গলব্লাডার বা পিত্তথলির অবস্থান লিভারের ঠিক নিচে। পিত্তথলির মধ্যে থাকে পিত্তরস বা ‘বাইল’। বাইল তৈরি করে লিভার। খাওয়ার আগে গলব্লাডার পিত্তরসে পূর্ণ থাকে।
দাওয়াই
পিত্তথলির যত্নে এড়িয়ে চলুন তৈলাক্ত খাবার

করণীয়
* প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান করুন, এতে পুরো দেহে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল করবে, ফলে গলব্লাডারের পিত্তরসও কাজ করবে সঠিকভাবে।
* ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, ওজন, রক্তে ইনফেকশনের মাত্রা সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এই অসুখগুলো বেড়ে গেলে পিত্তথলি সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে না।
* যেকোনো ধরনের মাদকদ্রব্য, ধূমপান, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, তেল, মসলা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো বর্জন করুন।
* দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, যৌনক্ষমতাবর্ধক ওষুধ, যেকোনো হরমোনের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
প্রচুর পরিমাণে তিতাজাতীয় খাবার ও শাকসবজি খান। আঁশজাতীয় খাবার সব মানুষের জন্য উপকারী।
* তেল-চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করুন। এই খাবারগুলোর বাড়তি তৈলাক্ত অংশ পিত্তথলিতে জমা হয়। বছরের পর বছর এমনভাবে তৈলাক্ত বর্জ্য বা কোলেস্টেরল জমে গলব্লাডারে পাথর জমা হয়। পিত্তরস সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তরল পিত্ত শক্ত পাথরে পরিণত হয়। তখন খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে। পরিণামে তখন পেটে ব্যথা হয়। মারাত্মক পরিণতিতে বুকে ব্যথাও হয়।
* পিত্তথলিতে ইনফেকশন হয়ে পুঁজ জমতে পারে। ইনফেকশন হলে জ্বর জ্বর ভাব, পেটে ব্যথা হয়, বমিও হতে পারে। মাঝেমধ্যে যদি পেটের ডান পাশে ব্যথা হয় তবে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। বছরে অন্তত একবার পুরো দেহ চেকআপ করান।
* খাবারের তালিকায় মৌসুমি ফল অবশ্যই রাখুন। গলব্লাডার অপারেশনের পরে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
* মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কোনো খাবার বা ওষুধ খাবেন না। এই ধরনের খাবার বা ওষুধ কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
* অনেকের গর্ভাবস্থায় পিত্তথলিতে পাথর হয়। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার বংশগত বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও পাথর হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বা যাঁরা হঠাৎ করে খুব বেশি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন বা দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকেন, তাঁরাও আক্রান্ত হতে পারেন পিত্তথলির পাথরে।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. ফারহানা মোবিন
মেডিক্যাল অফিসার
স্ত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা এবং বন্ধ্যাত্ব বিভাগ
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল, ঢাকা।
সম্পর্কিত খবর

মা বললেন ‘ও বাবা, আমার রায়েশা কই’
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিকেল ৩টা। চারদিকে হৈচৈ। একটির পর একটি অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকছে আর বের হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ছাড়া কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

দুর্ঘটনার খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের এ খবর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের খবর জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি ‘ঢাকায় স্কুলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১৬’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি স্কুল ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ১৯, আহত হয়েছে শতাধিক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে থাকা চীনের তৈরি একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ মহড়া চলাকালে বিধ্বস্ত হয়েছে।
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার বলেছে, বাংলাদেশে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ঢাকার একটি কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এ ছাড়া মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজ উইক, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে এক্সপ্রেস, ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের এই বিমান বিধ্বস্তের খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর অভিমত
৭ শিশুর পরিচয় শনাক্তে লাগবে ডিএনএ পরীক্ষা
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, যে ১৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন, তারা সবাই শিশু। এর মধ্যে সাতজনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। সায়েদুর রহমান বলেন, তাঁদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছে। প্রাথমিক মূল্যায়নে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ সময় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, আজ তাদের রক্তের প্রয়োজন নেই। আগামীকাল (মঙ্গলবার) রক্তের প্রয়োজন হবে। তাই আজ আর কারো কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে না।
নাসির উদ্দীন বলেন, ইনফেকশন (সংক্রমণ) হলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে।

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত
২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়ে চিরবিদায় নিলেন শিক্ষিকা মেহরিন
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর বীরত্ব ও আত্মত্যাগ এখন দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করছে। প্রাণপণ চেষ্টা করে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর নিজের। তাঁর ভাই মানাফ এম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে টেলিফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
৪৬ বছর বয়সী মেহরিন চৌধুরী শতভাগ দগ্ধ অবস্থায় ওই ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি, তাঁর মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ক্লাসরুম থেকে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সরিয়ে ফেলেন মেহরিন। তাদের নিরাপদে বের করে দিতে গিয়ে নিজে আর সময়মতো বের হতে পারেননি। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনা সদস্য বলেন, ‘ম্যাডাম ভেতরে ঢুকে গিয়ে বাচ্চাগুলারে বের করে দিছেন, তারপর উনিই বের হতে পারেননি।’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষিকা মেহরিনের সাহসিকতায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।