ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭
প্রচ্ছদ রচনা

ঘোড়ার সঙ্গে চার দশক

তাঁর ঘোড়াগুলো অভিনয় করেছে আড়াই শর মতো ছবিতে। তিনিও
তাঁর ঘোড়াগুলো অভিনয় করেছে আড়াই শর মতো ছবিতে। তিনিও
শেয়ার
ঘোড়ার সঙ্গে চার দশক

পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড। কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সামনে আসতেই নজরে পড়ল মূল ফটকের ঠিক উল্টোদিকে একটা ঘোড়ার গাড়ি। সামনেই একটা ঘোড়ার গলায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন একজন। স্নেহের পরশ পেয়ে ঘোড়াটিও মাঝেমধ্যে বন্ধ করে রাখছে চোখ।

আর মাথা নেড়ে কী যেন বোঝাতে চাইছে ভদ্রলোকটিকে। অন্য ঘোড়াটিও অসহায়ের মতো চেয়ে আছে ভদ্রলোকটির দিকে। তারও হয়তো ইচ্ছে করছিল আদরে ভাগ বসাতে। ভদ্রলোকের পরনে লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি।
এ সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ষাটোর্ধ্ব এক লোক বললেন, 'কী নাজির ভাই, এহনো ঘোড়ার মায়া ছাড়তে পারলা না?' বুঝলাম ইনিই নাজির হোসেন। পুরান ঢাকার পুরনো কোচোয়ান। ১৯৭৬ সাল থেকে চালাচ্ছেন ঘোড়ার গাড়ি। বললেন, 'এরা তো আমার সন্তানের মতো।
এখন বুড়া অইয়া গেছি। তাই ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারি না। তবে সময় পাইলে একটু হাত বুলাইয়া দিই।' সেই ঘোড়ার গাড়িতে বসেই কথা হয় এই নাজির হোসেনের সঙ্গে।

ট্রাকচালক থেকে ঘোড়সওয়ার

নাজির হোসেনের বাপ-দাদারা সবাই পুরান ঢাকার বাসিন্দা।

বাবা নিরু হোসেন তৎকালীন ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সর্দারি করতেন। নাজিরও ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে কাজ করতেন। স্কুলে যাওয়া হয়নি। একটু বড় হলে ট্রাকের হেলপারি করতেন। পরে নিজেই চালাতেন ট্রাক। ১৯৭৬ সালের কথা। তখনো ঢাকা শহর যান্ত্রিকতার ষোলকলায় পূর্ণ হয়নি। ঘোড়ার গাড়ি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। পয়সা-কড়িও জুটত বেশ। সে সময় ট্রাক বাদ দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চালানো শুরু করেন নাজির হোসেন। তিনি জানালেন, 'আমার ওস্তাদ ছিল আফজাল হোসেন। তাঁর কাছ থেকেই ঘোড়া চালানো শিখেছি।' ১৯৭৮ সালে ভাওয়াল রাজার ঘোড়ার গাড়িটি নিলামে মাত্র ১৮ হাজার টাকায় কিনে নেন নাজির। গাজীপুরের ভাওয়ালের মেজ কুমার রামেন্দ্র নারায়ণ রায়ের বিয়েতে ইংল্যান্ডের মহারানি এই মূল্যবান ঘোড়ার গাড়ি উপহার দেন বলে জানা যায়। শক্ত ছাদ ও চার আসনবিশিষ্ট এই গাড়ির চারটি চাকায় এখনো ব্রিটিশের সিল লাগানো আছে-বলেন নাজির উদ্দিন। কিনে নতুন করে এর সাজসজ্জা করেন। সে সময় রাষ্ট্রীয় ও অভিজাত শ্রেণির অতিথি পরিবহন করার জন্য নাজির গাড়োয়ান তা ব্যবহার করতেন। ১৯৮৮ সালের দিকে মানিকগঞ্জের এক লোক দুটি ঘোড়াসহ গাড়িটি অনেক টাকায় কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিক্রি করেননি নাজির হোসেন। কেন? জানতে চাইলে এই কোচোয়ান জানালেন, 'এই গাড়ি দিয়ে আমি ফিল্মে অভিনয় করি। এর প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মে গেছে। এটা ক্যামনে বেচি।' এখনো বাড়িতে গাড়িটি যত্ন করে রেখেছেন বলে জানান তিনি।

