<p>পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের পিয়ন ইব্রাহিম হোসেন। পিয়ন হলেও অফিসের সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। নামজারিসহ জমিসংক্রান্ত কাজে সেবাগ্রহীতারা এলে অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে কাউকে যেতে দেন না ইব্রাহিম।</p> <p>সবার আগে ফাইলপত্র নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ ঠিক করেন তিনি। কাজ শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত দফায় দফায় চুক্তি হওয়া টাকা বুঝে নেন। টাকা দিতে দেরি হলেই ফাইল আটকে রাখেন। এমনকি টাকা বুঝে না পেলে ফাইলপত্র গায়েব করে ফেলেন এই পিয়ন।</p> <p>ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ ভূমি নামজারিতে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেন পিয়ন ইব্রাহিম। আর জমির মালিকানার কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে অফিসের মধ্যেই সেবাগ্রহীতার সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। বিষয়টি অফিসের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানলেও রহস্যজনক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন না। উপরন্তু অফিসের একটি চক্রের যোগসাজশে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এমন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।</p> <p>স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় ক্ষমতার দাপটও দেখান ইব্রাহিম হোসেন। বিভিন্ন সময় তাঁর বদলি হলেও কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আট বছর ধরে এই অফিসেই বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন। এ কারণে অফিসের কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতারা তাঁকে দাপুটে পিয়ন বলেই জানেন। তাঁর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একাধিকবার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তিনি কৌশলে অভিযোগকারী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সেসব ধামাচাপা দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি আব্দুল হাই নামের এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ এবং কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে এসব বিষয় উঠে এসেছে।</p> <p>লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের সারুটিয়া মহল্লার বাসিন্দা আব্দুল হাই। দুই মাস আগে তাঁর নিকটাত্মীয় মজিরন খাতুনের নামে জমি নামজারির জন্য এসি ল্যান্ড অফিসে যান। মজিরন খাতুন তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি পেতে ২০০১ সালে পাবনার ভাঙ্গুড়া সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। মামলাটি নিষ্পত্তি হয় ২০১২ সালে। পরবর্তী সময়ে জমিসংক্রান্ত অন্যান্য কাগজপত্র জোগাড় করতে কয়েক বছর লেগে যায়। এরপর সব কাগজপত্র নিয়ে আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে দুই মাস আগে ভাঙ্গুড়া এসি ল্যান্ড অফিসে আসেন মজিরন খাতুন। তখন পিয়ন ইব্রাহিম আব্দুল হাইকে কোনো কর্মকর্তার কাছে যেতে না দিয়ে কাগজপত্রের ফাইল নিজের হাতে নিয়ে নেন। কাগজপত্র দেখে ইব্রাহিম হোসেন জমির নামজারি করা সম্ভব হবে না বলে জানান। তবে তাঁকে এক লাখ টাকা দিলে সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) অন্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নামজারির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেন। তখন আব্দুল হাই অফিসের অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাও ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। নিরুপায় হয়ে পিয়ন ইব্রাহিমকে কয়েক কিস্তিতে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করবেন বলে চুক্তি করেন। কিন্তু দুই মাস চলে গেলেও ইব্রাহিমকে টাকা দিতে পারেননি আব্দুল হাই। ফলে ইব্রাহিম তাঁর ফাইলটি আটকে রাখেন।</p> <p>এরপর আব্দুল হাই একাধিকবার তাঁর কাছে ফাইল ফেরত চাইলেও তিনি দেননি। অবশেষে দুই মাস পরে গত বৃহস্পতিবার আব্দুল হাই টাকা দেওয়ায় অপারগতা প্রকাশ করে ইব্রাহিমের কাছ থেকে আবারও ফাইলটি ফেরত চান।</p> <p>এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইব্রাহিম ফাইলের কোর্টের আদেশ সরিয়ে নিয়ে ফেরত দেন। ফাইলে কোর্টের আদেশ না পেয়ে অফিসের মধ্যেই ইব্রাহিমের সঙ্গে বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন আব্দুল হাই। পরে গত রবিবার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।</p> <p>অভিযোগের বিষয়ে পিয়ন ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আব্দুল হাই আমাকে ভুল বুঝে এ ধরনের অভিযোগ করেছেন।’ এ ব্যাপারে জানতে গত সোমবার দুপুরে এসি ল্যান্ড অফিসে গেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাওসার হাবিবকে পাওয়া যায়নি।</p> <p>তবে অভিযোগ প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে একজন পিয়নের এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। শুনানিতে পিয়ন ইব্রাহিম হোসেন দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p>