<p>বঙ্গোপসাগরের মোহনার একটি দ্বীপ চরকাশেম। প্রায় তিন হাজার একর আয়তনের দ্বীপটিতে দেড় শতাধিক পরিবারের বাস। এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ফলে গড়ে ওঠেনি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। আকাশে মেঘ দেখলে ঝড়-বন্যা আতঙ্কে থাকে দ্বীপের লোকজন। বর্ষায় প্রায়ই তারা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি পানি হলে ঘরের হাঁড়ি-পাতিল ভেসে যায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ আর একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় বছরের পর বছর এভাবেই বাস করছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরকাশেম দ্বীপের বাসিন্দারা।</p> <p>শুধু চরকাশেম নয়, উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালীচর, চরইমারশন, চরনজির, চরতোজাম্মেল, রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের চরকানকুনি, চরকলাগাছিয়ায়ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নেই।</p> <p>১৯৪০ সালের দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্বে চরকাশেম দ্বীপের উত্থান ঘটে। এটি পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তরে বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত। গত ৩৫-৪০ বছরে ভূমিহীনসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০০ পরিবার এখানে বসতি গড়ে তোলে। সদর ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় একটি ছোট খেয়া নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয় এখানকার লোকজনের। বর্ষায় নদী উত্তাল থাকলে এক সপ্তাহ পরও সদর ইউনিয়নে আসার সুযোগ থাকে না দ্বীপবাসীর। চরকাশেমের বাসিন্দা হাওয়া বেগম বলেন, ‘ঝড়-তুফানে আমাগো এইহানে থাকতে হয়। সিডর, আইলা, বইন্যার কালে পোলাপান লইয়া কেওড়াগাছে আছিলাম।’</p> <p>সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চরকাশেমে প্রায় সাড়ে ৭০০ লোকের বাস। তাদের মধ্যে ভোটারসংখ্যা ১৫০। কিন্তু বাসিন্দাদের জন্য নেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ। ফলে বিশেষ করে গ্রীষ্ম-বর্ষার পাঁচ-ছয় মাস প্রকৃতির বিরূপ আচরণের (ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস) সঙ্গে একরকম যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে দ্বীপবাসীকে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময়ে নদী-সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে গেলে গোটা দ্বীপ প্লাবিত হয়। পানিতে ভেসে যায় বাসিন্দাদের সহায়-সম্বল। আকাশে কালো মেঘ দেখলে তাদের মনে বয়ে যায় দুর্যোগের আতঙ্ক। ঝড় এলে নিয়তিনির্ভর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় খুঁজে পায় না তারা।</p> <p>উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগির বলেন, ‘যেসব চরে বিদ্যালয় নেই সেগুলোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আগে প্রকল্প ছিল না। এখন এক হাজার বিদ্যালয়ের প্রকল্প ছাড়ছে। ওই সব চরে বিদ্যালয় হবে বলে আশা করা যায়।’</p> <p>উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তপন কুমার ঘোষ বলেন, ওই সব চরাঞ্চলে কোনো সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র দিতে পারিনি। যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয় তবে আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য দ্রুত প্রস্তাব পাঠাব।’</p> <p>রাঙ্গাবালী উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুর্যোগ মৌসুমে ওই সব চরাঞ্চলের মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেক জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই, আবার কোথায় বেঁড়িবাধ নেই। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।’</p>