একসময় নাজিরের ঘোড়া ও গাড়ি ব্যবহৃত হতে থাকে বাংলা ছায়াছবিতে। নিশানা, ছক্কা-পাঞ্জা, চোখের মণি, শাহী দরবার, রাজকন্যা, মধুমিতা, ডাকু-মনসুর, বড় মালি, রাজদুলারী, রাজা সাহেব, রাজা-রানিসহ অনেক জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্রে যে ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায় সেগুলো নাজিরের। প্রায় ২৫০টির মতো ছবিতে তার ঘোড়া অভিনয় করেছে বলে জানান নাজির।

নায়কের শিডিউল আছে, ঘোড়ার নেই

আশি-নব্বইয়ের দশকে পোশাকীয় সব ছবিতে ঘোড়া নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতেন যে জনপ্রিয় নায়করা শিডিউল দিতে পারলেও শিডিউল ফাঁকা থাকত না নাজিরের ঘোড়ার। শেরাটন ও সোনারগাঁও হোটেল থেকে আগেই বুকিং দিয়ে রাখা হতো। অনেক বিদেশি পর্যটক তাঁর ঘোড়ার গাড়ি চড়ে ঢাকা দেখেছেন। ফলে অনেক সময় পরিচালকরা এসে ধরনা দিতেন নাজিরের কাছে। স্মৃতি হাতড়ে নাজির বলেন, 'সুপারস্টার নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে আমার শিডিউল নিয়ে ঝগড়া হতো। পরিচালক ওয়াসিমকে বলতেন, ওর সঙ্গে ঝগড়া করো না। তুমি যেমন আমার আর্টিস্ট, তেমনি ওর ঘোড়াও আর্টিস্ট। ঘোড়া ছাড়া তোমাকে দিয়ে শুটিং শেষ হবে না।' শুটিংয়ের স্মৃতি বলতে গিয়ে নাজির জানালেন, 'শুটিংয়ের সময় ঘোড়া ঠিকমতো থাকে কি না এ নিয়ে টেনশনে থাকতাম। পরিচালক শট নেওয়া শুরু করলে মনে মনে কত শতবার যে আল্লারে ডাকতাম তার ইয়ত্তা নেই। তিন-চার জোড়া ঘোড়া নিয়ে যখন শ্যুট হতো তখনই সমস্যাটা বেশি হতো। পরিচালক বলতেন, কী ঘোড়া আনছো নাজির; একটা ডাইনে যায়, একটা বাঁয়ে যায়। ঘোড়া তো মনে হয় তোমার মতো বেসামাল। আমার ৫০০ ফিট ফিলিম নষ্ট হইয়া গেল।' ঘোড়ার গাড়ির বদৌলতে প্রায় আড়াই শর মতো ছবিতে অভিনয়ও করেছেন নাজির। প্রায় সব ছবিতেই কোচোয়ানের ভূমিকায়। তবে এসব ছবিতে 'জি হুজুর, উঠুন রাজকুমার, চলেন সাহেব' এর মতো দু-একটার বেশি সংলাপ ছিল না নাজিরের। তিনি জানান, পরিচালক যেভাবে বলতেন, আমি সেভাবেই থাকার চেষ্টা করতাম। আমার কাজ ছিল মূলত ঘোড়া চালানো। ওয়াসিম, রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, কবরী, শাবানা, ববিতা, রোজিনা, চম্পা থেকে শুরু করে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রায় সব বিখ্যাত নায়ক-নায়িকাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে নাজিরের। জানালেন, আগে এফডিসির সবাই এক নামে চিনত। রাজ্জাক, শাবানা ও ববিতা 'ভাই' বলে ডাকত। এখনো দেখা হলে জিজ্ঞেস করে, 'নাজির ভাই, কেমন আছেন?'

স্মৃতির ঝাঁপি

২০০৬ সালের নভেম্বরে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ফরাসি ফুটবল তারকা জিনেদিন জিদান। অংশ নিয়েছিলেন একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচে। ওই ম্যাচে অংশ নেওয়ার জন্য ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এসেছিলেন তিনি। সেই গাড়িতে কোচোয়ান ছিলেন পুরান ঢাকার নাজির হোসেন। সেই স্মৃতি হাতড়ে নাজির বলেন, 'ইউনূস সাহেবের সঙ্গে এসেছিল জিদান। সঙ্গে ছিল তাঁর আটজন দেহরক্ষী। আমি হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিই, জিদানও হাসিমুখে হাত মেলালেন। মনে হলো খুব হালকা। যেন ঠ্যালা দিলেই পড়ে যাবে! অথচ টিভিতে দেখেছি, এই লোকটা ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। সঙ্গে থাকা দেহরক্ষীরা আমাকে তাড়া দিচ্ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য। ইউনূস সাহেব বললেন, আমাদের অতিথি। নাজির ভাই, একটু আস্তে আস্তে চালায়া যান।'

