<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়বিলা বিলকে বলা হয় পদ্ম, শাপলা, শালুক, জলজ প্রাণীসহ দেশি প্রজাতির সুস্বাদু মাছের স্বর্গরাজ্য। দেশের অন্যতম বড় এই বদ্ধ জলাশয়ে প্রতিবছর শীতে আসে হাজার হাজার অতিথি পাখি। সারা বছরই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে দর্শনার্থীরা। কিন্তু প্রতিবছর, বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে বিলের সরকারি খাসজমি মাটি দিয়ে ভরাট করে দখলে নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ ছাড়া বিলের বড় অংশ লিজ দেওয়া, ক্ষতিকর জালের অতি ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি এক্সকাভেটর দিয়ে বিলের পারের টিলা কেটে বিলের দুই একরের বেশি জমি ভরাট করে দখলে নেওয়া হয়েছে। আর গত ২০ থেকে ২১ বছরে প্রভাবশালীরা অন্তত ১০০ একর বিল ভরাট করে দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় লোকজন। বিলের চারদিকে সরকারি ১৫ থেকে ২০ ফুট চওড়া রাস্তা ছিল। সেই রাস্তাও কেটে বিল ভরাট করেছে দখলকারীরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="টিলা কেটে বড়বিলা বিল ভরাট" height="236" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/06.June/07-06-2023/123456789/kalerkantho-2-2023-06-07-41.jpg" style="float:left" width="450" />উপজেলা মৎস্য অফিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া, পাহাড় অনন্তপুর, হাতিলেইট, বাওলাবাজার ও আনুহাদি—এই পাঁচটি গ্রামের মাঝখানে বড়বিলা বিলের অবস্থান। এর আয়তন শুকনো মৌসুমে ৩৬৮ একর, আর বর্ষা মৌসুমে হয় প্রায় ৭০০ একর। এর মধ্যে বিলে প্রায় ৩৬১ একর সরকারি খাসজমি রয়েছে। প্রতিবছর সরকারি খাসজমি বেদখল হওয়ায় বিলের আয়তন ছোট হয়ে যাচ্ছে। বড়বিলা জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। নানা প্রজাতির দেশি মাছ এ বিলের প্রধান সম্পদ। তবে বিল লিজ নেওয়া ব্যক্তিরা বিলে পানি প্রবেশের প্রধান দুটি খাল বড়খাল ও জোয়ার খালে বাঁশ ও জালের বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় এবং চায়না ও দোয়ারি জাল অতিমাত্রায় ব্যবহারসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বড়বিলার দেশি মাছসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিলে ৩৯ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে পাওয়া যায় ২৪ প্রজাতির মাছ। একসময় ভোঁদড় ও কাছিম পাওয়া যেত। এখন ভোঁদড় নেই; কাছিম মেলে খুব কম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা মৎস্য অফিসের এক প্রতিবেদনে বড়বিলার জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ক্ষতিকর কারেন্ট, চায়না ও দোয়ারি জাল অতিমাত্রায় ব্যবহার; চাষকৃত মাছের প্রজাতি মজুদ, যা দেশি প্রজাতির মাছের সঙ্গে পরিবেশ ও খাবার নিয়ে প্রতিযোগিতা করে; বিলে পানি প্রবেশের প্রধান উৎস বড়খাল ও জোয়ার খালে বাঁশ ও জাল দিয়ে বাঁধের মাধ্যমে পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি; জলজ আগাছা ধ্বংস করা, যা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজননে সহায়তা করে; লিজ পদ্ধতির প্রচলন ও অতিরিক্ত মাছ আহরণ। এসব কারণে বিলের সৌন্দর্য পদ্ম ও শাপলা ফুল হুমকির মুখে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুভ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বড়বিলা বিল ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ছয় বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। বড়খাল ও জোয়ার খালে বাঁশ ও নেট দিয়ে বানা দেওয়া হয়েছে, যাতে মাছ বের হয়ে যেতে না পারে। বিলপারে যাদের জমি রয়েছে তারা প্রতিবছরই বিলের কিছু জমি ভরাট করে দখলে নেয়। আমরা যখন দেখি বিল ভরাট করছে, তখন স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দিই। ভরাটের কারণে বিলের আয়তন কমে যাচ্ছে।