<p>ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত হয়েছে ভূরিভোজ! সকালে দল বেঁধে লিফলেট নিয়ে মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারে নামে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে প্রচার ও মাইকিং। সাউন্ড সিস্টেমে আধুনিক ব্যান্ড ও বাউল গানের সুরে নির্বাচনী প্রচার চালানো হয়। প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকের সঙ্গে মিল রেখে গানের কথাগুলো সাজানো হয়। দল বেঁধে প্রচার করতে গিয়ে পুরুষ ভোটারদের রাতে নির্বাচনী ক্যাম্পে ভূরিভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয়। রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে ভোজ। কখনো আরো বেশি রাত হয়। খাবার মেন্যুতে একেক দিন একেক ধরনের আইটেম রাখা হয়।</p> <p>ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে এভাবেই চলছে মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার। আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ফুলবাড়িয়া পৌরসভায় ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ, ৯টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৬ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।</p> <p>জানা গেছে, ভোটারদের প্রথম ভূরিভোজের আয়োজন করা হয় পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রথমে মুড়ি-ভর্তা দিয়ে শুরু করলেও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে চলছে সবজি ও মাংস দিয়ে ভুনা খিচুড়ি। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডেই চলে ভূরিভোজ। প্রায় প্রত্যেক ওয়ার্ডেই নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে ভূরিভোজের আয়োজন করেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী আচরণবিধিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ভোটারদের খাদ্য পরিবেশন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। কিন্তু ফুলবাড়িয়ার প্রার্থীরা তা মানছেন না। উৎসবমুখর নির্বাচনী প্রচারে নাগরিকরা খুশি হলেও ‘ভূরিভোজ প্রচারণায়’ ক্ষুব্ধ সচেতন নাগরিকরা।</p> <p>সরেজমিন শনি ও রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পৌরসভার ৪, ৫, ৬ ও ১ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, একজন মেয়র ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে পাঁচজন প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে সবজি খিচুড়ি ও ভুনা খিচুড়ি দিয়ে ভোটারদের আপ্যায়ন করা হচ্ছে। প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। প্রতিটি কেন্দ্রে ২০ থেকে ৩০ জন করে একসঙ্গে খাবার খাচ্ছে। একজনের খাবার শেষে হলে অপেক্ষমাণ আরেকজন খাবারের জন্য বসছে। এভাবে চলছে নির্বাচনী প্রার্থীর ক্যাম্পে ভূরিভোজ। ভূরিভোজ শেষে চা, পান ও সিগারেট খেয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।</p> <p>কাউন্সিলর প্রার্থী হাছেন আলী সরকার বলেন, ‘একজন প্রার্থী খাবারের আয়োজন করলে আরেকজন প্রার্থীর না করে উপায় নেই। এ কারণে প্রায় প্রতি রাতে কোনো না কোনো প্রার্থী নির্বাচনী কেন্দ্রে খাবারের আয়োজন করেন।’</p> <p>উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে, কিন্তু নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটারদের ভূরিভোজের আয়োজন করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে ভোটারদের কাছে উপঢৌকনও পাঠিয়ে দেবে অনেক প্রার্থী।’</p> <p>উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘নির্বাচনী কেন্দ্রে কেউ ভূরিভোজ কিংবা আলোকসজ্জা করলে অবশ্যই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p>