<p>বগুড়ার শাজাহানপুরে প্রকল্পের নামে কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। অথচ এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ফলে বরাদ্দের টাকা নয়ছয় চলছেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন।</p> <p>২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শাজাহানপুর উপজেলায় টিআর প্রকল্পের অধীনে সাজাপুর কৈগাড়ী জামে মসজিদের উন্নয়নের জন্য প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া না গেলেও বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শাজাহানপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের সামনের প্রাচীরের নিচে খাল ভরাট প্রকল্পে এক কোদাল মাটিও কাটা হয়নি। কিন্তু তুলে নেওয়া হয়েছে বরাদ্দের প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা।</p> <p>শুধু টিআর প্রকল্পেই নয়, এডিপি ও কাবিখা প্রকল্পেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে এডিপির ৪৭টি প্রকল্পের অধীনে ৭০ লাখ টাকা পিআইসির মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে ফুটবল, সেলাই মেশিন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলব্যাগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ বিতরণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও নামমাত্র কাজ করেই সব টাকা তোলা হয়েছে। </p> <p>অন্যদিকে কাবিখার ১৩ প্রকল্পের অধীনে ১০৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার সরকারি মূল্য ৪৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। অথচ এসব প্রকল্পের নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দ উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আশেকপুর পারতেকুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংস্কারকাজে আট টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার সরকারি মূল্য তিন লাখ ৪৮ হাজার টাকা। নামমাত্র কাজ করেই এই প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প সভাপতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার ও সম্পাদক জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলমগীর হোসেন স্বপন। কাবিখার দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ প্রকল্পের অধীনে ১০৫ টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি অন্যতম প্রকল্প হচ্ছে বীরকুল্লাহ পাকা রাস্তা হতে নাপিতবাড়ি সেতু পর্যন্ত ও শৈলধুকড়ি চতল হতে সুন্দরীদহ পর্যন্ত সড়ক সংস্কার। এই প্রকল্প দুটির কাজেও চরম ফাঁকিবাজি করা হয়েছে। লোক-দেখানো সড়ক সংস্কার করেই লোপাট করা হয়েছে বরাদ্দ।</p> <p>২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শাজাহানপুর উপজেলায় মোট ৪২২ প্রকল্পের অধীনে চার কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৫০ টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি টিআর প্রকল্পের ১২ লাখ ৩৪ হাজার ২৬৬ টাকা জুন ক্লোজিংয়ের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে না পারায় সরকারি কোষাগারে ফেরত গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অন্যান্য প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশও সঠিকভাবে করা হয়নি। অথচ বরাদ্দের পুরো টাকাই পকেটে পুরেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p>উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি সেগুলোর টাকা ফেরত নেওয়া হবে। টাকা ফেরত না দিলে সরকারি টাকা আদায়ে প্রয়োজনে মামলা করা হবে।’</p> <p>উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, এডিপির প্রতিটি প্রকল্পের কাজ বুঝে নিয়েই বিল পরিশোধ করা হয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ফোন ধরেননি তিনি। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, ‘টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে এডিপি প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।’</p>