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিপাকে জেলেরা : বিলপারে ও এর আশপাশে তিন শতাধিক জেলে পরিবার রয়েছে। তারা বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু জোট সরকারের সময় ২০০২ সালে বিলটি লিজ দেওয়া শুরু হয়। ২০২২ সালে শুভ মৎস্য সমবায় সমিতির ব্যানারে স্থানীয় ২০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছয় বছরের জন্য বিলের ৩৬২ একর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাও আছেন। লিজের ফলে এখন জেলেদের চাঁদা দিয়ে বিলের নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে মাছ ধরতে হয়। এটি এবং বিলের আয়তন ছোট হয়ে যাওয়ায় আগের মতো মাছ ধরে সংসার চলে না। এতে বিলপারের জেলেরা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। অবশ্য অর্ধশতাধিক জেলে পরিবার চাঁদা দিয়ে এখনো বিলে মাছ ধরে সংসার চালায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতিথি পাখি, পর্যটক কমার আশঙ্কা : বড়বিলায় শীতের শুরুতে বালিহাঁস, বাটুল, চখাচখি, শামুকখোলা, ছোট সারস, ডুবরি, কাদাখোঁচা, পাতিহাঁস, বুটি হাঁসসহ হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। পাখির কলরবে মুখর থাকে বড়বিলা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শীতের সময় প্রতিদিন এক-দেড় হাজার ও অন্য সময় এক-দেড় শ পর্যটক আসে পদ্ম-শাপলায় ভরা বিলের সৌন্দর্য দেখতে। নৌকায় চড়ে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করে তারা। বিল ভরাট ও জীববৈচিত্র্য অনেকটা ধ্বংস হওয়ার কারণে অতিথি পাখি ও পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়া আশঙ্কা করা হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়বিলায় প্রচুর কচুরিপানা। মাঝে মাঝে ফুটে আছে পদ্ম। বিলের দক্ষিণ পাশে বাঁশ ও জাল দিয়ে অন্তত ১০০ একর বাঁধ দেওয়া। জেলেরা ঝাকি জাল, কারেন্ট, চায়না ও দুয়ারি জাল এবং বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন। পর্যটকরা ছোট নৌকা দিয়ে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। অন্যদিকে বিলের গুদারাঘাটের উত্তর পাশে এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে বিলের পারের টিলা কেটে প্রায় এক একর (১০০ শতাংশ) বিলের জমি ভরাট করে দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। পাহাড় অনন্তপুর বিলের পূর্ব পাশে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে প্রায় ১০ কাঠা ও রাধারগোপ এলাকায় পাঁচ থেকে সাত কাঠা (সাড়ে ৬ শতাংশে এক কাঠা) জমি দখলে নিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সময় স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, বিলপারে যাঁদের রেকর্ডকৃত জমি রয়েছে, তাঁরাই বিলের জমি বেশি ভরাট করছেন। প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে রাতে বিলের সরকারি খাসজমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ভরাটের ‘মহোৎসব’ চলে। এ বছরও বিলের চারপাশে কয়েকজন ভেকু দিয়ে মাটি কেটে সরকারি বিল ভরাট করেছেন। গত ২০ থেকে ২১ বছরে অন্তত ১০০ একর জমি এভাবে ভরাট করে দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাহাড় অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক সেলিম হোসাইন বলেন, বড়বিলা বিলের পাশে যাঁদের রেকর্ডকৃত আবাদি জমি আছে, তাঁরা বড়বিলায় প্রায় ১০০ একর সরকারি খাসজমি দখল করে নিয়েছেন। দখলকৃত জমি উদ্ধার করে বৃহৎ বদ্ধ জলাশয়টি বাঁচানো দরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মুক্তা বলেন, বড়বিলার সরকারি খাস জায়গা ভরাট করে দখলে নিচ্ছেন কতিপয় স্থানীয় ব্যক্তি। নিষেধ করলেও তাঁরা মানছেন না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহা. হাবিবুর রহমান তালুকদার বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ। আইনের লঙ্ঘন করা হলে জেল-জরিমানা করার বিধান রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. নাহিদুল করিম বলেন, বড়বিলা ভরাটের অভিযোগ পেয়ে সার্ভেয়ারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। প্রতিবেদন দিলে ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসককে বলেছি, বড়বিলার জমি মাপজোখ করে চারদিকে সীমানা পিলার স্থাপন করা হবে।</span></span></span></span></p>