<p>বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারে ঢালের মাটি ৩০ থেকে ৪০ ফুট গর্ত করে কেটে নেওয়ায় বাঁধসহ পাশের বাড়িঘর এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে। এভাবে মাটি কেটে বাঁধ সংস্কার করায় বর্ষা মৌসুমে বাঁধের মাটির সঙ্গে আশপাশের বাড়িঘর ধসে পড়ে জীবনহানির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।</p> <p><img alt="ঢালে গভীর গর্ত করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার" height="215" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/February/25-02-2023/kbr/kalerkantho-OA-7A.jpg" style="float:left" width="280" />বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার ৪৩/১ পোল্ডারের আব্দুল আজিজ তালুকদার ব্রিকফিল্ড থেকে আমড়াগাছিয়া হাইওয়ে পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং নাপিতবারি স্লুইস গেট থেকে চরখালী আবুল হাসেম মাস্টার বাড়ি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারসহ মোট সাড়ে তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় খুলনার ঠিকাদার আমিন অ্যান্ড কম্পানি। সরেজমিনে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বরগুনার ঠিকাদার মো. বাদশা মিয়া। গত নভেম্বর মাসে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সকাভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে মাটি কাটাতে গিয়ে বাঁধের পশ্চিম পাশের অনেক জায়গায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করে ঢালের মাটি তুলে নিয়েছেন। এতে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।</p> <p>অন্যদিকে ১৯৬৭-৬৮ সালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের পর বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভূমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষজন বাঁধের ঢালে এসে বসবাস শুরু করেন। এখন বাঁধের ঢালের মাটি গভীর করে কাটা ও বাঁধ সংস্কারের কারণে ওই হতদরিদ্র্র মানুষের বাড়িঘরও পড়েছে হুমকির মুখে। সরেজমিন উত্তর আমড়াগাছিয়া এবং চরখালী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঢালের মাটি এমনভাবে কাটায় যেকোনো সময় বাঁধের মাটি ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কাটার কারণে উত্তর ঘটখালী বাঁধের ঢালে বসবাস করা মাসুদ সিকদারের বাড়িটিতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। বাড়িটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এরই মধ্যে বড় বড় ফাটলের কারণে বাড়িতে অবস্থান করা মানুষজন এখন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।</p> <p>মাসুদ সিকদার বলেন, ‘মোগো কোনো জায়গা-জমি নাই। সরকারি ওই জমিতে বাপ-দাদার আমল অইতে থাইক্যা আইছি। এমন গভীর করে বাঁধের মাটি কাটছে হের লইগ্যা বাড়িতে বড় বড় ফাটল ধরেছে।’ একই গ্রামের প্রতিবেশী খালেক মাতুব্বরের বাড়ির পেছন থেকে ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটায় ওই বাড়িটিও পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে।</p> <p>ঘটখালী গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন সিকদার ও আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘যেভাবে ঢালের মাটি কেটে বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে, তাতে বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের মাটি ধসে পড়তে পারে।’ অভিযোগ অস্বীকার করে সাব ঠিকাদার মো. বাদশা মিয়া দাবি করেন, ‘বাঁধের ঢাল থেকে যেভাবে মাটি কাটা হয়েছে তাতে বাঁধের মাটি ধসে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’</p> <p>বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ‘বাঁধের পাশে সরকারি জমির মাটি কাটা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ধসের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বাঁধের ঢালের দুই ধারে ঘাস লাগিয়ে পানির হাত থেকে রক্ষার জন্য সুরক্ষা দেওয়া হবে। বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুদীপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘বন্যার হাত থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের রক্ষার জন্য বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে। বাঁধের মাটি ধসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’</p>