২০১১ সাল। সিরিয়ায় শুরু হয় ভয়ংকর গৃহযুদ্ধ। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মায়াদের ভবিষ্যৎ। ‘পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছিল।
বিজ্ঞাপন
শেষ পর্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্তটাই নেন তাঁর বাবা। দেশ ছাড়ার। পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। পেয়ে যান শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়। এরপর নিয়ে আসেন স্ত্রী-সন্তানদের। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে আসেন মায়া। ১৬ বছর বয়সে। পরিবার পুনর্মিলনী (ফ্যামিলি রিইউনিয়ন) ভিসায়। আর তখনই শুরু তাঁর স্বপ্নের। সে কথা নিজেই বলেন মায়া, ‘আমি আর মা এসে হিথরো বিমানবন্দরের কাছেই একটা হোটেলে উঠেছিলাম। সেখান থেকে বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ দেখা যেত। দেখতাম আর মুগ্ধ হতাম। কিভাবে এই যান্ত্রিক দানবগুলো কাজ করে। তখন থেকে বিমান ভালোবেসে ফেলি। মনস্থির করি, বৈমানিক হব। ’
অবশ্য মায়ার এই ভাবনার পেছনে আরো কারণ ছিল। এমনিতে বেশির ভাগ দেশেই তাঁর প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা নয়। কারণ তাঁর জাতীয়তা। তিনি একজন সিরীয় শরণার্থী। কিন্তু বৈমানিক হলে তিনি যেতে পারবেন যেকোনো দেশেই। নিজে বিমান চালিয়ে। দ্রুতই শুরু করেন সেই লক্ষ্যে পথচলা। তখনো মায়া ইংরেজিও খুব একটা পারতেন না। দ্রুতই শিখে নেন সেটা। সব বাধা পেরিয়ে ভর্তি হন স্কুলে। এরপর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পাইলট স্টাডিজে। ২০১৯ সালে সম্পন্ন করেন প্রথম একক উড্ডয়ন। কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ে যান প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স। সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে প্রথম নারী হিসেবে।
অবশ্য শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নিয়েই ব্যস্ত নন মায়া। যুক্তরাজ্যে আসার পর থেকেই কাজ করছেন শরণার্থীদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে। ২০১৭ সাল থেকে। কারণ মায়া বিশ্বাস করেন, ‘প্রত্যেক শরণার্থীর অধিকার রয়েছে অন্যদের মতো পড়াশোনা করার। তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বিনির্মাণে এর কোনো বিকল্প নেই। ’ এ নিয়ে কথা বলেছেন অসংখ্য অনুষ্ঠানে। উই ডে ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট ফোরামে, গ্লোবাল সোশ্যাল ফোরাম অন এডুকেশনে, ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসে, ওয়াইজ সামিটে, টেডএক্সে, এমনকি জাতিসংঘেও। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অসংখ্য সংবাদমাধ্যমে। ২০১৯ সালে অংশ নেন ইউএনএইচসিআরের গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামের এডুকেশন সেশনে। সম্প্রতি এর ধারাবাহিকতায় যুক্ত হয়েছেন ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে। শুভেচ্ছা দূত হিসেবে। ‘খবরটা শোনার পর আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। সম্ভবত এতে আমি (প্রাইভেট পাইলট) লাইসেন্স পাওয়ার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছি। কারণ আমার কাছে এর মানে আমি সত্যিই একজন ভালো মানুষ’, বলেন মায়া।
এখন মায়া মুখিয়ে আছেন কমার্শিয়াল পাইলটের লাইসেন্সের জন্য। বিমানভর্তি যাত্রী নিয়ে আকাশে পাড়ি জমানোর জন্য। টেডএক্সের বক্তব্যে বলেনও সেই কথা, ‘আমার আর কয়েক বছর লাগবে। এরপর হয়তো আপনারা কোনো একদিন বিমানে বসে শুনবেন আমার কণ্ঠ, আমি আপনাদের ক্যাপ্টেন বলছি। ’
তথ্য সূত্র :
ইউএনএইচসিআর, ভোগ