<p>বগুড়ার নন্দীগ্রামে ২০ শয্যা হাসপাতাল শুধু নামেই রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারসহ (ওটি) মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো দেড় যুগ আগে উদ্বোধনের সময় যেমনটা ছিল, এখনো সেভাবেই রয়েছে। সেগুলোর ওপর শুধু ধুলাবালির স্তূপ পড়েছে। নেই কোনো নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু নিয়োগপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট ও প্রেষণে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে বহির্বিভাগ। হাসপাতালটি নির্মাণে সরকারের সাড়ে তিন কোটির বেশি টাকা খরচ হলেও চালু না হওয়ায় তা এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। ব্যবহার না করায় হাসপাতালের বিছানা ও আসবাবপত্রেও ধুলাবালির আস্তরণ জমেছে। ঘুণপোকা ভবনের দরজা-জানালায় বাসা বাঁধায় খুলে পড়ছে দরজা-জানালার কপাট।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান বিজরুল বাজারে। উপজেলা সদরে কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় পৌর শহরসহ আশপাশের বিপুলসংখ্যক মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছিল। বিশেষ করে, নারীরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং শিশুরা বিভিন্ন টিকাদান কর্মসূচির বাইরে থেকে যাচ্ছিল। এ কারণে উপজেলা সদরে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের দাবি তোলে স্থানীয় লোকজন। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১-০২ অর্থবছরে বিএনপি সরকারের আমলে উপজেলা সদরে ২০ শয্যার একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে (নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট-সিএমএমইউ) হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় হয় তিন কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০০২ সালে তারেক রহমান হাসপাতালটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০০৫ সালে এর অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় উদ্বোধন আটকে যায়। জনবল নিয়োগ ছাড়াই ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা। এরপর দীর্ঘ দেড় যুগেও জনবলের অভাবে হাসপাতালটি চালু হয়নি। ফলে হাসপাতালের বিশাল ক্যাম্পাস ঘাস ও বিভিন্ন আগাছায় ভরে গেছে। এর ফলে আবাসিক ভবনগুলোও নষ্ট হতে চলেছে।</p> <p>সূত্র জানায়, ২০ শয্যার অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকা, চিকিৎসা সহকারী, ওষুধবিদ, ওয়ার্ড বয়, অফিস সহকারী, ল্যাব অ্যাটেনডেন্টসহ ১৩টি পদ রয়েছে। ২০০৮ সালে চিকিৎসক ছাড়া অন্যান্য পদে ছয় কর্মচারীকে প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটির বহির্বিভাগ চালু করা হয়। কিন্তু অল্পদিনের মাথায় ওষুধবিদ ছাড়া অন্যরা অন্যত্র চলে যান। গতকাল রবিবার সরেজমিনে নন্দীগ্রাম ২০ শয্যার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের ফটক ও স্টোররুম ছাড়া সব কক্ষে তালা ঝুলছে। হাসপাতালের একটি কক্ষে চলছে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আদলে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার উম্মে হাসনা বানু জানান, তিনি এখানকার নিয়োগপ্রাপ্ত নন। পার্শ্ববর্তী ভাটগ্রাম ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রেষণে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য এখানে তাঁকে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া রোগীদের কোনো সেবা দেওয়া যায় না।’</p> <p>চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার রিধইল গ্রামের জাহানারা বেগম বলেন, ‘টেকার অভাবে বগুড়া যাবার পারিচ্চি না। ঔষধ কিনবার পারিচ্চি না। হার্টেও অসুখ লিয়ে এটি অ্যানো, সাদা সাদা বড়ি ছাড়া কিছুই দিল না।’</p> <p>এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন রানা বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে জনবল নিয়োগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। এলাকাবাসীর স্বার্থে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘জনবলের অভাবে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ‘২০ শয্যা হাসপাতালটি চালু করার বিষয়ে সংসদে কথা বলেছি। তারা একটি নিরীক্ষা কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন পাঠাবে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে তারা হাসপাতালটি চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছে।’</p>