<p>ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছনা। বেসরকারি সংস্থার নিবন্ধনে বাণিজ্য। কেনাকাটায় অনিয়ম। মৃত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা আত্মসাৎ। এসবসহ সম্প্রতি ৭৭ পাতার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু বহাল রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল্লা আল ফিরোজ।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নানা অপকর্মে জড়িত হন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছে না ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আর সেই সুযোগে সমাজসেবা কার্যালয় ঘিরে একটি চক্র গড়ে তুলেছেন ফিরোজ। এই চক্রের কাজ হলো সরকারি বরাদ্দ তছরুপ করা।</p> <p>ফিরোজের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সুপারিশ করা হয়। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছরের ৬ অক্টোবর রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুল কবীরকে লাঞ্ছিত করেন। পরদিন উপপরিচালক এ ঘটনায় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর গত ১৩ অক্টোবর উপপরিচালক রাশেদুল কবীর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।</p> <p>অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বয়স্ক ভাতাভোগী ঝরনা চৌধুরীর টাকা আত্মসাৎ করেন ফিরোজ। ওই নারীর বাড়ি রাজশাহী নগরীর গণকপাড়ায়। তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বরে ব্যক্তিগত জমাসহ ভাতার মোট ২৫ হাজার ৫৫৬ টাকা জমা ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর দুই সন্তান রাজু চৌধুরী ও সুরেশ চৌধুরী ব্যাংকে টাকা তুলতে যান। তাঁরা জানতে পারেন মায়ের হিসাব নম্বর থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে পাওয়া প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ফিরোজের প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে নিরা বেগম এই টাকা তুলেছেন।</p> <p>এদিকে আব্দুল্লা আল ফিরোজ ২০১৭ সালের ১৮ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ দিনে আটটি বেসরকারি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন দিতে পারেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক। ক্ষমতার দাপটে একজন সহকারী পরিচালক হয়েও তিনি গায়ের জোরে একের পর এক নিবন্ধন দিয়েছেন ভুঁইফোড় বিভিন্ন সংস্থাকে। যেগুলো নিবন্ধন দিয়ে তিনি লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত বছর ৩ অক্টোবর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহাপরিচালককে সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই থেমে আছে। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।</p> <p>অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির ৫০ জন হিজড়া প্রশিক্ষণের বরাদ্দ ১০ লাখ টাকার মধ্যে চার লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন ফিরোজ। বাকি ছয় লাখ টাকা এখনো ব্যাংকে পড়ে রয়েছে। বরাদ্দের একাংশ আত্মসাৎ করায় বাকিটা এখনো ব্যাংকে পড়ে রয়েছে। এ নিয়ে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি দিনের আলো হিজড়া সংঘের সহসাধারণ সম্পাদক জয়িতা পাল সমাজসেবা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।</p> <p>এসব বিষয়ে আব্দুল্লা আল ফিরোজ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, এর কোনো ভিত্তি নেই। এসব অভিযোগ ভুয়া। উপপরিচালককে লাঞ্ছিত করার বিষয়টিও সঠিক নয়। আবার কোনো অর্থ আত্মসাতের সঙ্গেও আমি জড়িত না। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার রটাচ্ছে। কিন্তু আমার কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’</p>