<p>অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ১২টি পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক।</p> <p>শুধু তাই নয়, বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলার বন বিভাগের তিন বর্গকিলোমিটার জায়গা দখল করে গড়েছেন অবৈধ সাম্রাজ্য। পাহাড় কেটে শত শত ট্রাক মাটি বিক্রয় করছেন প্রতিনিয়ত। ১২ হেক্টর জায়গাজুড়ে করেছেন অবৈধ ইটভাটা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব কাজ করায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের বাঁশখালীর কালীপুর রেঞ্জ অফিসের দুই কিলোমিটার দূরে লটমনি পাহাড়। ওই পাহাড়ে বাঁশখালীর বন বিভাগ ও বাণীগ্রাম তহশিল অফিসের অধীনে ৪৫ হেক্টর পাহাড় রয়েছে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সেখানকার ১২ হেক্টর পাহাড় দখল করে অবৈধ ইটভাটা করেছেন চেয়ারম্যান মানিক। পাহাড় কেটে প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি বিক্রি করছেন তিনি। ভাটার ধোঁয়ায় গাছ মরে গিয়ে ১৫ হেক্টর সামাজিক বনায়নের পাহাড় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।</p> <p>গত শনিবার সকাল ১১টায় সরেজমিনে লটমনি পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল পাহাড় কেটে নেওয়ার দৃশ্য। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে অন্তত সাতটি স্কাভেটর মেশিন আছে। শ্রমিকরা দিন-রাত মাটি কেটে ট্রাকে ভরছেন। প্রতি ট্রাক মাটির দাম দুই হাজার ৪০০ টাকা। দৈনিক অন্তত ৩৫০ ট্রাক মাটি বিক্রি হয়। মাটি কেটে পাহাড়ের তলদেশে ১০-১২ ফুট গভীর করে চলছে মাছ চাষ।</p> <p>বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে স্থাপিত চেয়ারম্যানের ইটভাটার নাম কেবিএম। এই পাহাড়ের সঙ্গে লাগোয়া সাতকানিয়া উপজেলার বনভূমি। সাতকানিয়া উপজেলার বন বিভাগের জায়গা দখল করে রয়েছে চেয়ারম্যান মানিকের কেবিএম-১ ও কেবিএম-২ নামের আরো দুটি ইটভাটা। এর কোনোটিরও লাইসেন্স নেই। চেয়ারম্যানের মোট অবৈধ পুকুর রয়েছে ১২টি। বন বিভাগের জায়গায় নির্মাণ করেছেন আলিশান বাংলো। বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলার বন বিভাগের তিন বর্গকিলোমিটার জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সাম্রাজ্য। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।</p> <p>বাঁশখালীর বাসিন্দা নুরুল আবছার, গোলাম মোস্তফা, জয়নাল আবেদীন ও ফারহানা বেগম বলেন, চেয়ারম্যানের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন মিলে অন্তত ১৭ বার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় তহশিলদার এসে চেয়ারম্যান মানিকের বিশাল বাংলোতে বসে নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ করে চলে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।</p> <p>এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমি পাহাড় দখল করিনি। এ ব্যাপারে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বাণীগ্রামের তহশিলদার আতিকুর রহমান তদন্ত করে গেছেন। আর আমার ইটভাটা পাহাড়ের ভেতর হলেও সমতল জায়গায় আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও দুদক কর্মকর্তারাও বিষয়টি জানেন।’</p> <p>বাঁশখালীর বাণীগ্রামের তহশিলদার আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি সরেজমিন তদন্ত করেছি। চেয়ারম্যান কিছু জায়গা দখল করে রেখেছেন। তাঁকে খাজনা দেওয়ার জন্য বলেছি। তবে পাহাড় কাটতে দেখিনি।’</p> <p>বাঁশখালীর কালীপুর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘জায়গাটি আমার রেঞ্জের দুই কিলোমিটারের মধ্যে হলেও বাঁশখালীর প্রান্তে যোগাযোগের রাস্তা নেই। তাই সাতকানিয়া উপজেলা হয়ে সেখানে যেতে হয়। চেয়ারম্যান খুব প্রভাবশালী হওয়ায় লোকবলের অভাবে বন বিভাগের জায়গা উদ্ধার করতে পারছি না।’</p> <p>বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘চেয়ারম্যান মানিকের পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়েছি। আমি বিষয়টি সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকেও জানিয়েছি। শিগগিরই দুই উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে সেখানে অভিযান পরিচালনা করবে।’</p>