জমিদারবাড়ি বলতে ভাঙাচোরা পলেস্তারা খসে যাওয়া দেয়ালের কথা মনে এলেও পৃত্থিমপাশা তার চেয়ে আলাদা। ৩৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি আজও সাজানো-গোছানো। বাড়িতে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে রয়েছে বিশাল এক দিঘি। প্রায় ৩০০ বছর বয়সী বাড়িটির আসবাবপত্র, মসজিদের ফুলেল নকশা, ইমামবাড়া, দিঘি মানুষকে আকৃষ্ট করে।
কালের সাক্ষী
পৃত্থিমপাশা জমিদার বাড়ি
- দালান, মসজিদ, ইমামবাড়া। বিশাল দিঘিতে শানবাঁধানো ঘাট। অন্দরমহলে কোথাও মোগল, কোথাও ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। পৃত্থিমপাশা নবাববাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। ঘুরে দেখেছেন মাহফুজ শাকিল
অন্যান্য

জমিদারদের ইতিহাস
মোগল সম্রাট আকবরের সময়কালে ইরান থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন সাকি সালামত খান।
আমজাদ খানের দুই উত্তরাধিকারী হলেন—আলী হায়দার খান ও আলী আজগর খান। তাঁদের আমলেই বাড়িটি দুই ভাগ হয়ে যায়। আলী হায়দার খানের দুই পুত্র—আলী ছফদর খান ওরফে রাজা সাহেব ও আলী সারওয়ার খান ওরফে ‘চুন্নু নবাব’। আলী ছফদর খান ভাসানী ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। অন্যজন আলী সারওয়ার খান ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালের উপনির্বাচনে কুলাউড়া আসনের প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পৃত্থিমপাশার ইমামবাড়া
পৃত্থিমপাশার জমিদারবাড়ির সদস্যরা শিয়া মতাবলম্বী। নবাব আলী আমজাদ খান ইমামবাড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। মহররমের দিন ইমামবাড়াকে কেন্দ্র করে কারবালার কাহিনি বর্ণনা, শোক মিছিল ও মাতম চলে। এখনো পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি থেকে মহররম উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে।
বাড়িতে অতিথি হয়েছিলেন
অনেক নামকরা লোক পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ১৯৫১ সালে ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভী অন্যতম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। ত্রিপুরার মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরও এ বাড়িতে আতিথ্য নিয়েছিলেন।
উত্তরসূরিরা
জমিদারদের বর্তমান উত্তরসূরি সাবেক সংসদ সদস্য আলী আব্বাস খান এবং তাঁরই চাচাতো ভাই আলী ওয়াজেদ খান। আলী ওয়াজেদ খান বলেন, ‘জমিদারি আমলে রাজস্ব আসত ১১ লাখ টাকা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী বাড়িটি ধ্বংসের চেষ্টা চালায়।
পরিবারের সদস্যদের অনেকে ইংল্যান্ড-আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির ফলে ১০০ বিঘা জমি বাদে বাকি সব সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।’ আলী আব্বাস খান বলেন, ‘জমিদারি চলে গেলেও আগের মতোই মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ এখনো আমাদের অনেক ভালোবাসে। আগের মতোই সম্মান করে।’
ছবি : লেখক
সম্পর্কিত খবর