<p>হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাশের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি একটি প্রভাবশালী চক্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উেকাচ নিয়ে দুই চা শ্রমিককে ভুয়া বিক্রেতা সাজিয়ে অবৈধ দলিল তৈরির মাধ্যমে কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই জমি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোনো তোয়াক্কা করেননি তিনি। পরে চা শ্রমিকরা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে হলফনামার মাধ্যমে তা স্বীকার করে অভিযুক্ত সাবরেজিস্ট্রারসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেন।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দেওরগাছ মৌজায় ২.৬৪ একর জমির মালিক ছিলেন দেওরগাছ ইউনিয়নের আমকান্দি গ্রামের মহেশপালের ছেলে হেমন্ত পাল ও দেবেন্দ্র পালের ছেলে দীগেন্দ্র পাল। এসএ রেকর্ডের ওই মালিকরা ১৯৫৬ সালে একই এলাকার মুনছর আহম্মদের কাছে জমি বিক্রি করেন। তবে এসএ রেকর্ডে হেমন্ত পালের নাম ভুলবশত ‘পালে’র স্থানে ‘দাস’ লেখা হয়। চলমান আরএস জরিপে বিষয়টি নজরে আসে এলাকার একটি ভূমিখেকো চক্রের। চক্রটি সেটলমেন্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ওই জায়গার বর্তমান মালিক মুনছর আহমেদের ছেলে ইব্রাহীম কবিরের নাম না দিয়ে এসএ রেকর্ডীয় মালিক হেমন্ত ও দীগেন্দ্রের নাম রেখে দেয়। কিন্তু ‘পাল’ না দিয়ে সেখানেও ‘দাস’ উল্লেখ করা হয়। ইব্রাহিম কবিরের পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে মামলা করলে আদালত ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট ওই জমির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।</p> <p>এদিকে চক্রটি রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় ভুয়া বিক্রেতা সাজিয়ে এ জমির দলিল করার চেষ্টা করে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে দুটি দলিল দাখিল করা হলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাবেক সাবরেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর তা জব্দ করেন। ফলে চক্রের কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ থাকে।</p> <p>নিতেন্দ্র লাল দাস নতুন সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করলে চক্রটি আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা উপজেলার গেলানী ও লস্করপুর চা বাগানের দুই শ্রমিককে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি ভাতা দেবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সিলেটে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলানী চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক বাশুদেব মুড়াকে দিগেন্দ্র চন্দ্র দাস ও লস্করপুর চা বাগানের শ্রমিক নিপেন বাকতিকে হেমেন্দ্র চন্দ্র দাস নাম দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করান। পরে গত ১৭ জানুয়ারি চক্রের হোতা আশরাফ আলীসহ তার পক্ষের ১২ জনের নামে দলিল সম্পাদন করে দেয় তারা। এতে জমির বিক্রয় মূল্য দেখানো হয় এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। দলিল সম্পাদন করার পর সাবরেজিস্ট্রার তা গোপন করে রাখেন। ভুয়া ক্রেতারা ওই দলিলের নকল নিয়ে নামজারি করতে গেলে ইব্রাহিম কবির বাধা দেন। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনারের কাছে আবেদন করলে নামজারির আবেদন খারিজ করা হয়।</p> <p>এ ঘটনার পর তাঁরা হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর সাবরেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাশসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।</p> <p>জমির মালিক ইব্রাহিম কবির বলেন, ‘আমরা এ জমি কিনে নির্বিবাদে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোগদখল করে আসছি। বিক্রেতার নামে পালের জায়গায় দাস থাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র জমি আত্মসাতের চেষ্টা করলে আমি আদালতের আশ্রয় নিই। আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও সাবরেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাশ ১০ লাখ টাকা উেকাচ নিয়ে দলিল সম্পাদন করেন।’</p> <p>এ ব্যাপারে ক্রেতা আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ক্রেতা মাহফুজ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।</p> <p>সাবরেজিস্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাশ উেকাচ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তা ছাড়া আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ইব্রাহিম কবিরের আবেদনের বিষয়টিও তাঁর জানা নেই বলে জানান। পরে তিনি স্বীকার করেন, জনৈক রাজনৈতিক নেতার চাপে এই দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে নেতার নাম বলেননি তিনি।</p> <p>এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জের উপপরিচালক অজয় কুমার সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি সিলেটে মিটিংয়ে আছি। পরে যোগাযোগ করেন।’</p> <p> </p>