১৯৯৬ সালে ঢাকায় আসেন বলিউড তারকা দিলীপ কুমার। তার আগের বছর এসেছিলেন সুনীল দত্ত। দুজনই চড়েছিলেন নাজিরের ঘোড়ার গাড়িতে। নাজিরের গাড়িতে চড়ে এখনকার শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঘুরে দেখেছেন দিলীপ কুমার। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল? জিজ্ঞেস করতেই নাজির বললেন, 'হ মিয়া। লোকটা দেখতে ভারি সুন্দর। আমারে কইছিল, বাংলাদেশ খুব আচ্ছা হ্যায়। হাম কা করে গা? আমি কইলাম, তুম পাবলিককো হাত দ্যাখায় গা।' আর সুনীল দত্ত নাকি ভারত যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন নাজিরকে। সুনীল জিজ্ঞেস করেছিল, 'হামারা ছবি আপ দেখায়া গা?' 'মাদার ইন্ডিয়া' হাম দ্যাখা হে' জবাব দিয়েছিলেন নাজির।

সাধারণের তো বটেই, আগে ঢাকায় নায়ক-নায়িকা বা প্রভাবশালীদের বিয়ে হলেই ডাক পড়ত নাজিরের। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মেয়ের বিয়েতেও বর এসেছিল নাজিরের ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে। মহাখালীর ডিওএইচএস থেকে বর বেশে নায়ক ওমর সানীও শেরাটন হোটেলে বিয়ের আসরে এসেছিলেন নাজিরের গাড়িতে চড়েই। গেল বছর বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বিয়েতে ডাক পড়ে নাজিরের। মুশফিককে ঘোড়ায় চড়িয়ে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান এ গাড়োয়ান। নাজির বললেন, 'ও যে ক্রিকেট খেলে, আরে, চিনলেন না; পিচ্চি কইরা একটা ছেলে। আরে ওই যে ব্যাটসম্যানের পেছনে দাঁড়ায়া বল ধরে। কী নাম জানি, ওহ মনে পড়ছে, মুশফিক। সেও আমার ঘোড়ায় চইড়া বিয়ে করতে গেছে। আমি তো লাগাম ধরে দাঁড়ায়া আছি। মুশফিক উডার পর ঘোড়াটা একটু লাফায়া উঠছিল। পোলাডা তো ডরাইয়া গেছিল! আমি কইলাম, ভয় নাইক্কা মিয়া। কইল, নাজির ভাই, আপনে সঙ্গে থাইক্যেন।'

আগের মতো কদর নেই

আশির দশকে নাজিরের কাছে ঘোড়া ছিল ১৫টির মতো। তখন ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসাও ছিল রমরমা। এখনকার কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সামনে এরশাদ সরকার একটা আস্তাবলও বরাদ্দ দিয়েছিল নাজিরের ঘোড়ার জন্য। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই আস্তাবলের বরাদ্দও বাতিল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা আর যানজটের কারণে ঢাকায় এখন আর ঘোড়ার গাড়ি চালানোর কোনো জায়গা নেই জানিয়ে নাজির বলেন, 'সিটি করপোরেশন অনেক রুটে গাড়ি চালানো নিষেধ করে দিয়েছে। এখন একদিন পাঁচ হাজার ট্যাকা কামাইলে ছয় দিন বইয়া থাকতে অয়। অথচ আগে আমরা জিরাইবার ফুসরত পাইতাম না।' এখন ঘোড়ার পেছনে খরচও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে ছোলা, গম ও ভূষি-বুটের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে খরচ। আর নাজিরের ঘোড়ার সংখ্যাটা এখন পাঁচের কোটায় নেমেছে। গাড়ি আছে তিনটি। সেগুলো দেখাশোনা করে রমজান, শহীদুল্লাহ আর আরিফ। বিয়ে, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোড়া ভাড়া দেন। আগের মতো কদর না থাকলেও ঐতিহ্যের এই হাতছানি উপেক্ষা করতে পারেন না। নাজির বলেন, 'আগের মতো কদর নেই। কিন্তু তবু ঘোড়ার সঙ্গ ছাড়তে মন চায় না।'

