হরমোন বা প্রাণরস হচ্ছে আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রস বা রাসায়নিক পদার্থ। এটি শরীরের এক জায়গা থেকে নিঃসৃত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কাজ করে। আমাদের শরীরে অনেক ধরনের হরমোন আছে, এর মধ্যে একটি হলো প্রোলাক্টিন হরমোন, যা পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়।
প্রোলাক্টিন হরমোনের কাজ
* মেয়েদের স্তন গঠনে ভূমিকা রাখে
* স্তনে দুধ উৎপন্ন হতে সহায়তা করে
* স্নায়ুতন্ত্রের ওপরও এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে
* রক্তে প্রোলাক্টিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে একে বলা হয় হাইপারপ্রোলাক্টিনেমিয়া।
১ শতাংশ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়।
প্রোলাক্টিন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণ
* প্রোলাক্টিনোমা নামক পিটুইটারি টিউমার
* কিছু ওষুধ খাওয়ার জন্য
* কিছু রোগের জন্য যেমন—থাইরয়েডের সমস্যা, কিডনি রোগ, পিসিওএস, হার্পিস ভাইরাস ইনফেকশন থাকলে
* গর্ভাবস্থায় এবং বাচ্চা বুকের দুধ খেলে এই হরমোন বাড়তে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায়
* মাসিক অনিয়মিত হওয়া অথবা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
* গর্ভাবস্থা ছাড়াও স্তন দিয়ে দুধের মতো পদার্থ বের হওয়া
* মুখে অবাঞ্ছিত লোম ও ব্রণ হওয়া
* সহবাসের সময় ব্যথা
পুরুষের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায়
* ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা পুরুষাঙ্গ শক্ত কম হওয়া
* স্তন মেয়েদের মতো বড় হয়ে যাওয়া বা গাইনিকোম্যাসিয়া
* স্তনে ব্যথা
পুরুষ-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয়
* ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্ব
* হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস
* যৌন ইচ্ছা বা আগ্রহ কমে যাওয়া
পিটিউটারি টিউমার থাকলে—
* চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া
* মাথা ব্যথা
* পিটুইটারির অন্য হরমোন উৎপাদন কমে যাওয়া
রোগ নির্ণয়
ওপরের লক্ষণগুলো থাকলে আপনি একজন হরমোন বিশেষজ্ঞ বা এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নিন। সেরাম প্রোলাক্টিন নামক রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
কারো প্রোলাক্টিন হরমোন বেশি থাকলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যথাযথ কারণ নির্ণয় করে এটি সহজেই ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। অনেক সময় ওষুধও লাগে না, যে কারণে হচ্ছে সেটা শনাক্ত করলেই চলে। যেমন কোনো ওষুধের কারণে হলে সেটি বন্ধ করলেই এটি ঠিক হয়ে যায়।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মালিবাগ, ঢাকা।