<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর বারিধারায় একটি বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে স্কুলপড়ুয়া দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় বালাইনাশক কম্পানির এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে মো. টিটু মোল্লা নামের ওই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাঁকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, মৃত দুই ছেলের ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন তাদের মা শারমিন জাহান। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সোনামানিকদের এনে দাও। তাদের ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব।’ এ সময় মায়ের পাশে শোকাহত বাবা মোবারক হোসেন ও স্বজনরা নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা যা বলছেন : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইস্টটিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সুলতান আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বারিধারার ওই বাসায় ব্যবহার করা ট্যাবলেটের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা শুনে মনে হচ্ছে, সেটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট। এই ট্যাবলেট থেকে বের হওয়া গ্যাস মুখ, নাক, কান ও চোখের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। এটা অত্যন্ত বিষাক্ত বলে বাসায় ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই ধরনের ট্যাবলেট সাধারণত খাদ্যগুদামে পোকামাকড় নিধনে ব্যবহার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত এক টন খাদ্যের বিপরীতে ৫৭০টি ট্যাবলেট কাপড়ে বা টিস্যুতে মুড়িয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এখন যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা তাতে ট্যাবলেট ব্যবহারের পর অন্তত ১০ দিন পর্যন্ত মানুষ বা কোনো প্রাণী গুদামে প্রবেশ করা যাবে না। ব্যবহারের পর ট্যাবলেটগুলো ফেলে দেওয়ার সময় নাক, মুখ ও কান ঢেকে, চোখে গ্লাস পরে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামলা ও  তদন্ত : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পোকামাকড় নিধন প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মীদের বিরুদ্ধে গত সোমবার বিকেলে ভাটারা থানায় মামলা করেছেন শিশুদের বাবা মোবারক হোসেন। ভাটারা থানার ওসি এ বি এম আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অবহেলাজনিত কারণ দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। টিটু মোল্লা নামের প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি পোকামাকড় নিধনে ওই বাড়িতে কাজ করা দুজনের একজন।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট ব্যবহারের কারণে শিশুদের বিষক্রিয়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া ছোট ছেলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তবে বড় ছেলের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর আগে গত শুক্রবার পোকামাকড় নিধনে ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাসায় ডেকে আনেন শায়েন ও শাহিলের মা-বাবা। কীটনাশক ব্যবহারের পর কর্মীরা বলে যান যে ছয় ঘণ্টা যেন কেউ বাসায় না ঢোকেন। এ ছাড়া ছয় ঘণ্টা পর বাসায় ঢুকে পুরো বাসা পরিষ্কার করে সেখানে বসবাস করার কথাও বলে যান তাঁরা। পরিবারটি বাইরে ছয় ঘণ্টা সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অসুস্থ হয়ে পড়ে শাহিল। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে তার বড় ভাই শায়েন। রবিবার ভোরে দুই ভাইকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শাহিলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শায়েনও মারা যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই বাসায় তেলাপোকাসহ অন্যান্য পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়ায়ই পরিবারটি আক্রান্ত হয়। এর বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।’</span></span></span></span></p>