ছোট্ট নীড়

পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে এক কাঠার ওপর নির্মিত একটা দোতলা বাড়ি আছে নাজিরের। টিনশেড এই বাড়ির ওপরের তলায় থাকেন স্বামী-স্ত্রী দুজনে। নিচ তলা ভাড়া দিয়েছেন। সে টাকায়ই চলে টোনাটুনির সংসার। এক ছেলে এক মেয়ের জনক নাজির। মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হলো। ছেলেটা পড়াশোনা সূত্রে এখন জার্মানিতে থাকে। নাজির জানালেন, 'ছেলেটা এখন জার্মানির নাগরিক। আমারে ফোন কইরা কেবল যাইতে কয়। কিন্তু এই বুড়া বয়সে দ্যাশ থুইয়া, ঘোড়া থুইয়া ক্যামনে যাই, বলেন?'

ইতিহাস থেকে

ঘোড়ার গাড়ি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন যানবাহন। ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় এই গাড়িটি টমটম নামে বেশি পরিচিত। ঘোড়ার গাড়ি চালকদের কোচোয়ান বা গাড়োয়ান বলে। ঘোড়াা গাড়ির যখন চল হয়, তখন ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন। ঢাকায়ও ঘোড়ার গাড়ি আসে সে সময়। ঢাকায় একসময় রাজা-বাদশাহ, আমির-ওমরাহ, নওয়াব-জমিদারদের আভিজাত্য প্রকাশ পেত সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি কিংবা টমটমের মাধ্যমে। এমনকি রণাঙ্গনের রসদ সরবরাহের অন্যতম মাধ্যম। ঢাকার নায়েব-এ-নাজিম ও ইংরেজ সিভিলিয়ানদের নিজস্ব টমটম ছিল। সর্বপ্রথম এই গাড়ির ব্যবহার ইংরেজরা শুরু করলেও স্থানীয় অভিজাত শ্রেণির মানুষও এর সুবিধা নেয়। একসময় তা চলে আসে সাধারণ মানুষের মধ্যে। যাত্রী টানার জন্য নগরীতে গড়ে ওঠে একটি গাড়োয়ান শ্রেণি। তবে এ গাড়োয়ান শ্রেণির উদ্ভব নিয়ে দালিলিক কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৯৩০ সালে রিকশা প্রচলনের আগ পর্যন্ত টিকে ছিল ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা।

ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন জেমস টেলরের বই টপোগ্রাফি অব ঢাকা সূত্রে জানা যায়, ১৭৯০ সালের দিকে ঢাকা শহরে একদল সৈনিক প্রথম ভাড়াটে ঘোড়ার গাড়ি প্রবর্তন করেন। ঢাকার কালেক্টর মি. ডগলাসও একই মত প্রকাশ করেছিলেন। ১৮৪৪ সালের দিকে ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল ঢাকা, কলকাতা, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদে নানা নামে নানা ধরনের ঘোড়ার গাড়ির চল ছিল। এ ছাড়া ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদের থিসিস ঢাকা ইতিহাস ও নগরজীবন ১৮৪০-১৯২১ শীর্ষক গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, উনিশ শতকের শুরুতে ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামলে আরমেনীয় সম্প্রদায়ের পোগজ, আরাতুন, জি এম সিরকো, মাইকেল, সার্কিস, স্টিফেনস প্রমুখ মূলধন খাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলেন। এদের মধ্যে জি এম সিরকোর নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। ঘোড়ার গাড়ি অল্পদিনের মধ্যেই এ গাড়ি ঢাকাবাসীর মন জয় করে নেয়। ধীরে ধীরে ঘোড়ার গাড়ি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের এক হিসাব মতে দেখা যায়, ১৮৬৭ সালে ঢাকার রাস্তায় মাত্র ৬০টি ঘোড়ার গাড়ি চলাফেরা করত। ১৮৭৪ সালে তা বেড়ে হয় ৩০০টি। আর ১৮৯০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। নাজিরাবাজার, সিদ্দিকবাজার, চকবাজার, বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ, মালাকার টোলার অন্তত ৫০ জন কোচোয়ান একটি সমিতি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ১৯৪০ সালের দিকে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সিদ্দিকবাজারের মতি সর্দার। এ সমিতি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য ছিল পুলিশি জুলুম থেকে নিজেদের রক্ষা করা। সময়ের ব্যবধানে ঢাকার রাজপথ বর্তমানে মোটরগাড়ি আর রিকশার দখলে। এর পরও ঘোড়ার গাড়ি রাস্তা থেকে একেবারে হারিয়ে যায়নি।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