প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এলএলএম) নিয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন দাওরায়ে হাদিস পাস।
হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন কৃষি খাত থেকে বার্ষিক ৬৯ হাজার ১২০ টাকা ও বাড়িভাড়া থেকে চার লাখ ৪১ হাজার টাকা আয় করছেন। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকা, রাইস মিল, ওষুধ ব্যবসা ও ঠিকাদারি থেকে বার্ষিক আয় ২৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র আমানত রয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা রয়েছে ১০ লাখ। এ ছাড়া ব্যাংকে রয়েছে ৭০ লাখ টাকা। তিনি বিবাহিত হলেও স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ নেই। লাইসেন্স করা একটি পিস্তল ও একটি শটগান রয়েছে বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছে আলী মামুন কৃষি খাত থেকে বার্ষিক ৬১ হাজার টাকা আয় করছেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তাঁর নগদ টাকা আছে ২৯ লাখ দুই হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে পাঁচ লাখ এক হাজার ৮৪৩ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ আছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার খাতে নিজ নামে এক লাখ ১৬ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে রয়েছে ছয় লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে ২৭ লাখ টাকা ুামূল্যের একটি টয়োটা কার।
হলফনামায় মামলার বর্ণনায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন অতীতে ফৌজদারি আইনের মামলায় অভিযুক্ত হননি বলে উল্লেখ করেছেন। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করা হয়েছে। তবে সবগুলো মামলার রায়ে আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুনের বিরুদ্ধে ২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট আটটি মামলা হয়। তবে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া মেয়র পদে অপর প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মোস্তফা কামালের হলফনামা ও আয়-ব্যয়ের বিবরণের অনেক ঘরই ফাঁকা রয়েছে। তাঁর কৃষি ও অকৃষি জমি আছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। হলফনামায় তিনি আয়ের উৎস হিসেবে বাড়িভাড়া, ব্যবসা, ইমামতির বেতনসহ বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন মাত্র এক লাখ ৩৪ হাজার টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে থানা বা আদালতে কখনো মামলা হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এবার মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন উৎসবমুখর পরিবেশে নিজের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপির প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন কোনো নির্বাচনী অফিস খোলেননি। শহরে তাঁর ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোস্টারও তেমন একটা চোখে পড়ে না। এর মধ্যে তিনি সংবাদ সম্মেলনে করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে নির্বাচনী প্রচার থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, জামালপুর পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছে এক লাখ আট হাজার ৭২৭ জন। মেয়র পদে তিনজন ছাড়াও ১২টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও চারটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মন্তব্য