সেদিন ছিল রবিবার, এখানকার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। দুপুরের পর আমাদের ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল প্যানারোমা জাদুঘরে। বাসার কাছেই। কিন্তু সংসারের টুকিটাকি কেনাকাটা করতে করতে সময় ফুরিয়ে যাওয়ায় সেখানে আর ঢু মারা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
জাবিরের জন্ম হয়েছে, ওর মা গাজিয়ান্তেপ ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে—ফুয়াদের কাছ থেকে এসব তথ্য আগেই নিয়েছি। কেন জানি না, আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় হওয়ার আগেই মেয়েটা সম্পর্কে আমার খুব ভালো একটা ধারণা জন্মেছিল। মনে হচ্ছিল ওর সঙ্গে সুন্দর বন্ধুত্ব হবে। আমাদের পছন্দের রং হয়তো মিলে যাবে! আমি হয়তো ওর সঙ্গে পার্টিতে শাড়ি পরবো! তাই অপেক্ষা করছিলাম—কবে ওর সঙ্গে দেখা হবে।
তো ওরা আমাদের বাসায় এলো সেদিন সন্ধ্যায়। ছেলেরা সামনের রুমে বসে গল্প করছিল। আর জাবিরের আম্মু আমার বেডরুমে ঢুকে চট করে আমাকে জড়িয়ে ধরল। হোয়াটসঅ্যাপে দেখেছিলাম ওর ডাক নাম ‘শশী’। চেহারা দেখে বুঝলাম নামকরণ যথার্থ হয়েছে। ওর সঙ্গে অনেক গল্প করলাম। বিদেশে করা ঈদের গল্প, ওর প্রেগনেন্সির সময়কার টক-মিষ্টি অভিজ্ঞতার গল্প। তুর্কি ভাষায় কথা বলতে না পারার বিড়ম্বনার গল্পও হলো। জিজ্ঞেস করলাম, এখানে সুন্দর কানের দুল পাওয়া যায়? ও বলল, এখানে দারুণ সুন্দর ছোট গয়না পাওয়া যায়। ডিজাইন খুব সুন্দর। আরো অনেক কথা হলো। একবারের জন্যও মনে হয়নি—এটা আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ!
শেষটায় এমন হলো, মেয়েটা অন্যদিকে ফিরে জাবিরকে খাওয়াচ্ছে। খাওয়ানো হলে বাবুকে টাওয়েল আর কানটুপি পেঁচিয়ে, ট্রামে চেপে ওরা বাসায় চলে যাবে। তখন আমি রীতিমতো তার পাশে বসে আমার জন্য আনা চকোলেট আর ঘর সাজানোর ফুল দেখছি। সঙ্গে ওর আনা মুরগির গ্রিল দিয়ে রুটি খাচ্ছি। মেয়েটাকে খুব পছন্দ হয়েছে। বিদেশ বসে অমন বান্ধবী পাওয়া বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার।
—জুয়াইরিয়া জাহরা হক
গাজিয়ান্তেপ, তুরস্ক