<p>ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গাছ লণ্ডভণ্ড হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কালের কণ্ঠ জানতে পেরেছে, গাছের চারা তৈরির পদ্ধতিতে রয়েছে সমস্যা। মাটির টালিতে চারা রোপণ করলে গুচ্ছমূল তৈরি হয়। থাকে না মূল শিকড়। যা উপকূলের হাজার হাজার গাছের বিপদ ডেকে আনে।</p> <p>মূল শিকড় না থাকায় বেশির ভাগ গাছ তার ওজন ধরে রাখতে না পেরে উপড়ে পড়েছে। উপকূলীয় মানুষের গাছ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে গেছে সম্প্রতি তাণ্ডব হানা বুলবুল।</p> <p>বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার ৫০ শতাংশ ভূমি বৃক্ষ দ্বারা আচ্ছাদিত। যেখানে দেশের গড় বৃক্ষভূমি প্রায় ১৭ শতাংশ।</p> <p>ঝড়ের পর বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট, চিতলমারী ও কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চাম্বল (রাজকড়ই), রেইনট্রি (শিরীষ), মেহগনিসহ নানা প্রজাতির অসংখ্য ছোট-বড় গাছ বিভিন্ন স্থানে উপড়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি উপড়ে গেছে শিরীষ ও চাম্বল। উপড়ে পড়া বিশাল আকৃতির বেশির ভাগ গাছের মূল শিকড় দেখা যায়নি।</p> <p>বাগেরহাট সামাজিক বন বিভাগের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে রাস্তার পাশে এবং প্রান্তিক ভূমিতে জেলায় সামাজিক বন বিভাগের এক হাজার ১০৫টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ৯১৫টি।</p> <p>ঝড়ে সামাজিক বন বিভাগের রোপণ করা ক্ষতিগ্রস্ত গাছের সংখ্যা জানা গেলেও ব্যক্তিপর্যায়ে মানুষের কী পরিমাণ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে গ্রামবাসীর মতে, বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত গাছের সংখ্যা লাখ ছাড়াবে।</p> <p>এ বিষয়ে বাগেরহাট সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আবুল কালাম জানান, ব্যক্তিমালিকাধীন নার্সারির চারা মাটির পাত্রে তৈরি করা হয়। আর মাটির পাত্রে তৈরি করা চারায় মূল শিকড় থাকে না। মাটির পাত্রে কয়েল আকৃতির কিছু গুচ্ছমূল থাকে। বেশির ভাগ গাছের গোড়ায় মূল শিকড় না থাকার কারণে গাছ তার ভার ধরে রাখতে পারে না। ভার ধরে রাখতে না পারার কারণে সামান্য ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে। তাঁর পরামর্শ, ‘রুট-স্যুট রেশিও মেনে গাছ রোপণ করতে হবে। চারার উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুটের মধ্যে থাকতে হবে। একই সঙ্গে গাছের মূল শিকড় থাকতে হবে। তাহলে এই চারা গাছে পরিণত হলে সহজে উপড়ে পড়বে না।’</p> <p>সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ঝড়ে রেইনট্রি, চাম্বলসহ যেসব গাছ উপড়ে পড়েছে সেগুলোর শিকড় সাধারণত মাটির গভীরে যায় না। তাঁর মতে, এই অঞ্চলে ঝাউ ও বাবলাগাছ বেশি করে রোপণ করা উচিত।</p> <p>খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন জানান, যেসব উদ্ভিদ বেশি উপড়ে পড়েছে তার মধ্যে শিরীষ ও চাম্বল বেশি। এই দুটি উদ্ভিদের চূড়া অনেক উঁচু। এই প্রজাতির উদ্ভিদে শাখা-প্রশাখা অনেক বেশি হয়। উঁচু আর অনেক বেশি শাখা-প্রশাখার কারণে ঝড়-বাতাস বেশি আটকায়। ঝড় এলে সহজে উপড়ে পড়ে এই জাতীয় উদ্ভিদ। আবার বাগেরহাট অঞ্চলে অল্প মাটি খুঁড়লে পানির স্তর পাওয়া যায়। এ কারণেও গাছের শিকর গভীরে না গিয়ে সমান্তরালে যায়।</p> <p>বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহ আলম ফরাজী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাগেরহাট অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপকূলবর্তী এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন কাছে হওয়ায় লবণ বেশি। এ কারণে গাছের শিকড় মাটির গভীরে যাচ্ছে না এবং মাটি তার উর্বরাশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এসব নানা কারণে সামান্য ঝড়-ঝঞ্ঝায় উদ্ভিদ উপড়ে পড়েছে।</p> <p>বাগেরহাটের নোনাডাঙ্গার নার্সারি ব্যবসায়ী নাছিম শেখ জানান, মাটির পাত্রে পাতানো চারার শিকড় এক জায়গায় থাকে। চারা উত্তোলনের সময় মূল শিকড় কাটা পড়ে। চারার মূল শিকড় না থাকলে গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়তে পারে। এ জন্য তাঁরা মাটির পাত্রের পরিবর্তে পলিব্যাগে চারা পাতানোর দিকে জোর দিয়েছেন।</p> <p>বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ভবিষ্যতে পরিকল্পিত উপায়ে ঘূর্ণিঝড় সহনীয় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।</p> <p> </p>