<p>হরিণের মাংস পাচার মামলা। এই মামলার অভিযোগপত্র থেকে মূল অভিযুক্তের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি অন্যদের বলে বেড়াচ্ছেন, ছয় লাখ টাকা খরচ করেছেন। এর মধ্যে চার লাখ টাকা পেয়েছেন ভোলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাকি টাকা তদন্তকারী কর্মকর্তার পকেটে পড়েছে। এ ধরনের পরোক্ষ কথোপকথনের একটি রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিবেদকের হাতে।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাতে ১১০ কেজি হরিণের মাংস ও একটি চামড়া জব্দ করা হয়। এ সময় দুই যুবক জন্টু চন্দ্র দাস (হোটেল কর্মচারী) ও মো. আমিরুল ইসলামকে (মহেন্দ্র চালক) আটক করে থানা পুলিশ। তবে তাঁদের দেওয়া তথ্য মতে, হরিণের মাংস পাচারের হোতা ভোলা সদর রোডের হোটেল আলাউদ্দিনের মালিক মো. আলাউদ্দিন। তাঁকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় বোরহানউদ্দিন থানার কর্তব্যরত পুলিশের উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) জ্ঞান কুমার বাদী হয়ে একই রাতে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা করেন। বোরহানউদ্দিন থানায় মামলা নম্বর ১০। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন কিছু লোক বোরহানউদ্দিন উপজেলার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মীর বাড়ির জামে মসজিদের পাশে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে হরিণের মাংস বিক্রি করছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে জন্টু ও আমিরুলকে আটক করে পুলিশ। এ সময় আরো কয়েকজন পালিয়ে যায়। রাতে আটকদের পুলিশে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আলাউদ্দিন ও মো. ছিদ্দিক তাদেরকে নিয়ে এসেছেন বলে জবানবন্দি দেয়।</p> <p>হোটেল আলাউদ্দিনের কর্মচারী জন্টু দাস বলেন, ‘আমি আলাউদ্দিনের দোকানে কাজ করি। আলাউদ্দিন আমাকে নিয়ে আলম চেয়ারম্যানের ঘাটে আসেন। তাই আলাউদ্দিনকে ৩ নম্বর আসামি করে পুলিশ।’</p> <p>অন্যদিকে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাহেন্দ্র চালাই। রাতে ভাড়ার কথা বলে মো. সিদ্দিক আমার টেম্পো ভাড়া করে। পরে সিদ্দিককে ৪ নম্বর আসামি করা হয়। সিদ্দিক আলাউদ্দিনকে আমার ফোন নম্বরটি দেয়। আলাউদ্দিন ফোনে আমাকে গাড়ি নিয়ে যেতে বলেন।’</p> <p>এদিকে মামলা হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ডিবির উপপরিদর্শক মোহায়মিনুল ইসলাম ও মো. শহিদুল ইসলাম তদন্ত করেন। তারা গত ২২ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ডিবির তদন্তে বলা হয়, জন্টু দাসকে হোটেল থেকে ঘটনার তিন মাস আগে বাদ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছে আলাউদ্দিনের নামে মিথ্যে তথ্য দিয়েছে জন্টু। তাই তাঁকে আসামি রেখে আলাউদ্দিনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>তবে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন যে, জন্টু দাস এখনো হোটেল আলাউদ্দিনে কর্মরত। বেতনও পাচ্ছেন। বর্তমানে জন্টু ও আমিরুল আদালত থেকে জামিনে আছেন। তবে সিদ্দিক ঘটনার দিন থেকে পলাতক।</p> <p>একাধিক সূত্রে জানা যায়, হোটেল আলাউদ্দিনের মালিক কয়েক বছর ধরে মনপুরার বিভিন্ন চর থেকে একাধিক চক্রের মাধ্যমে হরিণের মাংস পাচার করে আনছেন। তাঁদের সঙ্গে ভোলার উপকূলীয় থানার যোগসাজশ রয়েছে। এর আগে হরিণের মাংস ও চামড়া পাচারের সময় আলাউদ্দিন ও তাঁর সহযোগী আটক হলেও ঘুষ দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করেছেন। সর্বশেষ ১১০ কেজি মাংসের মাসোয়ারা নিয়ে দুই থানার দর-কষাকষি হয়েছে। একটি থানা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দিলেও আরেক থানা টাকা না পেয়ে জব্দ করেছে।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন থানার পরিদর্শক অসিম কুমার বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতনরা বক্তব্য দেবেন।’ ভোলা ডিবির পরিদর্শক শহিদুল হকও বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।</p> <p>এদিকে পাচারকারী চক্রের হোতা হোটেলের মালিক আলাউদ্দিন কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নন। তবে তিনি বিভিন্ন নেতার আত্মীয় বলে পরিচয় দেন।</p> <p>এ বিষয়ে ভোলার পুলিশ সুপার মো. মোকতার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের ছোটখাটো বিষয়ে আমি বক্তব্য দিই না।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকলে আদালতে নারাজি দিতে পারেন।</p> <p>এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ ভোলার কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা জানান, তিন হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভোলায় এক হাজার কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে হরিণ, ভোদড়, মেছোবাঘসহ অসংখ্য প্রাণী। এসব বন্য প্রাণী যেন কেউ হত্যা না করতে পারে সে জন্য প্রতিটি রেঞ্জে একটি টহল দল গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিছু দুষ্কৃতিকারী হরিণের মাংস পাচার করার চেষ্টা করে। তাদের বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। মনপুরা, দৌলতখান ও তজুমদ্দিন থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’</p>