<p>শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে চট্টগ্রাম নগরীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন পার্ক, রেস্টুরেন্ট ও খেলার মাঠে সময় কাটাচ্ছে। এতে অনেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সম্পৃক্ত হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গেও। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মানদণ্ড নিরূপণে ক্লাসে উপস্থিত থাকার ওপর কোনোরূপ বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা বিপথগামী হচ্ছে।</p> <p>চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের করা জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। শিক্ষার্থীদের অপরাধ কমিয়ে আনার জন্য তারা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে তা অভিভাবককে জানাতে এসএমএস পদ্ধতি চালু করা, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ক্লাসে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করাসহ পাঁচ পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। চলতি বছরের শুরুতে চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ চালায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখা (সিটিএসবি)।</p> <p>সিটিএসবির কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক অস্থিরতা এবং কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও প্রসারের কারণ খুঁজতে তাদের ক্লাসরুমে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মানদণ্ড নিরূপণে ক্লাসে উপস্থিত থাকার ওপর কোনো রকম বাধ্যবাধকতা না থাকায় স্কুল-কলেজের  শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অভিভাবকের অগোচরে বিভিন্ন কথিত বড় ভাইয়ের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে হিরোইজম দেখানোর জন্য অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কথিত বড় ভাইদের প্রশ্রয়ে থেকে স্কুলে না গিয়ে পর্নো ও যৌন বিষয়ক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে।</p> <p>ক্লাস চলাকালে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বিনোদন স্পট, রেস্টুরেন্ট, ডার্ক রেস্টুরেন্ট মার্কেট ও সিনেমা হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গিয়ে ছাত্রছাত্রীর উল্লেখযোগ্য অংশ সাইবার জগতে বেশি সময় দিচ্ছে। হরর মুভি, অনলাইনভিত্তিক জুয়ার অ্যাপসে আসক্ত হওয়ায় তাদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  সিগারেট ও মাদকের খরচ জোগাতে চুরি, ছিনতাই, মাদক বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কিশোর শিক্ষার্থীরা।</p> <p>চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিশোর অপরাধ কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা জরিপ চালিয়েছি। কিশোররা কেন অপরাধে জড়াত তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যতটুকু সময় থাকার কথা তা থাকছে না। তারা স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিচ্ছে। এই সময়ে নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা।’</p> <p>চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের করা সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ক্লাসের  ন্যূনতম ৭০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না রাখা। শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তা অভিভাবককে জানানোর জন্য এসএমএস পদ্ধতি চালু করা। ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ক্লাসে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা নিয়ে কোনো আইন নেই। অলিখিতভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির জন্য কড়াকড়ি করে। ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির বিষয়ে আইন থাকা দরকার।</p>